মদ বা শরাব দুনিয়াতে হারাম। কিন্তু জান্নাতে হারাম নয়। জান্নাতিদের যেসব পানীয় পরিবেশনের মাধ্যমে সম্মানিত করা হবে তার একটি হলো মদ বা সুরা। তবে সেই মদ দুনিয়ার মদের মতো হবে না, বরং তা হবে ভিন্ন বৈশিষ্ট্যের। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তাদেরকে ঘুরে ঘুরে পরিবেশন করা হবে বিশুদ্ধ সুরাপূর্ণ পাত্রে শুভ্ৰ উজ্জ্বল, যা হবে পানকারীদের জন্য সুস্বাদু। তাতে ক্ষতিকর কিছু থাকবে না এবং তাতে তারা মাতালও হবে না।’ (সুরা আস-সাফফাত: ৪৫–৪৭)
অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘তাদের সেবায় ঘোরাফেরা করবে চির-কিশোরেরা, পানপত্র, কুজা ও প্রস্রবণ নিঃসৃত সুরাপূর্ণ পেয়ালা নিয়ে, সে সুরা পানে তাদের শিরঃপীড়া হবে না, তারা জ্ঞানহারাও হবে না। (সুরা ওয়াকেয়া: ১৭–১৯)
বিজ্ঞাপন
এই আয়াতের ব্যাখ্যায় ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘পৃথিবীর মদের চারটি বৈশিষ্ট্য আছে। তা হলো নেশা সৃষ্টি, মাথা ব্যথা, বমি ও পেশাব। আল্লাহ তাআলা জান্নাতি যে মদের কথা বলেছেন তা তিনি এসব বৈশিষ্ট্য থেকে মুক্ত রেখেছেন। (তাফসিরে ইবনে কাসির)
জান্নাতে আরও বিভিন্ন পানীয়ের ব্যবস্থা থাকবে, যার গুণ ও স্বাদ অনন্য। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘মুত্তাকিদেরকে যে জান্নাতের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে তার দৃষ্টান্ত- তাতে আছে নির্মল পানির নহর, আছে দুধের নহর যার স্বাদ অপরিবর্তনীয়, আছে পানকারীদের জন্য সুস্বাদু সুরার নহর, আছে পরিশোধিত মধুর নহর।’ (সুরা মুহাম্মদ: ১৫)
আরও পড়ুন: জান্নাতের সুখ শান্তি
দুনিয়ার মদ বিবেক নষ্ট করে, রোগ-ব্যাধি টেনে আনে। মানব সমাজে বহু বিবাদ ও অনিষ্টের কারণ এই মদ। কিন্তু জান্নাতের মদ সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘সেখানে তারা একে অপরের নিকট হতে গ্রহণ করবে (মদ ভরা) পান-পাত্র, যা হতে পান করলে কেউ অসার কথা বলবে না এবং পাপ কর্মে লিপ্ত হবে না। (সুরা তুর: ২৩)
বিজ্ঞাপন
দুনিয়াতে একসময় মদ হারাম ছিল না এবং মদের কিছুটা উপকারও রয়েছে। তবে ক্ষতির পরিমাণ অনেক বেশি হওয়ায় মদকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এ সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তারা আপনাকে মদ ও জুয়া সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। বলুন, উভয়ের মধ্যে আছে মহাপাপ ও মানুষের জন্য উপকার। কিন্তু তাদের পাপ উপকার অপেক্ষা বেশি।’ (সুরা বাকারা: ২১৯)
আরও পড়ুন: জান্নাতে হুরদের কাজ কী
আলোচ্য আয়াতে মদের ক্ষতি ও উপকারিতা উভয় দিক তুলে ধরা হয়েছে এবং তাতে যে ক্ষতির পরিমাণ বেশি সে ব্যাপারেও সতর্ক করা হয়েছে। বর্তমান সমাজের অনেকেই মদপানের ক্ষতিকর দিকগুলো না ভেবে নিছক বিনোদনের জন্য মদ পান করে। অথচ তা ইসলামে হারাম।
জান্নাতের সুরা হবে পবিত্র। যা ক্ষুধা নিবারণের জন্য নয়, বরং অতিরিক্ত সুখ ও তৃপ্তি দেওয়ার জন্য দেওয়া হবে। জান্নাতিরা সেই সুরা পানে পরিতৃপ্ত হবেন। সেই পবিত্র সুরার জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া ও নেক আমলের প্রতিযোগিতা করা উচিত। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তাদেরকে মোহর করা বিশুদ্ধ পানীয় হতে পান করানো হবে; ওটার মোহর মিসকের, এ বিষয়ে প্রতিযোগীরা প্রতিযোগিতা করুক।’ (সুরা মুতাফফিফিন: ২৫–২৬)