অজু অর্থ- সৌন্দর্য, পরিষ্কার ও স্বচ্ছতা। শরিয়তের পরিভাষায় পবিত্রতা অর্জনের নিয়তে নির্দিষ্ট অঙ্গসমূহে পানি ব্যবহার করাকে অজু বলে। অজু নামাজ আদায়ের অপরিহার্য শর্ত; যদি নফল নামাজও হয়। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনগণ! যখন তোমরা নামাজে দাঁড়াতে চাও; তখন তোমাদের মুখমণ্ডল ধোও, আর উভয়হাত কনুই পর্যন্ত ধোও, মাথা মাসেহ কর এবং উভয় পা টাখনু পর্যন্ত ধোও।’ (সুরা মায়েদা: ৬)
আল্লাহর রাসুল (স.) বলেন, ‘তোমাদের কারো যদি অজু ভেঙে যায়, তাহলে পুনরায় অজু করার আগ পর্যন্ত আল্লাহ তাআলা তার নামাজ কবুল করেন না।’ (বুখারি: ৬৯৫৪; মুসলিম: ২২৫) অজু ভেঙে গেলে নামাজের আগে পুনরায় অজু করা বাধ্যতামূলক। মৌলিকভাবে ৭ কারণে অজু ভেঙে যায়। সেগুলো হলো— বারবার অজু ছুটে যায়
১. পায়খানা ও পেশাবের রাস্তা দিয়ে কিছু বের হওয়া। যেমন বায়ু, পেশাব-পায়খানা, পোকা ইত্যাদি। (হেদায়া: ১/৭)
২. শরীরের কোনো স্থান থেকে রক্ত, পুঁজ, বা পানি বের হয়ে গড়িয়ে পড়া। (হেদায়া: ১/১০)
৩. মুখ ভরে বমি করা। (সুনানে ইবনে মাজাহ: ১২২১) অনবরত অজু ভেঙে যায়
৪. থুথুর সঙ্গে রক্তের ভাগ সমান বা বেশি হওয়া (মুসান্নাফ ইবনে আবি শাইবা: ১৩৩০)
৫. চিৎ বা কাত হয়ে হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে যাওয়া। (মুসনাদে আহমদ: ২৩১৫; সুনানে আবু দাউদ: ২০২)
৬. পাগল, মাতাল ও বেহুঁশ হলে। (মুসান্নাফ আব্দুর রাজ্জাক: ৪৯৩; বুখারি: ৬৪৬; তিরমিজি: ৭২)
৭. নামাজে উচ্চৈঃস্বরে হাসি দিলে। (সুনানে দারা কুতনি: ৬১২) ঘন ঘন অজু ভেঙে গেলে
বিজ্ঞাপন
উল্লেখিত কারণগুলোর মধ্যে প্রথম কারণটিই আলোচনার বিষয়। বিশেষ করে পেছনের রাস্তা দিয়ে বায়ু বের হওয়া। এই অবস্থায় আওয়াজ বা গন্ধ টের পাওয়া জরুরি নয়, বরং যদি নিশ্চিত ধারণা হয় যে, পেছনের রাস্তা দিয়ে বায়ু বের হয়েছে তাহলেই অজু ভেঙ্গে যাবে। শুধুমাত্র ধারণাবশতঃ হলে অজু ভাঙ্গবে না। (ফতোয়ায়ে দারুল উলুম দেওবন্দ: ১/১৪৭) অতিরিক্ত বায়ু বের হলে অজু ভেঙে যাবে?
আরও পড়ুন: ফরজ গোসলের পর নামাজের জন্য অজু করতে হবে কি?
তবে, নিশ্চিতভাবেই যাদের অজু বারবার ভেঙে যায়, এমনকি এক অজুতে ফরজ নামাজ পড়াও সম্ভব হয় না, তাদের ছাড় দিয়েছে ইসলামি শরিয়ত। তারা অজু করার পর তা ভেঙে গেলেও ওয়াক্তের নামাজ সম্পন্ন করতে পারবে, নামাজের কোনো ক্ষতি হবে না। এ সম্পর্কে ফতোয়ার কিতাবে রয়েছে, যে ব্যক্তির অনবরত বায়ু বের হয় বা রক্ত ঝরে বা প্রস্রাব ঝরে, বা এ জাতীয় কোনো রোগে আক্রান্ত যার কারণে ফরজ নামাজটি আদায় করা সম্ভব হয় না— শরিয়তের পরিভাষায় ওই ব্যক্তি মাজুর। এ রকম মাজুর ব্যক্তির হুকুম হলো- নামাজের সময় হয়ে গেলে অজু করবে আর সেই অজু দিয়ে পরবর্তী নামাজের সময় শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত নামাজ পড়তে পারবে। নামাজ নষ্ট হবে না। কিন্তু পরের নামাজের সময় হয়ে গেলেই অজু ভেঙ্গে যাবে। আবার নতুন করে অজু করে নতুন ওয়াক্তের নামাজ পড়তে হবে। এভাবে মাজুর ব্যক্তি নামাজ আদায় করবে। (সূত্র: হাশিয়াতুত তাহতাবি আলা মারাকিল ফালাহ: ১৪৮-১৫১; ফতোয়ায়ে শামি: ১/৫০৪-৫০৫; মাজমাউল আনহুর: ১/৮৪; ফতোয়ায়ে মাহমুদিয়া: ১০/২৬১)
বিজ্ঞাপন
কিন্তু যারা মাজুর নয়, তথা সুস্থ, এমন ব্যক্তিরও অজু ছুটে যেতে পারে। তারা অজু ছুটে গেলে পুনরায় অজু করে নামাজ পড়বেন। আর যদি নামাজরত অবস্থায় অজু ছুটে যায়, তাহলে তৎক্ষণাৎ অজুর জন্য বের হয়ে যেতে হবে। ইমামের নামাজ শেষ হওয়ার অপেক্ষায় বসে থাকা যাবে না। আমর ইবনুল হারেস থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নামাজরত ব্যক্তির নাক দিয়ে রক্ত বের হলে কী করণীয়—এ সম্পর্কে ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) বলেন, সে অজুর জন্য বের হয়ে যাবে এবং অজু করে আসবে। (মুসান্নাফ ইবনে আবি শাইবা: ৫৯৫০)
সালমান ফারসি (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, তোমাদের মধ্যে কারো যদি নামাজে অজু ছুটে যায় তাহলে সে যেন বের হয়ে অজু করে আসে। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা: ৫৯৫৪)
নামাজে অজু ছুটলে দুই পদ্ধতিতে নামাজ পড়ার অবকাশ
১) নতুন অজুতে বাকি নামাজ পড়া। অর্থাৎ অজু করে এসে যেখান থেকে নামাজ রেখে গেছেন; সেখান থেকে বাকি অংশটুকু পড়ে নেবেন। অর্থাৎ ইমামের সঙ্গে বাকি নামাজে যোগদান করবেন। ইমামের সালাম ফেরানোর পর উঠে দাঁড়িয়ে বাকি নামাজ যথারীতি আদায় করবেন। অজু করে ফিরে আসতে আসতে যদি ইমামের নামাজ শেষ হয়ে যায়, তবে একাকি অবশিষ্ট নামাজ আদায় করবেন। পথিমধ্যে কারও সাথে কথা বললে কিংবা অন্যকোনো কাজে বিলম্ব করলে অবশ্যই নামাজ শুরু থেকে আদায় করতে হবে। অনবরত অজু ভেঙে যায়
২) নতুন অজুতে শুরু থেকে নামাজ পড়া। আপনি ইচ্ছে করলে শুরু থেকেই নামাজ আদায় করতে পারবেন। অর্থাৎ নতুন অজুতে ইমামের পেছনে নামাজে শরিক হবেন। ইমামের সালাম ফেরানোর পর বাকি নামাজ একাকি আদায় করে নেবেন। তবে, অজু ছুটে গেছে বলেই নামাজ ভেঙে গেছে এমনটি মনে করা সঠিক নয়। (সূত্র: সুনানে দারাকুতনি: ১৭০৮) অজু ভঙ্গের কারণ
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে অজু ও নামাজের নিয়ম-কানুন সহিহ সুন্নাহ অনুযায়ী আদায় করার তাওফিক দান করুন। আমিন। শুয়ে থাকলে কি ওযু ভেঙে যায়, নারীদের ওযু ভঙ্গের কারণ, লজ্জাস্থানে দেখলে কি অযু ভেঙে যায়, অজু ভঙ্গের কারণ, পাদ দিলে কি ওযু ভেঙে যায়