গুনাহ বা পাপের চূড়ান্ত শাস্তি আখেরাতের জন্য নির্ধারিত হলেও অনেকসময় দুনিয়াতেও আল্লাহ তাআলা শাস্তি দিয়ে থাকেন। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, নবীজি (স.) বলেছেন, ‘কোনো জাতির মধ্যে আত্মসাৎ বৃদ্ধি পেলে সে জাতির লোকদের অন্তরে ভয়ের সঞ্চার করা হয়। কোনো জাতির মধ্যে ব্যভিচার ছড়িয়ে পড়লে সেখানে মৃত্যুর হার বৃদ্ধি পায়। কোনো সম্প্রদায়ের লোকেরা পরিমাপ ও ওজনে কম দিলে তাদের রিজিক সংকুচিত করা হয়। কোনো জাতির লোকেরা অন্যায়ভাবে বিচার-ফয়সালা করলে তাদের মধ্যে রক্তপাত বিস্তৃতি লাভ করে। কোনো জাতি প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করলে আল্লাহ তাদের ওপর শত্রুদল চাপিয়ে দেন।’ (মুয়াত্তা মালেক: ১৩২৩)
হাদিস থেকে বুঝা যায়- চূড়ান্ত শাস্তির অংশ মানুষ পার্থিব জীবনেও কিছু শাস্তি ভোগ করতে হয়। আর শাস্তি ধরন নানা রকম হয়ে থাকে। কারও অসুস্থতার মাধ্যমে, কাউকে অসহায়ত্বের মাধ্যমে, কারো শত্রু বেড়ে যাওয়ার মাধ্যমে কারও আবার ঈমান হরণের মাধ্যমে ইত্যাদি।
বিজ্ঞাপন
গুনাহের প্রথম শাস্তি হলো মানসিক অস্থিরতা। এরপর নানা আপদে পতিত হতে হয় পাপীকে। তওবা করে আল্লাহর পথে ফিরে না আসলে বিপদ ভারী হতে থাকে। জীবনযাত্রা সংকীর্ণ ও দুঃখে ভরপুর করে দেওয়া হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর যে আমার জিকির থেকে বিমুখ হয়, তার জীবনযাত্রা সংকীর্ণ ও দুঃখে ভরপুর হয়ে ওঠে।’ (সুরা ত্বহা: ১২৪)
আরও পড়ুন: যে গুনাহের কথা প্রকাশ করলে ক্ষমা নেই
আল্লাহ তাআলা অন্য আয়াতে বলেছেন, ‘আল্লাহ তাআলা যাকে হেদায়েত দিতে চান, তার অন্তরকে তিনি ইসলামের জন্য প্রসারিত করে দেন। আল্লাহ যাকে পথভ্রষ্ট করতে চান, তার অন্তরকে তিনি সংকীর্ণ ও বক্র করে দেন, যেন সে আকাশে আরোহণ করছে, তেমনিভাবে যারা ঈমান আনেনি তাদের ওপর আল্লাহ আজাব অবতীর্ণ করেন।’ (সুরা আনআম: ১২৫)
গুনাহ হয়ে গেলে অবিলম্বে তাওবা করা কর্তব্য। এতে আল্লাহর ক্ষমা পাওয়া যায়। কিন্তু গুনাহ করতেই থাকলে তাদের তাওবা করার সুযোগ লাভ হয় না। ফলে পরকালের শাস্তি তো রয়েছেই। ইরশাদ হয়েছে, ‘..আর এমন লোকদের জন্য কোনো ক্ষমা নেই, যারা মন্দ কাজ করতেই থাকে, এমনকি যখন মাথার উপর মৃত্যু এসে উপস্থিত হয়, তখন বলতে থাকে- আমি এখন তওবা করছি। আর তওবা নেই তাদের জন্য, যারা কুফুরি (অবাধ্য) অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে। আমি তাদের জন্য যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি প্রস্তুত করে রেখেছি।’ (সুরা নিসা: ১৭-১৮)
বিজ্ঞাপন
মূলত আল্লাহ তাআলা মানুষকে একটিমাত্র দায়িত্ব পালনের জন্য সৃষ্টি করেছেন, সেটি হলো আল্লাহর ইবাদত। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আমি জ্বিন ও মানবজাতিকে সৃষ্টি করেছি একমাত্র আমার ইবাদতের জন্য।’ (সুরা আজ-জারিয়াত: ৫৬)
আল্লাহর ইবাদত থেকে গাফেল হলে বা দায়িত্ববিমুখ হলে গন্তব্যস্থল থেকেই বিচ্যুত হতে হয়। তাই তো দেখা যায়, উন্নত বিশ্বের মানুষের জন্য আনন্দ-প্রমোদ ও ভোগ-বিলাসের অত্যাধুনিক ব্যবস্থাপনা থাকলেও তাদের অন্তরে নেই প্রশান্তির ছোঁয়া। সবার মধ্যে বিরাজ করে বিষণ্ণতা ও অস্থিরতা। আত্মহত্যার প্রবণতাও ওসব দেশেই বেশি দেখা যায়। এসব মূলত আল্লাহর আজাব। কোরআনের ভাষায় এর কারণ হলো- ‘আর যে আমার জিকির থেকে বিমুখ হয়, তার জীবনযাত্রা সংকীর্ণ ও দুঃখে ভরপুর হয়ে ওঠে।’ (সুরা ত্বহা: ১২৪)
আরও পড়ুন: দারিদ্র্য নিয়ে দুশ্চিন্তা মুমিনের বৈশিষ্ট্য নয়
তাছাড়া আল্লাহর কাছ থেকে যে মুখ ফিরিয়ে নেবে তার অন্তরে আল্লাহ তাআলা সার্বক্ষণিক ভীতি ঢুকিয়ে দেবেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি কাফেরদের অন্তরে ভীতি ঢুকিয়ে দেব, তারা আল্লাহর সঙ্গে শিরক স্থাপন করেছে, অথচ এ ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা কোনো কিছুই অবতীর্ণ করেননি। তাদের ঠিকানা হবে জাহান্নাম এবং জালিমদের আশ্রয়স্থল কতই না নিকৃষ্ট।’ (সুরা আল ইমরান: ১৫১)
পক্ষান্তরে যারা আল্লাহ তাআলার ইবাদত করে, নেক আমল করে এবং তাঁকে অন্তর দিয়ে ভালোবাসে তারা সুখী ও সৌভাগ্যবান। তাদের ইহকাল পরকাল কল্যাণময়। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘মুমিন নারী ও পুরুষ কোনো ভালো কাজ করলে আমি তাকে সুন্দর জীবন দান করব এবং তাদের কৃতকর্মের চেয়ে উত্তম প্রতিদান দান করব।’ (সুরা নাহল: ৯৭)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে গুনাহমুক্ত জীবনযাপন করার তাওফিক দান করুন। গুনাহ হয়ে গেলে অবিলম্বে তওবা করে আল্লাহর পথে ফিরে আসার তাওফিক দান করুন। সর্বোপরি আল্লাহ আমাদের দুনিয়া ও আখেরাত সুন্দর ও সাফল্যমণ্ডিত করুন। আমিন।