কবর জিয়ারত একটি উপকারী আমল। এতে কবরস্থ ব্যক্তি যেমন সওয়াব লাভ করেন, তেমনি নিজেরও কিছু উপকার রয়েছে। কবর জিয়ারতে অন্তর নরম হয়; পরকালের ভয় জাগ্রত হয়, যা মানুষের তাকওয়া বাড়াতে সহায়তা করে। তাই কবর জিয়ারত একসময় নিষেধ থাকলেও পরে তা জায়েজ ঘোষণা করা হয়।
মূলত জাহেলি যুগের কবর পূজা সম্পর্কে ঘৃণা সৃষ্টির জন্যই নবী (স.) প্রথমে উম্মতকে কবরের কাছে যেতে নিষেধ করেছিলেন। এরপর যখন ওই সময়ের রসম-রেওয়াজ সমাজ থেকে ভালোভাবে দূর হলো তখন তিনি কবর জিয়ারতের অনুমতি দিয়ে বলেছেন- ‘আমি তোমাদের কবর-জিয়ারত করতে নিষেধ করেছিলাম। এখন তোমরা কবর জিয়ারত করতে পারো। কারণ তা দুনিয়ার মোহ দূর করে এবং আখেরাতকে মনে করিয়ে দেয়। (ইবনে মাজাহ: ১৫৭১; মেশকাত পৃ. ১৫৪)
বিজ্ঞাপন
এরপর থেকে কবর জিয়ারত শুরু হলেও নারীদের কবরস্থানে যাতায়াত মোটামুটি কম ছিল। এ কারণেই হজরত আয়েশা (রা.)-এর মুখে তার ভাই আবদুর রহমান ইবনে আবু বকরের কবর জিয়ারতের কথা শুনে আবদুল্লাহ ইবনে আবি মুলাইকা (রহ.) জিজ্ঞেস করেছিলেন, নবী কারিম (স.) কি কবর জিয়ারত করতে নিষেধ করেননি? হজরত আয়েশা উত্তর দিলেন, হ্যাঁ, নবী করিম (স.) কবর জিয়ারত করতে নিষেধ করেছিলেন। কিন্তু পরবর্তীতে কবর জিয়ারতের আদেশ করেছেন।’ (সুনানে বায়হাকি: ৬৯৯৯; মুস্তাদরাকে হাকিম: ১৩৯২)
আরও পড়ুন: যে ১১ বদভ্যাসের কারণে কবরে আজাব হয়
হজরত আয়েশাকে এই প্রশ্ন করার আরেকটি বড় কারণ হতে পারে, নারীদের উদ্দেশ্য করেই কবরস্থানে যেতে নিষেধ করেছিলেন নবীজি। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত এক হাদিসে এসেছে, মহানবী (স.) কবর জিয়ারতকারী নারীদের ওপর অভিশাপ করেছেন। (তিরমিজি: ১০৫৬)
কিন্তু পরে যখন কবর জিয়ারত বৈধ ঘোষণা করা হলো- তখন নবীপত্নী আয়েশা (রা.) কবর জিয়ারত করেছেন। হজরত ফাতিমা (রা.)-ও কবর জিয়ারত করেছেন মর্মে হাদিস রয়েছে। হজরত আলী (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে এসেছে, নবীকন্যা ফাতেমা (রা.) প্রতি জুমাবারে তার চাচা হামজা (রা.)-এর কবর জিয়ারত করতেন। তিনি সেখানে নামাজ পড়তেন, কান্নাকাটি করতেন। (মুস্তাদরাক হাকিম: ১৩৯৬)
বিজ্ঞাপন
স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন আসে, অতীতে সবার জন্য কবর জিয়ারত নিষেধ থাকার পরও আলাদাভাবে নারী জিয়ারতকারীদের অভিশাপ দেওয়ার কারণ কী? এই প্রশ্নেই নারীদের কবর জিয়ারতের মাসয়ালায় আলেমদের মতপার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। আলেমদের এক পক্ষ নারীদের কবর জিয়ারতে নিষেধ বা নিরুৎসাহিত করেন। অপর পক্ষের মতে, পর্দা ঠিক থাকলে এবং অতি আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে তারাও কবর জিয়ারত করতে পারবেন।
এসবের আলোকে গ্রহণযোগ্য ফুকাহায়ে কেরামের অভিমত হলো- চারটি বিষয় ঠিক থাকলে নারীরা কবর জিয়ারত করতে পারবেন। ১. ধৈর্যহারা হবে না তথা কবরস্থানে গিয়ে কান্নাকাটি, বিলাপ ইত্যাদি করতে পারবেন না, ২. পূর্ণ পর্দার সাথে বের হবেন, ৩. যাতায়াত নিরাপদ হতে হবে এবং ৪. কোনো প্রকারের ফিতনা বা গুনাহে জড়ানোর আশংকা থাকবে না। এই চার শর্তে নারীরা কবর জিয়ারত করতে পারবেন। এরপরও নারীদের নিয়মিত কবর জিয়ারত করা অনুচিত। আর করবের পাশ দিয়ে অতিক্রমকালে নিচুস্বরে কবর জিয়ারতের দোয়া পড়লে কোনো অসুবিধা নেই। (আলবাহরুর রায়েক: ২/১৯৫; রদ্দুল মুহতার: ২/২৪২; হাশিয়াতুত তহতাবি আলাল মারাকি: পৃ. ৩৪০; বজলুল মাজহুদ: ১৪/২০৪; ফতোয়ায়ে ফকিহুল মিল্লাত : ৫/২১১-২২২)