শনিবার, ২২ মার্চ, ২০২৫, ঢাকা

সব আসমানি কিতাব কি রমজান মাসে নাজিল হয়েছিল?

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৯ মার্চ ২০২৫, ০১:৩০ পিএম

শেয়ার করুন:

loading/img

আল্লাহ তাআলা যুগে যুগে নবী-রাসুলদের মাধ্যমে অনেক আসমানি কিতাব প্রেরণ করেছেন। সেগুলোর মধ্যে প্রসিদ্ধ কিতাব চারটি। তাওরাত, জাবুর, ইনজিল ও কোরআন। এই প্রধান কিতাবগুলোর প্রত্যেকটি পবিত্র রমজান মাসে নাজিল হয়েছিল। পবিত্র কোরআন একসঙ্গে পৃথিবীর আসমানে নাজিল হয়েছে কদরের রাতে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আমি তা কদরের রাতে অবতীর্ণ করেছি।’ (সুরা কদর: ১) অতঃপর তা দীর্ঘ ২৩ বছরব্যাপী রাসুল (স.)-এর ওপর অবতীর্ণ হয়েছে।’ (ইবনে কাসির ও তাফসিরে কুরতুবি) 

রমজানে অন্যান্য আসমানি কিতাব অবতীর্ণ হওয়া প্রসঙ্গে রাসুল (স.) বলেন, ‘ইবরাহিম (আ.)-এর ওপর সহিফাগুলো রমজানের প্রথম রাতে অবতীর্ণ হয়। রমজানের ষষ্ঠ দিনে তাওরাত অবতীর্ণ হয়। ১৩ রমজানে ইনজিল অবতীর্ণ হয়েছে। জাবুর রমজানের ১৮তম দিনে অবতীর্ণ হয়। কোরআন অবতীর্ণ হয় রমজানের ২৪তম দিনে।’ (মুসনাদে আহমদ: ১৬৯৮৪)


বিজ্ঞাপন


আরও পড়ুন: রমজান মাসের ঐতিহাসিক ঘটনাসমূহ

জাবুর আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে দাউদ (আ.)-এর ওপর অবতীর্ণ হয়েছে। তাওরাত নাজিল হয়েছে মুসা (আ.)-এর ওপর। ইনজিল হজরত ঈসা (আ.)-এর ওপর এবং কোরআন নাজিল হয়েছে আমাদের নবী হজরত মুহাম্মদ (স.)-এর ওপর। 

একজন মুমিন হিসেবে আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ সব কিতাবের ওপর ঈমান আনা আবশ্যক। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘তোমরা বলো! আমরা ঈমান এনেছি আল্লাহর প্রতি এবং যা আমাদের ওপর এবং ইবরাহিম, ইসমাঈল, ইসহাক, ইয়াকুব ও তাদের সন্তানদের ওপর অবতীর্ণ হয়েছে এবং যা ঈসা, মুসা ও অন্যান্য নবীর ওপর অবতীর্ণ হয়েছে, আমরা তাদের মধ্যে কোনো পার্থক্য করি না এবং আমরা তাঁরই কাছে আত্মসমর্পণকারী।’ (সুরা বাকারা: ১৩৬)

আরও পড়ুন: যেসব ভাষায় নাজিল হয়েছে চার আসমানি কিতাব


বিজ্ঞাপন


কোরআনের আগের আসমানি কিতাবগুলো সম্পর্কে মুমিনের আকিদা বিশ্বাস হবে- এগুলো আল্লাহর পক্ষ অবতীর্ণ এবং সত্য গ্রন্থ, তবে তার কার্যকারিতা কোরআনের মাধ্যমে স্থগিত হয়ে গেছে। আগের আসমানি কিতাবগুলোতে মুহাম্মদ (স.) ও পবিত্র কোরআন সম্পর্কে স্পষ্টভাবে সুসংবাদ রয়েছে। মুহাম্মদ (স.)-এর পরিচিতিমূলক গুণাবলীও তাতে বর্ণনা করা হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘যারা বার্তাবাহক উম্মি নবীর অনুসরণ করবে, যার কথা তারা তাদের কাছে থাকা তাওরাত ও ইনজিলে লিপিবদ্ধ পেয়েছে।’ (সুরা আরাফ: ১৫৭)

অন্যান্য আসমানি কিতাবগুলোতে মানুষ পরিবর্তন এনেছে। কিন্তু পবিত্র কোরআন হেফাজতের দায়িত্ব স্বয়ং আল্লাহ তাআলা গ্রহণ করেছেন। ফলে এতে কোনোরুপ বিকৃতির সুযোগ নেই। তাই কোনোকিছু পরিবর্ধন বা বিয়োজন হয়নি, কেয়ামত পর্যন্ত একটি হরকতেরও পরিবর্তন হবে না। আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘আমি  কোরআন অবতীর্ণ করেছি এবং আমি তা হেফাজত করব।’ (সুরা হাজর: ৯)

অন্যান্য আসমানি কিতাবে বর্ণিত বিষয়াদি সম্পর্কে কোনো মন্তব্য না করাই উত্তম। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (স.) ইরশাদ করেন, ‘আসমানি কিতাব প্রাপ্তদের তোমরা সত্যায়ন করবে না এবং মিথ্যাবাদীও বলবে না। তোমরা শুধু বলবে, আমরা ঈমান এনেছি আল্লাহর প্রতি, আমাদের ওপর যা অবতীর্ণ হয়েছে এবং তোমাদের ওপর যা অবতীর্ণ হয়েছে তার প্রতিও।’ (সহিহ বুখারি: ৭৩৬২) 

আরও পড়ুন: যে ৬ বিশ্বাসের কারণে আপনি জান্নাতে যাবেন

সব আসমানি কিতাবের একসঙ্গে যে মর্যাদা, তার চেয়েও বেশি মর্যাদাসম্পন্ন পবিত্র কোরআন। রাসুল (স.) ইরশাদ করেন, ‘তাওরাতের বদলে আমাকে সুরা বাকারা থেকে সুরা তাওবা তথা সাতটি বড় সুরা দেওয়া হয়েছে। জাবুরের বদলে সুরা ইউনুস থেকে সুরা কাসাস পর্যন্ত তথা শতাধিক আয়াতবিশিষ্ট সুরা দেওয়া হয়েছে। ইনজিলের বদলে আমাকে সুরা আনকাবুত থেকে সুরা হুজরাত তথা মাসানি সুরা দেওয়া হয়েছে। সুরা কফ থেকে শেষ পর্যন্ত মুফাসসাল বা ছোট সুরাগুলো আমাকে বেশি দেওয়া হয়েছে।’ (তাবরানি: ৮০০৩; মুসনাদে আহমদ: ১৭০৩)

কোরআন পুরো মানবজাতির জন্য অবতীর্ণ হয়েছে। ফলে অতীতের সব বিধি-বিধান রহিত হয়ে গেছে। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘আপনি বলুন, হে লোকেরা, আমি তোমাদের সবার কাছে আল্লাহর রাসুল হিসেবে প্রেরিত হয়েছি।’ (সুরা আরাফ: ১৫৮) আল্লাহ তাআলা আরো বলেন, ‘আমি আপনার ওপর সত্যসহ কিতাব অবতীর্ণ করেছি ইতিপূর্বে অবতীর্ণ কিতাবের সত্যায়নকারী ও তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে।’ (সুরা মায়েদা: ৪৮)

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর