রোববার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

দারিদ্র্য নিয়ে দুশ্চিন্তা মুমিনের বৈশিষ্ট্য নয়

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬:৫৩ পিএম

শেয়ার করুন:

দারিদ্র্য নিয়ে দুশ্চিন্তা মুমিনের বৈশিষ্ট্য নয়

প্রাচুর্য দেওয়ার মালিক একমাত্র আল্লাহ তাআলা। মুসলমানদের এ বিশ্বাস রাখতে হবে। প্রাচুর্য চাইলে এবং দারিদ্র্য থেকে মুক্তি পেতে চাইলে মুমিনকে যে কাজগুলো করতে ইসলাম উদ্বুদ্ধ করে, তা হলো- প্রথমে যা আছে তাতেই সন্তুষ্টা থাকা এবং আল্লাহর শুকরিয়া করা। এরপর বেশি বেশি পরিশ্রম করা, আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করা, দান-সদকা করা, আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখা, দোয়া ও ইস্তেগফার করা।

দারিদ্রের দুশ্চিন্তা ও প্রাচুর্যের নেশায় অস্থির হওয়া যাবে না। এতে বরং দারিদ্র্যই বাড়বে। কোনোকিছুতে বরকত পাওয়া যাবে না। মুমিনের দারিদ্র্য নিয়ে চিন্তাগ্রস্ত হওয়া বাঞ্ছনীয় নয়। হাদিসে কুদসিতে আল্লাহ তাআলা বলেন, হে আদম সন্তান! তুমি আমার ইবাদতের জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করো, আমি তোমার অন্তর ঐশ্বর্যে পূর্ণ করে দেব এবং তোমার অভাব দূর করে দেব। তুমি তা না করলে আমি তোমার দুই হাত কর্মব্যস্ততায় পরিপূর্ণ করে দেব এবং তোমার অভাব-অনটন রহিত করব না। (তিরমিজি: ২৪৬৬)


বিজ্ঞাপন


তাই বর্তমানে যা আছে তা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকার অভ্যাস করতে হবে এবং আল্লাহর শুকরিয়া করতে হবে। মহান আল্লাহর ঘোষণা— ‘যদি তোমরা শুকরিয়া আদায় করো, তবে আমি অবশ্যই তোমাদের বাড়িয়ে দেবো...।’ (সুরা ইবরাহিম: ৭) রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ইসলামের দিকে হেদায়েতপ্রাপ্ত হয়েছে, যাকে প্রয়োজন মাফিক রিজিক প্রদান করা হয়েছে এবং যে তাতেই পরিতুষ্ট থাকে, সে-ই সফলকাম হয়েছে। (ইবনে মাজাহ: ৪১৩৮)

আরও পড়ুন: আল্লাহ ‘সফল’ ঘোষণা করেছেন যাদের

কোরআন-হাদিসের শিক্ষা হচ্ছে, যেকোনো দুঃখ-কষ্ট ও অভাব-অনটনে মনোবল অটুট রাখতে হবে। সবসময় হৃদয়ে প্রশস্ততা অনুভব করার অভ্যাস করতে হবে। কেননা ধনাঢ্যতা ও দারিদ্র্য মানুষের মনের ওপর নির্ভর করে। কারো হাজার কোটি টাকা থাকলেও মনে অশান্তি থাকলে সে নিতান্তই দরিদ্র। আর যার মনে উৎফুল্লতা আছে, আল্লাহর ওপর সন্তুষ্টি আছে, সে-ই প্রকৃত অর্থে সম্পদশালী। তাই রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, প্রকৃত ধনী আত্মার ধনী। (বুখারি: ৬৪৪৬)

মনে রাখতে হবে, সব সৃষ্টির জীবিকার দায়িত্ব মহান আল্লাহ নিজের করে নিয়েছেন। তাই তাওয়াক্কুল হবে তাঁরই ওপর এবং তাঁরই কাছে দোয়া ও ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর আমি তো বলেছি, তোমরা তোমাদের প্রভুর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো। নিশ্চয় তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল। তিনি তোমাদের জন্য প্রচুর বৃষ্টিপাত করবেন এবং তিনি তোমাদেরকে ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি দ্বারা সমৃদ্ধ করবেন।’ (সুরা নুহ: ১০-১২) রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি নিজের জন্য ‘ইস্তেগফার’ (ক্ষমা প্রার্থনা) আবশ্যক করে নেবে, আল্লাহ তাকে সব দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি দেবেন, সব সংকীর্ণতা থেকে উদ্ধার করবেন এবং তাকে এমনভাবে জীবিকার ব্যবস্থা করবেন যা তার চিন্তার বাইরে।’ (সুনানে নাসায়ি: ৩৮১৯)


বিজ্ঞাপন


বিলাসিতা, উচ্চাকাঙ্ক্ষা ও অতিভোগের চিন্তা, দারিদ্র্যের দুঃশ্চিন্তা মুমিনের অন্তর থেকে আল্লাহভীতি দূর করে দেয়। মানুষকে চরম হতাশাগ্রস্ত করে তোলে। রাসুল (স.) বলেছেন, আল্লাহর কসম! আমি তোমাদের নিয়ে দারিদ্র্যের ভয় করি না। কিন্তু এ আশঙ্কা করি যে, তোমাদের ওপর দুনিয়া এমন প্রসারিত হয়ে পড়বে, যেমন তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর প্রসারিত হয়েছিল। আর তোমরাও দুনিয়ার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়বে, যেমন তারা আকৃষ্ট হয়েছিল। আর তা তোমাদের বিনাশ করবে, যেমন তাদের বিনাশ করেছে। (সহিহ বুখারি: ৩১৫৮)

আরও পড়ুন: ১৪ পাপের শাস্তি ‍দুনিয়ায় দেওয়া হয়

অতএব, মুমিনের উচিত দুনিয়ার ধন-সম্পদকে বেশি প্রাধান্য না দিয়ে পরকালীন সমৃদ্ধিকে প্রাধান্য দেওয়া। তবে, আল্লাহর কাছে দুনিয়ার প্রয়োজন পূরণের দোয়া করতে হবে। কেননা প্রয়োজন অপূরণ থাকলে ঈমানের বিশুদ্ধ চর্চায় আঘাত লাগে এবং ঋণ অবস্থায় মৃত্যু হতে পারে। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বর্ণিত হাদিস থেকে জানা যায়, প্রিয়নবী (স.) এরকম একটি দোয়া পড়তেন, যেখানে সামর্থ্য বা সচ্ছলতা চাওয়া হয়েছে। 

দোয়াটি হলো—اَللَّهُمَّ اِنِّى أَسْألُكَ الْهُدَى وَالتُّقَى وَالْعَفَافَ وَالْغِنَى ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকাল হুদা; ওয়াত তুক্বা; ওয়াল আফাফা; ওয়াল গেনা’ অর্থ: হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে হেদায়েত কামনা করি এবং আপনার ভয় তথা তাকওয়া কামনা করি এবং আপনার কাছে সতীত্ব তথা নৈতিক পবিত্রতা কামনা করি এবং সম্পদ তথা সামর্থ্য বা সচ্ছলতা কামনা করি। (মুসলিম: ২৭২১; তিরমিজি: ৩৪৮৯; ইবনে মাজাহ: ৩৮৩২; মুসনাদে আহমদ: ৩৬৮৪, ৩৮৯৪)
তাই আমরাও উল্লেখিত দোয়াটির ওপর আমল করতে পারি। 

দান-সদকা করলেও সম্পদ বাড়ে বলে হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (স.) বলেছেন, মহান আল্লাহ বলেন, ‘তুমি ব্যয় করো, হে আদম সন্তান! আমিও তোমার প্রতি ব্যয় করব।’ (বুখারি: ৫৩৫২)

আত্মীয়দের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখলেও রিজিকে বরকত আসে। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, আমি প্রিয়নবীকে (স.) বলতে শুনেছি— ‘যে ব্যক্তি তার জীবিকা প্রশস্ত করতে চায় এবং তার আয়ু বাড়াতে চায়, সে যেন আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করে।’ (বুখারি: ৫৯৮৫)

কোরআন-হাদিসের উল্লেখিত দলিলাদি থেকে জানা যাচ্ছে, ঐশ্বর্যশালী হওয়ার প্রধান আমলগুলো হলো—যা আছে তাতেই সন্তুষ্টা থাকা ও আল্লাহর শুকরিয়া করা, পরিশ্রম করা (তবে দুনিয়ার প্রতি লালায়িত হওয়া যাবে না), বেশি বেশি ইস্তেগফার করা, আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করা, দান-সদকা করা, আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখা ও দোয়া করা।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে দুনিয়ার মরীচিকার মোহ ত্যাগ করে পরকালকে প্রাধান্য দেওয়ার তাওফিক দান করুন। আল্লাহর শুকরিয়া ও ইস্তেগফার করার তাওফিক দান করুন। আল্লাহ তাআলা আমাদের দুনিয়া ও আখেরাত উভয়জাহানে কল্যাণ দান করুন, সমৃদ্ধি দান করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর