সোমবার, ২০ মে, ২০২৪, ঢাকা

যে গুনাহের কথা প্রকাশ করলে ক্ষমা নেই

মো. মারুফুল আলম
প্রকাশিত: ২৬ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৩:৫০ পিএম

শেয়ার করুন:

যে গুনাহ প্রকাশ করলে ক্ষমা নেই

মানুষ জেনে-না জেনে প্রতিনিয়তই গুনাহ করে। আর আল্লাহ তাআলা বান্দাকে ক্ষমা করতে পছন্দ করেন। যারা আল্লাহর কাছে গুনাহ মাফের জন্য কান্নাকাটি করে প্রার্থনা করেন, আল্লাহ তাআলা তাদের ফিরিয়ে দেন না। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি কোনো মন্দ কাজ করে ফেলে বা নিজের প্রতি জুলুম করে বসে, তারপর আল্লাহর কাছে ক্ষমা চায়, সে অবশ্যই আল্লাহকে অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালুই পাবে।’ (সুরা নিসা: ১১০) 

কিন্তু যারা নিজেদের গুনাহ বা দোষ প্রকাশ করে তাদের আল্লাহ তাআলা ক্ষমা করেন না। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (স.)-কে বলতে শুনেছি, আমার সব উম্মত মাফ পাবে, পাপ-প্রকাশকারী ব্যতীত। আর একপ্রকার প্রকাশ এই যে, কোনো ব্যক্তি রাতে কোনো পাপকাজ করে, যা আল্লাহ গোপন রাখেন। কিন্তু সকাল হলে সে বলে বেড়ায়, ‘হে অমুক! আমি আজ রাতে এই এই কাজ করেছি।’ অথচ সে এমন অবস্থায় রাত্রি অতিবাহিত করেছিল যে আল্লাহ তার পাপ গোপন রেখেছিলেন। কিন্তু সে সকালে উঠে তার ওপর আল্লাহর আবৃত পর্দা খুলে ফেলে। (বুখারি: ৬০৬৯, মুসলিম: ২৯৯০)


বিজ্ঞাপন


আরও পড়ুন: মানুষের গোপনীয় বিষয় খোঁজার ভয়ঙ্কর পরিণাম

এ হাদিস থেকে জানা যায়, মহান আল্লাহ সাধারণত বান্দার দোষ-ত্রুটি গোপন রাখতেই পছন্দ করেন। কিন্তু বান্দা যখন নিজেই তা প্রকাশ করে দেয়, তখন তাকে মাফ করার কোনো সুযোগ থাকে না। তদ্রূপ অন্যের দোষ খোঁজার মাধ্যমেও বান্দা নিজের বিপদ ডেকে আনে। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘তোমরা মুসলমানদের দোষ-ত্রুটি, ভুলভ্রান্তি খুঁজে বের করো না। যে ব্যক্তি অন্যের দোষ খুঁজে বেড়ায় ও প্রকাশ করে দেয়, স্বয়ং আল্লাহ তার দোষ প্রকাশ করে দেন। আর আল্লাহ যার দোষ-ত্রুটি প্রকাশ করেন তাকে নিজের বাড়িতেই লাঞ্ছিত করেন।’ (আবু দাউদ: ৪৮৮০)

রাসুলুল্লাহ (স.) আরও বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো মুসলমানের দোষ গোপন রাখে আল্লাহ তাআলা কেয়ামতের দিন তার দোষ ঢেকে রাখবেন।’ (তিরমিজি: ২৯৪৫)

আরও পড়ুন: গিবতের গুনাহ থেকে মুক্তি পেতে এই ৫টি কাজ করুন


বিজ্ঞাপন


সুতরাং নিজ গুনাহ এবং মানুষের দোষ-ত্রুটি গোপন রাখা মুমিনের বৈশিষ্ট্য। এর অনেক ফজিলত রয়েছে। যারা নিজেদের গুনাহ বন্ধু-বান্ধবকে বলে বেড়ায় না তারা কেয়ামতের দিন অনেক লাভবান হবেন। হজরত সাফওয়ান ইবনে মুহরিজ (রা.) বর্ণনা করেছেন, এক ব্যক্তি ইবনু ওমর (রা)-কে জিজ্ঞাসা করলেন, আপনি নাজওয়া’র (কেয়ামতের দিন আল্লাহ ও তার মুমিন বান্দার মধ্যে গোপন আলোচনা) ব্যাপারে রাসুলুল্লাহ (স.)-কে কী বলতে শুনেছেন? তিনি (ইবনে ওমর) বললেন, নবীজি (স.) বলেছেন, ‘তোমাদের এক ব্যক্তি তার মহান আল্লাহর এত কাছাকাছি হবে, তিনি তার ওপর তাঁর নিজস্ব আবরণ টেনে দিয়ে দু’বার জিজ্ঞাসা করবেন—‘তুমি এই এই কাজ করেছিলে?’ সে (মুমিন ব্যক্তি) বলবে—‘হ্যাঁ।’ আবার তিনি জিজ্ঞাসা করবেন—‘তুমি এই এই কাজ করেছিলে?’ সে বলবে—‘হ্যাঁ।’ এভাবে তিনি (আল্লাহ) তার (বান্দার) স্বীকারোক্তি গ্রহণ করবেন। এরপর বলবেন, ‘আমি দুনিয়াতে তোমার এ গুনাহগুলো লুকিয়ে রেখেছিলাম। আজ আমি তোমার এসব গুনাহ ক্ষমা করে দিলাম।’ (সহিহ বুখারি: ৬০৭০)

আলোচনায় প্রতীয়মান হলো- নিজের বা অন্যের দোষ-ত্রুটি গোপন রাখলে মহান আল্লাহ বান্দার দোষ শুধু গোপনই রাখবেন না; ক্ষমাও করে দেবেন। বান্দার জন্য এর চেয়ে বড় দয়া আর কী হতে পারে! অতএব, মুমিন-মুসলমানের উচিত, নিজেদের একান্ত গোপন দোষ-ত্রুটি প্রকাশ না করা। একইসঙ্গে মানুষের ভুল-ত্রুটিরও সমালোচনা না করা। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সেই তাওফিক দান করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর