সোমবার, ১৭ মার্চ, ২০২৫, ঢাকা

গিবত ও মিথ্যা না ছাড়লে রোজা হবে কি

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৩:২৮ পিএম

শেয়ার করুন:

গিবত ও মিথ্যা না ছাড়লে রোজা হবে কি

মিথ্যা বলা, গিবত করা ও গিবত শোনা সবই ইসলামি শরিয়তে নিষিদ্ধ। ইসলামে গিবত ভয়াবহ পাপগুলোর একটি আর মিথ্যাচারিতা সকল অপকর্মের মূল। রোজা রেখে মিথ্যাচার ও গিবত খুবই নিন্দনীয় অপরাধ। মিথ্যা ও গিবতের কারণে রোজা ভেঙে না ঠিক, তবে রোজা হয়ে যায় মূল্যহীন।

মুজাহিদ (রহ.) বলেন, দুটি অভ্যাস এমন রয়েছে, এ দুটি থেকে যে বেঁচে থাকবে, তার রোজা নিরাপদ থাকবে—গিবত ও মিথ্যা। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা: ৮৯৮০; ইমদাদুল ফাত্তাহ, পৃ. ৬৭৪; মাজমাউল আনহুর: ১/৩৬০)


বিজ্ঞাপন


রমজানে গিবত ও মিথ্যাচারের ভয়াবহতা সাধারণ যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি। রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন—‘রোজা হলো (জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচার) ঢাল, যে পর্যন্ত না তাকে বিদীর্ণ করা হয়। জিজ্ঞাসা করা হলো, ইয়া রাসুলুল্লাহ, কিভাবে রোজা বিদীর্ণ হয়ে যায়? নবী করিম (স.) বললেন, মিথ্যা বলার দ্বারা অথবা গিবত করার দ্বারা।’ (আলমুজামুল আওসাত, তাবারানি: ৭৮১০; নাসায়ি: ২২৩৫)

আরও পড়ুন: রমজানে যেসব কাজের সওয়াব বেশি

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি মিথ্যা কথা এবং সে অনুসারে কাজ করা আর মূর্খতা পরিহার করে না, আল্লাহর কাছে তার পানাহার বর্জনের কোনো প্রয়োজন নেই।’ (বুখারি: ৬০৫৭)

গিবত প্রসঙ্গে রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেন, ‘গিবত ব্যভিচারের চেয়েও জঘন্যতম গুনাহ। তিনি রাসুল (স.)-এর কাছে জানতে চাইলেন, এটা কিরূপে? তিনি বললেন, এক ব্যক্তি ব্যভিচার করার পর তাওবা করলে তার গুনাহ মাফ হয়ে যায়। কিন্তু যে গিবত করে, তার গুনাহ প্রতিপক্ষ মাফ না করা পর্যন্ত মাফ হয় না।’ (তিরমিজি: ২৪১২)


বিজ্ঞাপন


গিবত হলো কোনো ব্যক্তির অনুপস্থিতিতে তার এমন দোষ-ত্রুটি বর্ণনা করা, যা শুনলে সে অসন্তুষ্ট হয় এবং অন্তরে আঘাত পায়। অর্থাৎ কারো অগোচরে তার এমন দোষ বলা, যা বাস্তবেই তার মধ্যে আছে, তা-ই গিবত বা পরনিন্দা। আর যদি তার মধ্যে সেই দোষ না থাকে, তবে তা হবে অপবাদ (তুহমত)। যা পরনিন্দা থেকেও মারাত্মক গুনাহ। (মুসলিম: ২৫৮৯)

আরও পড়ুন: রোজাদারকে ইফতার করানোর ফজিলত

আর মিথ্যাচার এমন এক ঘৃণ্য বদস্বভাব যার কারণে ইহকাল ও পরকালের ধ্বংস নিশ্চিত হয়ে যায়। এজন্য আল্লাহ তাআলা মিথ্যাচার বর্জনের নির্দেশ দিয়ে বলেন—‘তোমরা মিথ্যা কথা থেকে দূরে থাকো।’ (সুরা আল-হজ: ৩০)

তিরমিজি শরিফের ১৯৭১ নম্বর হাদিস অনুযায়ী, কেউ প্রতিনিয়ত মিথ্যা বলতে থাকলে শেষ পর্যন্ত সে আল্লাহ তাআলার দরবারে চরম মিথ্যাবাদী হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়ে যায়। আল্লাহর রহমত অপরিসীম হলেও মিথ্যাবাদীদের তিনি হেদায়াত দেন না। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তাকে হিদায়াত দেন না, যে সীমা লঙ্ঘনকারী, মিথ্যাবাদী’। (সুরা গাফির : ২৮)

আরও পড়ুন: রমজানে দান-সদকায় অফুরন্ত সওয়াব

রমজান হলো তাকওয়া অর্জনের মাস। তাকওয়ার মূল কথা হলো গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা। রমজানের রোজা ফরজ হওয়ার মূল কারণই হলো তাকওয়া অর্জন। ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনরা! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেরূপ ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের ওপর, যেন তোমরা তাকওয়া (আল্লাহভীতি) অর্জন করতে পারো।’ (সুরা বাকারা: ১৮৩)

সুতরাং পবিত্র মাসে মিথ্যা, গিবত, কড়া কথা, ঝগড়া-বিবাদসহ যাবতীয় গুনাহ পরিত্যাগ করার বিকল্প নেই। রাসুলুল্লাহ (স.) আরও ইরশাদ করেছেন, ‘রোজা ঢালস্বরূপ, যতক্ষণ না তা ত্রুটিযুক্ত করা হয়।’ (সুনানে নাসায়ি: ২২৩৩) 

অর্থাৎ রোজা রেখে ত্রুটি বা গুনাহ করতে থাকলে রোজা ঢালস্বরূপ থাকে না। বরং ক্ষুধার্ত থেকে দিন পার করে দেওয়ার মতো হয়ে যাবে। হাদিসে এসেছে, ‘অনেক রোজাদার এমন আছে, যাদের রোজা পালনের সার হলো তৃষ্ণার্ত আর ক্ষুধার্ত থাকা।’ (সুনানে তিবরানি: ৫৬৩৬)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে রোজা রেখে মুনাফিকের আচরণ ও মৃত ভাইয়ের মাংস খাওয়া থেকে বিরত রাখুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর