বৃহস্পতিবার, ২০ মার্চ, ২০২৫, ঢাকা

জরুরি দোয়াগুলো জেনে নিন

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৩:৫৯ পিএম

শেয়ার করুন:

loading/img

দোয়া একটি স্বতন্ত্র ইবাদত। ‘মহান আল্লাহর কাছে দোয়ার চেয়ে অধিক সম্মানিত কোনো কিছু নেই।’ (ইবনু মাজাহ: ৩৮২৯). রাসুলুল্লাহ (স.) প্রিয় উম্মতকে অসংখ্যা দোয়া শিখিয়েছেন। তন্মধ্যে কিছু দোয়ার গুরুত্ব অনেক বেশি। এখানে এমন কিছু দোয়া তুলে ধরা হলো, যা মুমিনের সঙ্গী হওয়া উচিত।

১. رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الْآخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ উচ্চারণ: ‘রব্বানা আতিনা ফিদ্ দুনইয়া হাসানাহ, ওয়াফিল আখিরাতি হাসানাহ, ওয়াকিনা আজাবান্নার।’ অর্থ: হে আমার প্রভু! আমাদের দুনিয়াতে সুখ-কল্যাণ দান করুন, আখেরাতেও সুখ-সমৃদ্ধি দান করুন এবং জাহান্নাম থেকে আমাদের রক্ষা করুন। (সুরা বাকারা: ২০১) 


বিজ্ঞাপন


ফজিলত: উক্ত আয়াতকে সর্বশ্রেষ্ঠ দোয়া বলা হয়। হাদিসে এসেছে, নবী কারিম (স.) দোয়াটি সবচেয়ে বেশি পাঠ করতেন। (সহিহ মুসলিম: ৭০১৬)

২.  رَبَّنَا ظَلَمۡنَاۤ اَنۡفُسَنَا وَ اِنۡ لَّمۡ تَغۡفِرۡ لَنَا وَ تَرۡحَمۡنَا لَنَکُوۡنَنَّ مِنَ الۡخٰسِرِیۡنَ উচ্চারণ: ‘রব্বানা জলামনা আনফুসানা ওয়াইল্লাম তাগফিরলানা ওয়াতারাহামনা লানাকুনান্না মিনাল খ-সিরিন।’ অর্থ: ‘হে আমাদের রব, আমরা নিজদের উপর জুলুম করেছি। আর যদি আপনি আমাদেরকে ক্ষমা না করেন এবং আমাদেরকে দয়া না করেন তবে অবশ্যই আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হব।’ (সুরা আরাফ: ২৩)

ফজিলত: হজরত আদম (আ.) আল্লাহর শেখানো এই দোয়ার মাধ্যমে আল্লাহর ক্ষমা ও অনুকম্পা লাভ করেছেন। (সুরা বাকারা: ৩৭) 

৩. দোয়া ইউনুস তথা لَا إِلَـٰهَ إِلَّا أَنتَ سُبْحَانَكَ إِنِّي كُنتُ مِنَ الظَّالِمِينَ ‘লা ইলাহা ইল্লা আংতা, সুবহানাকা ইন্নি কুংতু মিনাজ জ্বলিমিন।’ অর্থ: ‘তুমি ছাড়া সত্য কোনো উপাস্য নেই; তুমি পুতঃপবিত্র, নিশ্চয় আমি জালিমদের দলভুক্ত।’ (সুরা আম্বিয়া: ৮৮)
ফজিলত: উক্ত দোয়ার ফজিলত বর্ণনায় নবীজি (স.) বলেছেন, ‘মাছের পেটে অবস্থানকালে ইউনুস (আ.) দোয়াটি পড়তেন। কোনো মুসলিম ব্যক্তি তা নিয়মিত পাঠ করলে আল্লাহ তার দোয়া কবুল করবেন।’ (তিরমিজি: ৩৫০৫) 


বিজ্ঞাপন


৪. أسْتَغْفِرُ اللَّهَ الَّذي لا إلهَ إِلاَّ هُوَ الحَيَّ القَيُّومَ وأتُوبُ إلَيْهِ উচ্চারণ: ‘আসতাগফিরুল্লাহাল্লাজি লা ইলাহা ইল্লা হুয়াল হাইয়্যুল কাইয়ুম ওয়া আতুবু ইলাইহি।, অর্থ: ‘আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাচ্ছি। তিনি ছাড়া আর কোনো উপাস্য নেই। তিনি চিরঞ্জীব। তিনি নিখিল সৃষ্টির পরিচালক। আমি তার কাছেই ফিরে যাব।’

ফজিলত: বিশিষ্ট সাহাবি হজরত জায়েদ (রা.) বর্ণনা করেন, নবী কারিম (স.) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি উক্ত দোয়াটি পাঠ করবে, তার (জীবনের) সব গুনাহ মাফ হয়ে যাবে। (আবু দাউদ: ১৫১৯, তিরমিজি: ৩৫৭৭)

আরও পড়ুন: প্রতিদিনের প্রয়োজনীয় দোয়াগুলো জেনে নিন

৫. আয়াতুল কুরসি তথা اللَّهُ لَا إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّومُ ۚ لَا تَأْخُذُهُ سِنَةٌ وَلَا نَوْمٌ ۚ لَّهُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الْأَرْضِ ۗ مَن ذَا الَّذِي يَشْفَعُ عِندَهُ إِلَّا بِإِذْنِهِ ۚ يَعْلَمُ مَا بَيْنَ أَيْدِيهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْ ۖ وَلَا يُحِيطُونَ بِشَيْءٍ مِّنْ عِلْمِهِ إِلَّا بِمَا شَاءَ ۚ وَسِعَ كُرْسِيُّهُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ ۖ وَلَا يَئُودُهُ حِفْظُهُمَا ۚ وَهُوَ الْعَلِيُّ الْعَظِيمُ 

ফজিলত: আবু উমামা (রা.) করেন, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পাঠ করবে, তার জান্নাতে প্রবেশের পথে মৃত্যু ছাড়া আর কোনও অন্তরায় থাকবে না।’ (শুআবুল ঈমান: ২৩৯৫; নাসায়ি: ৯৪৪৮, তাবারানি: ৭৮৩২) পার্থিব নিরাপত্তায়ও এই আয়াতে কারিমার বিশেষত্ব রয়েছে। রাসুল (স.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি সকালে আয়াতুল কুরসি তেলাওয়াত করবে সে এর মাধ্যমে সন্ধ্যা পর্যন্ত (আল্লাহর) হেফাজতে থাকবে। আর যে ব্যক্তি সন্ধ্যায় তা তেলাওয়াত করবে সে এর মাধ্যমে সকাল পর্যন্ত (আল্লাহর) হেফাজতে থাকবে। (তিরমিজি: ২৮৭৯)। কেউ রাতে নিদ্রায় যাওয়ার সময় পড়লে শয়তান তার নিকটবর্তী হবে না। (বুখারি: ২৩১১)

৬. সাইয়্যিদুল ইস্তেগফার তথা اَللَّهُمَّ أَنْتَ رَبِّىْ لآ إِلهَ إلاَّ أَنْتَ خَلَقْتَنِىْ وَأَنَا عَبْدُكَ وَأَنَا عَلى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ، أَعُوْذُبِكَ مِنْ شَرِّمَا صَنَعْتُ، أبُوْءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَىَّ وَأَبُوْءُ بِذَنْبِىْ فَاغْفِرْلِىْ، فَإِنَّهُ لاَيَغْفِرُ الذُّنُوْبَ إِلاَّ أَنْتَ উচ্চারণ: ‘আল্লা-হুম্মা আনতা রব্বি লা-ইলাহা ইল্লা আনতা খালাক্কতানি ওয়া আনা আ'বদুকা ওয়া আনা আ'লা আহ্দিকা ওয়া ও’য়াদিকা মাসতাত’তু আ'উযুবিকা মিন শার্রি মা ছা’নাতু আবূউলাকা বিনি'মাতিকা আ'লাইয়্যা ওয়া আবূউলাকা বিযানবী ফাগফিরলি ফাইন্নাহু লা-ইয়াগফিরুয্যুনূবা ইল্লা আনতা।’ অনুবাদ: হে আল্লাহ! তুমিই আমার প্রতিপালক। তুমি ছাড়া কোন ইলাহ নেই। তুমিই আমাকে সৃষ্টি করেছ। আমি তোমারই গোলাম। আমি যথাসাধ্য তোমার সঙ্গে প্রতিজ্ঞা ও অঙ্গীকারের ওপর আছি। আমি আমার সব কৃতকর্মের কুফল থেকে তোমার কাছে পানাহ চাচ্ছি। তুমি আমার প্রতি তোমার যে নিয়ামত দিয়েছ তা স্বীকার করছি। আর আমার কৃত গুনাহের কথাও স্বীকার করছি। তুমি আমাকে মাফ করে দাও। কারণ তুমি ছাড়া কেউ গুনাহ ক্ষমা করতে পারবে না।’

ফজিলত: সাইয়্যিদুল ইস্তেগফার সম্পর্কে হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি সকালে দৃঢ় বিশ্বাসের সঙ্গে এ ইস্তেগফার পড়বে আর সন্ধ্যা হওয়ার আগেই সে মারা যাবে, সে জান্নাতি হবে। আর যে ব্যক্তি রাতে পড়ে সকালের আগে মারা যাবে, সে জান্নাতি হবে।’ (সহিহ বুখারি: ৬৩০৬)

আরও পড়ুন: সাইয়্যিদুল ইস্তেগফারের মর্মকথা

৭. يَا مُقَلِّبَ الْقُلُوبِ ثَبِّتْ قَلْبِي عَلَى دِينِكَ উচ্চারণ: ‘ইয়া মুক্বাল্লিবাল ক্বুলুব; সাব্বিত ক্বলবি আ’লা দ্বীনিক।’ অর্থ: ‘হে অন্তর পরিবর্তনকারী! আমার অন্তরকে তোমার দ্বীনের ওপর দৃঢ় ও মজবুত রাখো।’ 
ফজিলত উম্মে সালামা (রা.) কে একবার জিজ্ঞাসা করা হলো- নবীজি (স.) কোন দোয়াটি সবচেয়ে বেশি পড়েন। তখন তিনি এ দোয়াটির কথা উল্লেখ করেন। (তিরমিজি: ৩৫২২)

৮. اَللَّهُمَّ اِنِّى أَسْألُكَ الْهُدَى وَالتُّقَى وَالْعَفَافَ وَالْغِنَى ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকাল হুদা; ওয়াত তুক্বা; ওয়াল আফাফা; ওয়াল গেনা।’ অর্থ: ‘হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে হেদায়াত কামনা করি এবং আপনার ভয় তথা তাকওয়া কামনা করি এবং আপনার কাছে সতীত্ব তথা নৈতিক পবিত্রতা কামনা করি এবং সম্পদ তথা সামর্থ্য বা সচ্ছলতা কামনা করি।’

ফজিলত: হেদায়াত লাভের জন্য এবং তাকওয়া, সচ্চরিত্র ও সচ্ছলতার জন্য এটি উৎকৃষ্ট দোয়া। আবদুল্লাহ (রা.) এর সূত্রে নবী (স.) থেকে বর্ণিত, তিনি উক্ত দোয়াটি করতেন। (মুসলিম: ২৭২১; তিরমিজি: ৩৪৮৯; ইবনে মাজাহ: ৩৮৩২; মুসনাদে আহমদ: ৩৬৮৪)

৯. ঋণ ও সবরকম পেরেশানি আর অপারগতা থেকে মুক্তির দোয়া- اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْهَمِّ وَالْحَزَنِ، وَالْعَجْزِ وَالْكَسَلِ، وَالْبُخْلِ وَالْجُبْنِ، وَضَلَعِ الدَّيْنِ وَغَلَبَةِ الرِّجَالِ ‘আল্লাহুম্মা ইন্নী আ‘উযু বিকা মিনাল হাম্মি ওয়াল হাযানি, ওয়া আ‘ঊযু বিকা মিনাল-‘আজযি ওয়াল-কাসালি, ওয়া আ‘ঊযু বিকা মিনাল-বুখলি ওয়াল-জুবনি, ওয়া আ‘ঊযু বিকা মিন দ্বালা‘য়িদ্দাইনি ওয়া গালাবাতির রিজা-ল। অর্থ: ‘হে আল্লাহ! নিশ্চয় আমি আপনার আশ্রয় নিচ্ছি দুশ্চিন্তা ও দুঃখ থেকে, অপারগতা ও অলসতা থেকে, কৃপণতা ও ভীরুতা থেকে, ঋণের ভার ও মানুষদের দমন-পীড়ন থেকে।’ (বুখারি: ২৮৯৩)

আরও পড়ুন: হাদিসে বর্ণিত ঋণমুক্তির ৩ দোয়া

১০. মা-বাবার জন্য দোয়া-  رَبَّنَا ٱغۡفِرۡ لِي وَلِوَٰلِدَيَّ وَلِلۡمُؤۡمِنِينَ يَوۡمَ يَقُومُ ٱلۡحِسَابُ ‘রাব্বানাগ ফিরলি ওয়ালি ওয়ালিদাইয়া, ওয়ালিল মু’মিনিনা ইয়াওমা ইয়াক্বুমুল হিসাব।’ অর্থ: ‘হে আমাদের প্রতিপালক! রোজ কেয়ামতে আমাকে, আমার পিতা-মাতা ও সকল মুমিনকে ক্ষমা করুন।’ (সুরা ইবরাহিম: ৪১) অথবা رَبِّ ٱرۡحَمۡهُمَا كَمَا رَبَّيَانِي صَغِيرٗا ‘রাব্বির হামহুমা, কামা রাব্বায়ানি সাগিরা।’ অর্থ: ‘হে আমার প্রতিপালক, তাদের উভয়ের প্রতি রহম করো; যেমন তারা আমাকে শৈশবকালে লালন-পালন করেছেন।’ (সুরা বনি ইসরাইল: ২৪)

১১. সুস্থ থাকার দোয়া-  اللَّهُمَّ عَافِنِي فِي بَدَنِي، اللَّهُمَّ عَافِنِي فِي سَمْعِي، اللَّهُمَّ عَافِنِي فِي بَصَرِي، لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ ‘আল্লাহুম্মা আ-ফিনি ফি বাদানি, আল্লাহুম্মা আ-ফিনি ফি সাম-ই, আল্লাহুম্মা আ-ফিনি ফি বাসারি, লা-ইলাহা ইল্লা আনতা।’ অর্থ: ‘হে আল্লাহ, আমার দেহ সুস্থ রাখুন। হে আল্লাহ, আমাকে সুস্থ রাখুন আমার শ্রবণ ইন্দ্রিয়ে। হে আল্লাহ, আমাকে সুস্থ রাখুন আমার দৃষ্টিশক্তিতে। আপনি ছাড়া কোনো উপাস্য নেই।’ 

ফজিলত: আব্দুর রহমান ইবনে আবু বকর (রা.) থেকে বর্ণিত, আমি আমার পিতাকে বললাম, আব্বাজান, আমি আপনাকে প্রতিদিন ভোরে ও সন্ধ্যায় তিনবার বলতে শুনি যে আপনি এই দোয়া পাঠ করছেন। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (স.)-কে এ বাক্যগুলো দ্বারা দোয়া করতে শুনেছি। সেজন্য আমিও তাঁর নিয়ম অনুসরণ করতে ভালোবাসি। (আবু দাউদ:  ৫০৯০)

আরও পড়ুন: রোগী দেখে যে ৩ দোয়া পড়তেন নবীজি

১২. শবে কদরের দোয়া- اللَّهمَّ إنَّك عفُوٌّ كريمٌ تُحِبُّ العفْوَ، فاعْفُ عنِّي ‘আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন কারিমুন তুহিব্বুল আফওয়া ফা'ফু আন্নি।’ অর্থ: ‘হে আল্লাহ, আপনি মহানুভব ক্ষমাশীল এবং ক্ষমা করতে পছন্দ করেন, অতএব আমাকে ক্ষমা করুন।’ দোয়াটি এভাবেও পড়া যায়- اللَّهُمَّ إِنَّكَ عَفُوٌّ تُحِبُّ الْعَفْوَ فَاعْفُ عَنِّي ‘আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন তুহিব্বুল আফওয়া ফা'ফু আন্নি।’ অর্থ: ‘হে আল্লাহ, আপনি ক্ষমাশীল এবং ক্ষমা পছন্দ করেন, অতএব আমাকে ক্ষমা করুন।’

ফজিলত: রাসুলুল্লাহ (স.) উক্ত দোয়াটি শবে কদরে পড়তে বলেছেন। (তিরমিজি: ৩৫১৩; ইবনে মাজাহ: ৩৮৫০; আহমদ: ২৫৩৮৪)

১৩. আরাফার দিনের দোয়া- আরাফার দিনের দোয়ার বিশেষ গুরুত্বের কথা বর্ণিত হয়েছে হাদিসে। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘আরাফাতের দিনের দোয়াই শ্রেষ্ঠ দোয়া। দোয়া-জিকির হিসেবে সর্বোত্তম হলো ওই দোয়া, যা আমি এবং আমার পূর্ববর্তী নবীগণ করেছেন। তা হলো— لَا إِلَهَ إِلّا اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ، لَهُ المُلْكُ وَلَهُ الحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকা লাহু, লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু, ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শায়ইন ক্বাদির।’ অর্থ: আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই, তিনি একক, তার কোনো শরিক নেই, রাজত্ব একমাত্র তারই, সমস্ত প্রশংসাও একমাত্র তারই জন্য, আর তিনি সকল বিষয়ের ওপর ক্ষমতাবান।’ (জামে তিরমিজি: ৩৫৮৫; শুআবুল ঈমান, বায়হাকি: ৩৭৭৮)

আরও পড়ুন: যে দোয়া পড়লে যা হারিয়েছেন তার চেয়ে উত্তম কিছু পাবেন

১৪. জানাজার নামাজে প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ বা নারীর ক্ষেত্রে এই দোয়া- اَللّٰهُمَّ اغْفِرْ لِحَيِّنَا وَمَيِّتِنَا وَشَاهِدِ نَا وَغَائِبِنَا وَصَغِيْرِنَا وَكَبِيْرِنَا وَذَكَرِنَا وَاُنْثَنَا اَللّٰهُمَّ مَنْ اَحْيَيْتَهُ مِنَّا فَاَحْيِهِ عَلٰى الْاِسْلاَمِ وَمَنْ تَوَفَّيْتَهُ مِنَّا فَتَوَفَّهُ عَلٰى الْاِيْمَانِ উচ্চারণ: আল্লাহুম্মাগ ফিরলি হায়্যিনা ওয়া মাইয়্যিতিনা ওয়া শাহিদিনা ওয়া গায়িবিনা ওয়া সাগীরিনা ওয়া কাবীরিনা ওয়া যাকারিনা ওয়া উনছানা। আল্লাহুম্মা মান আহইয়াহতাহু মিন্না, ফাআহয়িহী আলাল ইসলামি ওয়া মান তাওয়াফ ফাইতাহু মিন্না ফাতাওয়াফফাহ আলাল ইমান। অর্থ: ‘হে আল্লাহ, আমাদের জীবিত ও মৃত, উপস্থিত ও অনুপস্থিত, ছোট ও বড় এবং পুরুষ ও নারী সকলকে ক্ষমা করে দিন। হে আল্লাহ, আপনি আমাদের মধ্য থেকে যাদেরকে জীবিত রেখেছেন ইসলামের উপর জীবিত রাখেন আর যাদেরকে মৃত্যু দান করেছেন তাদেরকে ঈমানের সঙ্গেই মৃত্যু দান করেন।’

অপ্রাপ্তবয়স্ক ছেলের জানাজায় এই দোয়া- اَللّٰهُمَّ اجْعَلْهُ لَنَا فَرَطًا وَّاجْعَلْهُ لَنَا اَجْرً ا وَّاجْعَلْهُ لَنَا شَافِعًا وَّمُشَفِّعًا উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মাজ আলহু লানা ফারাতাও ওয়াজ আলহু লানা আজরাও ওয়াজ আলহু লানা শাফিআও ওয়া মুশাফফাআ।’ অর্থ: ‘হে আল্লাহ, আপনি তাকে আমাদের জন্য অগ্রবর্তী হিসেবে কবুল করুন, তাকে করুন আমাদের জন্য প্রতিদান স্বরূপ এবং তাকে বানান আমাদের জন্য সুপারিশকারী -যার সুপারিশ কবুল করা হবে।’ 

এবং অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়ের জানাজায় এই দোয়া পড়বেন- ًاَللّٰهُمَّ اجْعَلْهَا لَنَا فَرْطًا وَّاجْعَلْهَا لَنَا اَجْرًا وَّذُخْرًا وَّاجْعَلْهَا لَنَا شَافِعَةً وَّمُشَفَّعَة উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মাজ আলহা লানা ফারতাঁও ওয়াজ আলহা লানা আজরাঁও ওয়া যুখরাঁও ওয়াজ আলহা লানা শা-ফিয়াতাওঁ ওয়া মুশাফফাআহ।’ অর্থ: ‘হে আল্লাহ, আপনি তাকে আমাদের জন্য অগ্রবর্তী হিসেবে কবুল করুন, তাকে করুন আমাদের জন্য প্রতিদান স্বরূপ এবং তাকে বানান আমাদের জন্য সুপারিশকারী -যার সুপারিশ কবুল করা হবে।’ (তিরমিজি: ৯৪৫; দারা কুতনি: ১৮৫৩; ইবনে আবি শায়বা: ৩/২৯৫)

১৫. কবর জিয়ারতের দোয়া- السَّلاَمُ عَلَيْكُمْ يَا أَهْلَ الْقُبُورِ يَغْفِرُ اللَّهُ لَنَا وَلَكُمْ أَنْتُمْ سَلَفُنَا وَنَحْنُ بِالأَثَرِ উচ্চারণ : আসসালামু আলাইকুম ইয়া আহলাল কুবুর; ইয়াগফিরুল্লাহু লানা ওয়ালাকুম, আনতুম সালাফুনা ওয়া নাহনু বিল আ-সার। অর্থ: হে কবরবাসী! তোমাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক। আল্লাহ আমাদের ও তোমাদের ক্ষমা করুন, তোমরা আমাদের আগে কবরে গিয়েছ এবং আমরা পরে আসছি। (সুনানে তিরমিজি: ১০৫৩)

আরও পড়ুন: নারীদের কবর জিয়ারতের বিধান

১৬. অজু শেষে এই দোয়া পড়ুন- أَشْهَدُ أَنْ لا إِلهَ إِلاّ اللهُ وَحْدَه لاَ شَرِيْكَ لَهُ، وَأَشْهَدُ أَنّ مُحَمّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ، اللّهُمّ اجْعَلْنِي مِنَ التّوّابِينَ، وَاجْعَلْنِي مِنَ الْمُتَطَهِّرِينَ ‘আশহাদু আল-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা-শারিকা লাহু, ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসুলুহু, আল্লাহুম্মাজ-আলনি মিনাত-তাওয়া-বিনা, ওয়াজ-আলনি মিনাল-মুতা-ত্বাহহিরিন।’  অর্থ: ‘আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই। তিনি একক সত্তা, তাঁর কোনো শরিক নেই এবং আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি মুহাম্মাদ (স.) আল্লাহর বান্দা ও রাসুল। হে আল্লাহ! আপনি আমাকে তাওবাকারীদের অন্তর্ভুক্ত করুন এবং পবিত্রতা অর্জনকারীদেরও অন্তর্ভুক্ত করুন।’ (তিরমিজি: ৫৫; মুসলিম: ৩৪৫)

১৭. আজান শুনে এই দোয়া পড়ুন- ﺍﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﺭَﺏَّ ﻫَﺬِﻩِ ﺍﻟﺪَّﻋْﻮَﺓِ ﺍﻟﺘَّﺎﻣَّﺔِ، ﻭَﺍﻟﺼَّﻼَﺓِ ﺍﻟْﻘَﺎﺋِﻤَﺔِ، ﺁﺕِ ﻣُﺤَﻤَّﺪﺍً ﺍﻟْﻮَﺳِﻴﻠَﺔَ ﻭَﺍﻟْﻔَﻀِﻴﻠَﺔَ، ﻭَﺍﺑْﻌَﺜْﻪُ ﻣَﻘَﺎﻣَﺎً ﻣَﺤﻤُﻮﺩﺍً ﺍﻟَّﺬِﻱ ﻭَﻋَﺪْﺗَﻪُ উচ্চারণ: ‘আল্লা-হুম্মা রাব্বা হা-জিহিদ দা‘ওয়াতিত তা-ম্মাতি ওয়াস সালা-তিল ক্বা-য়িমাতি, আ-তি মুহাম্মাদান আল ওয়াসীলাতা ওয়াল ফাদীলাতা, ওয়াব‘আসহু মাকা-মাম মাহমূদানিল্লাযী ওয়াআদতাহ’ অর্থ: ‘হে আল্লাহ! এই পরিপূর্ণ আহ্বান এবং প্রতিষ্ঠিত সালাতের তুমিই প্রভু! মুহাম্মদ (স.)-কে অসিলা তথা জান্নাতের একটি স্তর এবং ফজিলত তথা সকল সৃষ্টির উপর অতিরিক্ত মর্যাদা দান করুন। আর তাঁকে মাকামে মাহমূদে (প্রশংসিত স্থানে) পৌঁছে দিন, যার প্রতিশ্রুতি আপনি তাঁকে দিয়েছেন।’ (বুখারি: ১/২৫২,নং ৬১৪; বুখারি:১/২২২, নং: ৫৮৯)

১৮. নামাজে সালাম ফিরিয়ে এই দোয়া পড়ুন- اللَّهُمَّ أَنْتَ السَّلاَمُ وَمِنْكَ السَّلاَمُ تَبَارَكْتَ يَا ذَا الْجَلاَلِ وَالإِكْرَامِ ‘আল্লাহুম্মা আনতাস সালাম ওয়া মিনকাস সালাম তাবারকতা ইয়া জালজালালি ওয়াল ইকরাম।’ অর্থ: ‘হে আল্লাহ! তুমিই শান্তিময় এবং তোমার থেকে শান্তি আসে। তুমি কল্যাণময় এবং সম্মান ও প্রতিপত্তির অধিকারী।’ (আবু দাউদ: ১৫১২)

১৯. সহবাসের শুরুতে এই দোয়া পড়ুন- بِسْمِ اللَّهِ اللَّهُمَّ جَنِّبْنَا الشَّيْطَانَ وَجَنِّبِ الشَّيْطَانَ مَا رَزَقْتَنَا‏ ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহুম্মা জান্নিবনাশ শাইতানা ওয়া জান্নিবিশ শাইতানা মা রাজাকতানা।’ অর্থ: আল্লাহর নামে শুরু করছি। হে আল্লাহ! আমাদের শয়তানের প্রভাব থেকে দূরে রাখুন এবং আমাদের যে সন্তান দান করবেন তাদের শয়তানের প্রভাব থেকে বাঁচিয়ে রাখুন। (বুখারি: ১৪১, ৩২৭১)

২০. জান্নাত লাভ ও জাহান্নাম থেকে মুক্তির দোয়া-اللهم اني اسالك الجنة واعوذ بك من النار উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকাল জান্নাহ, ওয়া আঊযুবিকা মিনান্নার।’ অর্থ: ‘হে আল্লাহ আমি আপনার কাছে জান্নাত কামনা করছি এবং জাহান্নাম থেকে আপনার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।’ (সুনানে তিরমিজি: ২৫৭২)

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর