সোমবার, ১৭ মার্চ, ২০২৫, ঢাকা

কোরআনে ‘লাইলাতুম মুবারাকা’ বলতে কি শবে বরাতকে বোঝানো হয়েছে?

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৫:৪৬ পিএম

শেয়ার করুন:

কোরআনে ‘লাইলাতুম মুবারাকা’ বলতে কি শবে বরাতকে বোঝানো হয়েছে?

আল্লাহ তাআলা মর্যাদাপূর্ণ কোনো এক রাতকে পবিত্র কোরআনের সুরা দুখানে ‘লাইলাতুম মুবারাকাহ’ বলে অভিহিত করেছেন। আয়াতটি হলো- إِنَّا أَنْزَلْنَاهُ فِي لَيْلَةٍ مُبَارَكَةٍ إِنَّا كُنَّا مُنْذِرِينَ فِيهَا يُفْرَقُ كُلُّ أَمْرٍ حَكِيمٍ ‘আমি তো তা অবতীর্ণ করেছি এক মুবারক রজনীতে এবং আমি তো সতর্ককারী। এ রজনীতে প্রত্যক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় স্থিরীকৃত হয়।’ (সুরা দুখান: ৩-৪)

উল্লেখিত আয়াতে লাইলাতুম মুবারাকাহ বা লাইলাতিন মুবারাকা নিয়ে অনেকের মধ্যে ভুল ধারণা রয়েছে যে, আল্লাহ তাআলা শব্দদ্বয়ের মাধ্যমে বোধহয় শবে বরাতকে বুঝিয়েছেন। আসলে এর উদ্দেশ্য শবে বরাত নয়; বরং লাইলাতুম মুবারাকাহ বলতে শবে কদরকেই বোঝানো হয়েছে। 


বিজ্ঞাপন


আরও পড়ুন: শবে বরাতে রোজা রাখা কি সুন্নত?

তাবেঈ ইকরিমাহ (রহ)-এর ভুল ব্যাখ্যা থেকেই মূলত মানুষের মধ্যে ভুল ধারণাটা শুরু হয়। ইকরিমাহ বলেছিলেন, এখানে ‘মুবারক রজনী’ বলতে ‘মধ্য শাবানের রাতকে’ বুঝানো হয়েছে এবং এ রাতে গোটা বছরের সকল বিষয়ে ফয়সালা করা হয়। কিন্তু মুফাসসিরগণ ইকরিমার এ মত গ্রহণ করেননি। ইমাম তাবারি বিভিন্ন সনদে ইকরিমার এ ব্যাখ্যা উদ্ধৃত করে প্রতিবাদ করেছেন। তিনি উল্লেখ করেছেন, ইকরিমার এ মত ভিত্তিহীন, বরং সঠিক মত হলো- এখানে ‘মুবারক রজনী’ বলতে ‘লাইলাতুল কদর’-কে বুঝানো হয়েছে, যে রাতে আল্লাহ কোরআন অবতীর্ণ করেছেন।

আরও পড়ুন: শবে বরাতে ইবাদত না করলে কি গুনাহ হবে?

সে রাতকে এক স্থানে লাইলাতুল কদর বা ‘তাকদিরের রাত’ বলে অভিহিত করেছেন। অন্য স্থানে ‘লাইলাতুম মুবারাকা’ বা ‘বরকতময় রজনী’ বলে অভিহিত করেছেন। রাতটি নিঃসন্দেহে রমজান মাসের মধ্যে; কারণ অন্যত্র আল্লাহ ঘোষণা করেছেন যে, তিনি রমজান মাসে কোরআন নাজিল করেছেন। এ থেকে প্রমাণিত হয় যে, মুবারক রজনী রমজান মাসে, শাবান মাসে নয়। (তাবারি, তাফসির ২৫/১০৭-১০৯)


বিজ্ঞাপন


পরবর্তী মুফাসসিরগণ ইমাম তাবারির সঙ্গে ঐকমত্য পোষণ করেছেন। তারা বলেছেন যে, ‘মুবারক রজনী’ বলতে এখানে ‘মহিমান্বিত রজনী’ বা ‘লাইলাতুল কদর’ বুঝানো হয়েছে। তাদের মতে, ‘লাইলাতুম মুবারাকা’ এবং ‘লাইলাতুল কদর’ একই রাতের দুটি উপাধি।

এ রাতে ভাগ্য অনুলিপি বা পরবর্তী বছরের জন্য হায়াত-মউত ও রিজিক ইত্যাদির অনুলিপি করা ইত্যাদি বর্ণনাগুলো হাদিস বিশারদদের মতে অত্যন্ত দুর্বল অথবা বানোয়াট। 

আলেমরা বলেন, শবে বরাত নিয়ে ভুল বিশ্বাস বা হালুয়া-রুটি বা হৈ-হুল্লুড় ইত্যাদি পেছনে রেখে এ রাতের ফজিলত লাভে সুন্নত মেনে ইবাদত ও তাওবা-ইস্তেগফার করা উচিত। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘পাঁচটি রাত এমন রয়েছে, যে রাতের দোয়া ফিরিয়ে দেওয়া হয় না।— ১. জুমার রাত। ২. রজব মাসের প্রথম রাত। ৩. শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাত (শবে বরাত)। ৪. ঈদুল ফিতরের রাত। ৫. ঈদুল আজহার রাত।’ (মুসান্নাফে আব্দুর রাজজাক: ৭৯২৭)

আরও পড়ুন: শবে বরাতে যেসব আমলকে বিদআত ভাববেন না

শবে বরাতে করণীয় সম্পর্কে  ইমাম ইবনে রজব (রহ) বলেন, ‘মুমিনের কর্তব্য এই যে, এ রাতে খালেস দিলে তওবা করে জিকির, দোয়া ও ইস্তেগফারের জন্য প্রস্ত্তত হয়ে যাবে। যত্নের সঙ্গে নফল নামাজ পড়বে। সওয়াব লাভের আশা নিয়ে ১৫ তারিখের রোজাও রাখবে। তবে অত্যন্ত জরুরি বিষয় হলো- ওইসব গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা, যেগুলো এ রাতের সাধারণ ক্ষমা ও দোয় কবুল হওয়া থেকে মানুষকে বঞ্চিত করে দেয়। যেমন শিরক, হত্যা, হিংসা-বিদ্বেষ। এগুলো সবগুলোই কবিরা গুনাহ। আর হিংসা-বিদ্বেষ তো এতই গর্হিত বিষয় যে, এটা অধিকাংশ সময়ই মানুষকে আল্লাহর রহমত ও মাগফিরাত থেকে দূরে সরিয়ে দেয়।

মুসলমান নিয়ে বিদ্বেষ পোষণ করা অত্যন্ত মন্দ প্রবণতা। কর্তব্য হলো- সর্বদা অন্তরকে পরিষ্কার রাখা এবং হিংসা-বিদ্বেষ থেকে পবিত্র থাকা। বিশেষত উম্মাহর পূর্বসূরী ব্যক্তিদের সম্পর্কে অন্তর পুরোপুরি পরিষ্কার থাকা অপরিহার্য, যাতে রহমত ও মাগফেরাতের সাধারণ সময়গুলোতে বঞ্চিত না হতে হয়।’ (লাতাইফুল মাআরিফ পৃ. ১৫৫-১৫৬)

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর