রোববার, ১৯ মে, ২০২৪, ঢাকা

রমজান মাসের ঐতিহাসিক ঘটনাসমূহ

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৬ মার্চ ২০২২, ০৬:৫৩ পিএম

শেয়ার করুন:

রমজান মাসের ঐতিহাসিক ঘটনাসমূহ

পৃথিবীর ইতিহাসে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ও শিক্ষণীয় ঘটনার সাক্ষী পবিত্র মাস রমজান। এই মাসে নাজিল হয়েছে পবিত্র কোরআন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘রমজান মাস! যে মাসে কোরআন নাজিল হয়েছে মানবের দিশারিরূপে ও হেদায়েতের সুস্পষ্ট নিদর্শন’ (সুরা বাকারা: ১৮৫)। রমজানে এমন একটি রাত রয়েছে, যা হাজার রাতের চেয়েও কল্যাণময় ও শ্রেষ্ঠ।

‘শবেকদর সমন্ধে আপনি কি জানেন? শবেকদর হলো এক হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ।’ (সুরা কদর: ২-৩)

এক বর্ণনামতে, মেরাজের রাতও রমজানে সংঘটিত হয়েছে। যদিও বর্ণনাটি নিয়ে বিভিন্ন অভিমত রয়েছে। রমজানে ঘটে যাওয়া আরও কিছু ঐতিহাসিক ঘটনা নিচে বর্ণনা করা হলো।

প্রধান চার আসমানি কিতাব নাজিল
প্রধান আসমানি কিতাব রমজান মাসে নাজিল করা হয়। এ প্রসঙ্গে রাসুল (স.) বলেন, ‘ইবরাহিম (আ.)-এর ওপর সহিফাগুলো রমজানের প্রথম রাতে অবতীর্ণ হয়। রমজানের ষষ্ঠ দিনে তাওরাত অবতীর্ণ হয়। ১৩ রমজানে ইনজিল অবতীর্ণ হয়েছে। জাবুর রমজানের ১৮তম দিনে অবতীর্ণ হয়। কোরআন অবতীর্ণ হয় রমজানের ২৪তম দিনে। ’ (মুসনাদে আহমদ: ১৬৯৮৪)

ঐতিহাসিক বদর যুদ্ধ
দ্বিতীয় হিজরির ১৭ রমজান তথা ৬২৪ খ্রিস্টাব্দে বদর প্রান্তরে সংঘটিত হয়েছিল মুসলিম ও কাফেরদের মধ্যকার ঐতিহাসিক বদর যুদ্ধ। ওই যুদ্ধে মুসলমানদের সর্বসাকুল্যে সৈন্যসংখ্যা ছিল মাত্র ৩১৩ জন। গাছের ডালপালা ছাড়া হাতিয়ার বলতে তাদের কিছু ছিল না।  কোনো লৌহবর্ম বা শিরস্ত্রানও ছিল না। তবুও মুসলমানদের কাছে পরাজিত হয়েছিল কুফরি শক্তি। মূলত ওই যুদ্ধে তিন থেকে পাঁচ হাজার ফেরেশতা প্রেরণ করে আল্লাহ তাআলা মুসলমানদের সরাসরি সাহায্য করেছিলেন। আবু জাহেল, উতবা, শায়বাসহ মোট ৭০ জন কাফের এই যুদ্ধে নিহত হয়। আরো ৭০ জন কাফের মুসলমানদের হাতে বন্দি হয়। অন্যদিকে ১৪ জন মুসলিম মুজাহিদ বীরবিক্রমে লড়াই করে শাহাদাতের গৌরব অর্জন করেন।

মক্কা বিজয়
অষ্টম হিজরির ২০ বা ২১ রমজান শুক্রবার নবীজি (স.) ও সাহাবায়ে কেরাম মক্কা বিজয় করেন। তখন কাবাঘর মুশরিকদের ৩৬০টি মুর্তি দিয়ে ভরা ছিল। মুসলমানরা সেগুলো অপসারণ করে আল্লাহ তাআলার ঘরকে পবিত্র করেন। 


বিজ্ঞাপন


নাখলা নামক জায়গার মূর্তি অপসারণ
নবীজি (স.) অষ্টম হিজরির ২৫ রমজান হজরত খালেদ ইবনে ওয়ালিদ (রা.)-এর নেতৃত্বে একদল সৈন্যবাহিনী প্রেরণ করেন নাখলা নামক জায়গার একটি বৃহদাকার মূর্তি অপসারণের জন্য, কাফেররা এর পূজা করত, যার নাম ছিল উজ্জা। হজরত খালেদ ইবনে ওয়ালিদ (রা.) নিজ হাতে ওই মূর্তি অপসারণ করেন। এরপর তিনি বলেন, আর কখনো এখানে উজ্জার উপাসনা হবে না। (আলবিদায়াহ ওয়াননিহায়াহ : ৪/৩১৬)

তায়েফে লাত নামক মূর্তি অপসারণ
নবম হিজরির রমজান মাসে তায়েফের সাকিফ গোত্র স্বেচ্ছায় ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে এবং তারা নিজেরাই স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজেদের উপাস্য ‘লাত’ নামক মূর্তি অপসারণ করে। (আলবিদায়াহ ওয়াননিহায়াহ : ৫/৩১৬)

ঐতিহাসিক তাবুক যুদ্ধ
নবম হিজরির রজব মাসে তাবুক যুদ্ধ সংঘটিত হয়। কিন্তু তাবুক যুদ্ধের কিছু ঘটনা সংঘটিত হয় নবম হিজরির রমজান মাসে। (আলফিকহুল ইসলামী ওয়া আদিল্লাতুহু: ৩/১৬২৭)

ঐতিহাসিক কাদেসিয়া যুদ্ধ
এক বর্ণনা অনুযায়ী, কাদেসিয়া যুদ্ধ ১৫ হিজরি সনের রমজান মাসে সংঘটিত হয়। সাদ বিন আবি ওয়াক্কাছ (রা.)-এর নেতৃত্বে মুসলমান ও রস্তুম ফাররাখজাদের নেতৃত্বে পারসিকদের মধ্যে এ যুদ্ধ সংঘটিত হয়। তবে ইবনে কাছির (রহ.) তারিখ উল্লেখ ছাড়াই বলেছেন, এটি ১৪ হিজরি সনে হয়েছিল। (আলবিদায়াহ ওয়াননিহায়াহ: ৯/৬১৩)

চার দিন ও তিন রাত প্রচণ্ড যুদ্ধর পর কাদেসিয়া যুদ্ধের পরিসমাপ্তি ঘটে। মাত্র ৩৬ হাজার মুসলিম সৈন্য দুই লাখ সুসজ্জিত পারসিক বাহিনীকে পরাজিত করে। এ যুদ্ধের ফলে ওই অঞ্চল ইরাকের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়। যুদ্ধের পর চার হাজার পারসিক সৈন্য সরাসরি ইসলাম গ্রহণ করে। এ ছাড়া বিভিন্ন গোত্র ও ইরাকে বসবাসরত ধর্মযাজক দলে দলে সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাছ (রা.)-এর কাছে এসে ইসলাম গ্রহণের ঘোষণা দেয়।

স্পেন বিজয়
সিপাহসালার তারেক বিন জিয়াদের নেতৃত্বে মুসলিম বাহিনী ৯২ হিজরি সনের ২৮ রমজান সর্বপ্রথম রডারিকের সৈন্যকে পরাজিত করে স্পেন জয় করেন।

ক্রুসেডারদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ
সুলতান সালাহউদ্দিন আইউবি (রহ.) ক্রুসেডারদের বিরুদ্ধে সর্বশেষ যুদ্ধ শুরু করেন ১৩৯৩ সালের ১০ রমজান।

আইনে জালুতের যুদ্ধে বিজয়
৬৫৮ হিজরির ১৫ রমজান জুমাবার আইনে জালুত যুদ্ধে মুসলিম বাহিনী তাতারিদের চিরতরে পরাজিত করে তাদের বলয় থেকে মুসলিম দেশগুলো মুক্ত করে।

ইহুদিদের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিন রক্ষার যুদ্ধ
ফিলিস্তিনকে ইহুদিদের হাত থেকে পবিত্র করার জন্য সর্বশেষ যুদ্ধ হয় ১৩৯৩ হিজরির ১০ রমজান। ফিলিস্তিনি যোদ্ধারা অস্ত্র ও জনবলের দৈন্য সত্ত্বেও ইহুদিদের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। যদিও পরবর্তী সময় কিছু গাদ্দার ও দুনিয়ালোভী মুসলিম নেতার কারণে ইতিহাসের মোড় পাল্টে যায়। (আততারিখুস সিয়াসি লিদ্দাওলাতুল আরাবিয়্যা: ২/২০৪)

এ ছাড়াও অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা পবিত্র রমজান মাসে সংঘটিত হয়েছে। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে ঐতিহাসিক ঘটনাসমৃদ্ধ ও বরকতের মাস রমজানের পবিত্রতা রক্ষা করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর