শনিবার, ২২ মার্চ, ২০২৫, ঢাকা

যেসব ত্রুটির কারণে পূর্ণ মুমিন হওয়া যায় না

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০২:১৯ পিএম

শেয়ার করুন:

যেসব ত্রুটির কারণে পূর্ণ মুমিন হওয়া যায় না

আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের ওপর বিশ্বাসী প্রত্যেক ব্যক্তি মুমিন পরিচয় লাভ করলেও সবার ঈমান সমান নয়। কেউ পূর্ণ ঈমানদার বা প্রকৃত ঈমানদার, আবার কারো ঈমান অপরিপূর্ণ। নবীজির হাদিস অনুযায়ী কিছু স্বভাব ও আচরণের কারণে মানুষ প্রকৃত ঈমানদার হতে পারে না। প্রকৃত মুমিন বা পরিপূর্ণ ঈমানদার হতে বাধা এমন কিছু স্বভাব এখানে হাদিসের আলোকে তুলে ধরা হলো।

১. মা-বাবা ও সন্তান-সন্ততির চেয়ে নবীজি অধিক প্রিয় না হলে
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুল (স.) বলেছেন, ‘সেই প্রভুর কসম, যার হাতে আমার জীবন, তোমরা কেউ ততক্ষণ পর্যন্ত পূর্ণ মুমিন নও, যতক্ষণ পর্যন্ত আমি তার নিকটে তার পিতা-মাতা, সন্তান-সন্ততির চেয়ে অধিক প্রিয় না হই।’ (সহিহ বুখারি: ১৪)


বিজ্ঞাপন


২. নিজের জন্য যা পছন্দ, অন্যের জন্যও তা পছন্দ না করলে
হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (স.) বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ ততক্ষণ প্রকৃত মুমিন হবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত সে নিজের জন্য যা পছন্দ করে তার ভাইয়ের জন্য তাই পছন্দ না করে।’ (বুখারি: ১৩)

৩. প্রতিবেশী অনাহারে থাকলে
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (স.) বলেছেন, ‘সে তো মুমিন নয়, যে নিজে তৃপ্তিভরে আহার করে, আর তার প্রতিবেশী থাকে অনাহারে, অর্ধাহারে।’ (আল আদাবুল মুফরাদ: ১১২)

আরও পড়ুন: প্রতিবেশীর সংকটে আপনার দায়িত্ব

৪. আমানতদারিতে ত্রুটি থাকলে
হজরত আনাস (রা.) বলেন, আল্লাহর নবী (স.) খুতবা দিলেই বলতেন ‘তার ঈমান নেই, যার আমানতদারি নেই। আর যার প্রতিশ্রুতিশীলতা নেই তার দ্বীনদারি নেই।’ (মুসনাদে আহমদ: ১২৩৮৩)


বিজ্ঞাপন


৫. প্রতিবেশীর অনিষ্ট করলে সে মুমিন নয় 
হজরত আবু শুরাইহ খুজায়ি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (স.) বলেছেন, ‘আল্লাহর কসম, সে মুমিন নয়, আল্লাহর কসম সে মুমিন নয়, আল্লাহর কসম, সে মুমিন নয়।’ জানতে চাওয়া হলো- ‘কে ইয়া রাসুলুল্লাহ!’ তিনি বললেন, ‘যার অনিষ্ট ও উৎপীড়ন থেকে তার প্রতিবেশী নিরাপদ থাকে না।’ (বুখারি: ৬০১৬)

৬. মানুষের নিন্দা করলে, দোষারোপ করলে
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বর্ণনা করেছেন, রাসুল (স.) বলেছেন, ‘মুমিন কখনো দোষারোপকারী ও নিন্দাকারী হতে পারে না, অভিসম্পাতকারী হতে পারে না, অশ্লীল কাজ করে না এবং কটুভাষীও হয় না।’ (তিরমিজি: ১৯৭৭)

৭. মানুষকে অভিশাপ দিলে
উপরে বর্ণিত তিরমিজির ১৯৭৭ নম্বর হাদিসে প্রমাণ রয়েছে যে, অভিশাপকারীরা প্রকৃত মুমিন নয়। অভিশাপকারীদের কপাল অতি মন্দ। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘যখন কোনো বান্দা কোনো ব্যক্তিকে অভিশাপ দেয়, তখন অভিশাপ আকাশে চলে যায়, আকাশের দরজাগুলো তার জন্য বন্ধ হয়ে যায়, অতঃপর তা জমিনের দিকে নেমে আসে। তখন জমিনের দরজাগুলোও তার থেকে বন্ধ করে দেওয়া হয়, অতঃপর তা ডানে বাঁয়ে ঘুরতে থাকে, যখন কোনো উপায় না পায়, তখন যাকে অভিসম্পাত করা হয়েছে, সে যদি এর যোগ্য হয়, তাহলে তার প্রতি পতিত হয়। অন্যথায় অভিশাপকারীর দিকেই ধাবিত হয়।’ (আবু দাউদ: ৪৯০৭)

আরও পড়ুন: মুসলিম হয়েও জান্নাতে যাবেন না যারা

৮. অশ্লীলতা থেকে বিরত না থাকলে
উপরে বর্ণিত তিরমিজির ১৯৭৭ নম্বর হাদিসে প্রমাণ রয়েছে যে অশ্লীতা প্রকৃত মুমিনের বৈশিষ্ট্যের সম্পূর্ণ বিপরীত। পবিত্র কোরআনেও এর অসংখ্য দলিল রয়েছে। এক আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা ব্যভিচারের কাছেও যেও না। নিশ্চয় তা অশ্লীলতা ও বিপথগামিতা।’ (সুরা বনি ইসরাইল: ৩২)

কোরআনের আলোকে প্রকৃত মুমিনের গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য
১. নামাজে আন্তরিক। (সুরা মুমিনুন: ২)
২. অনর্থক কথা-কাজ থেকে দূরে থাকে। (সুরা মুমিনুন: ৩)
৩. জাকাত প্রদানকারী। (সুরা মুমিনুন: ৪)
৪. লজ্জাস্থানের হেফাজতকারী। (সুরা মুমিনুন: ৫)
৫. আমানত রক্ষাকারী। (সুরা মুমিনুন: ৮; সুরা নিসা: ৫৮)
৬. প্রতিশ্রুতি পূরণকারী। (সুরা মুমিনুন:৮; সুরা বনি ইসরাইল: ৩৪)
৭. নামাজের পরিপূর্ণ রক্ষণাবেক্ষণকারী। (সুরা মুমিনুন: ৯)
৮. জান-মাল দিয়ে আল্লাহর পথে জিহাদকারী। (সুরা হুজরাত: ১৫)

আরও পড়ুন: জাহান্নামের আগুন দেখবে না ৩ শ্রেণির মানুষ

৯. ঈমান বিষয়ে সন্দেহপোষণ করে না। (সুরা হুজরাত: ১৫)
১০. আল্লাহকে ভয় করে। (সুরা আনফাল: ১)
১১. আল্লাহর বাণী শুনলে ঈমানে দৃঢ়তা বাড়ে। (সুরা আনফাল: ২)
১২. দান করে। (সুরা আনফাল: ৩)
১৩. অন্য মুমিনের প্রতি আন্তরিক হয়। (সুরা তাওবা: ৭১)
১৪. মানুষকে সৎকাজে উদ্বুদ্ধ করে। (সুরা তাওবা: ৭১)
১৫. অন্যায় কাজ থেকে নিষেধ করে। (সুরা তাওবা: ৭১)
১৬. আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের অনুগত হয়। (সুরা তাওবা: ৭১)
১৭. গুনাহ হয়ে গেলে দ্রুত তাওবা করে। (সুরা তাওবা: ১১২)
১৮. ইবাদতে আগ্রহী হয়। (সুরা তাওবা: ১১২)
১৯. আল্লাহর প্রশংসাকারী হয়। (সুরা তাওবা: ১১২)
২০. রোজা রাখে। (সুরা তাওবা: ১১২)
২১. পার্থিব লোভ-লালসা থেকে মুক্ত থাকে। (সুরা নুর: ৩৭)
২২. আল্লাহর উপদেশ গ্রহণ করে। (সুরা সাজদাহ: ১৫)
২৩. অহংকার করে না। (সুরা সাজদাহ: ১৫)
২৪. গুরতর পাপ ও অশ্লীলতা থেকে দূরে থাকে। (সুরা আশ শুরা: ৩৭)
২৫. ক্ষমাশীল হয়। (সুরা আশ শুরা: ৩৭)
২৬. আত্মপ্রশংসা থেকে দূরে থাকে। (সুরা নাজম: ৩২)
২৭. বান্দার হকের ব্যাপারে সতর্ক থাকে। (সুরা দাহার: ৭-১০)
২৮. বিশুদ্ধ আকিদার অধিকারী হয়। (সুরা বাকারা: ১৭৭)

আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে হাদিসে বর্ণিত প্রকৃত মুমিন হতে বাধা ত্রুটিগুলো থেকে হেফাজত করুন। মুমিনের বৈশিষ্ট্যগুলো অর্জনের তাওফিক দান করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর