সোমবার, ২৪ মার্চ, ২০২৫, ঢাকা

যে ১১ বদভ্যাসের কারণে কবরে আজাব হয়

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৩ জানুয়ারি ২০২৫, ০৭:৫৪ পিএম

শেয়ার করুন:

যে ১১ বদভ্যাসের কারণে কবরে আজাব হয়

পরকালের প্রথম ঘাঁটি হচ্ছে কবর। যদি কেউ এই ঘাঁটি থেকে থেকে মুক্তি পেয়ে যায়, তাহলে পরবর্তী ঘাঁটিগুলো তার জন্য সহজ হবে। আর যদি কেউ কবর থেকে মুক্তি না পায়, তাহলে পরবর্তী ঘাঁটিগুলো তার জন্য আরো কঠিন হবে।’ (তিরমিজি: ২৩০৮) 

মৃত্যুর পর থেকে পুনরুত্থান পর্যন্ত মধ্যবর্তী সময় হচ্ছে কবরের জগত বা আলমে বরজখ। ‘কবরে ফেরেশতাদের প্রশ্নের জবাব দেওয়ার ভিত্তিতে জাহান্নামের গর্ত কিংবা জান্নাতের টুকরোয় পরিণত হবে কবর।’ (তাবিয়াতুল হায়াত ফিল কবর; আল-ইসলাম সুওয়ালুন ওয়া জাওয়াব: ০৪-১১-২০১৮)


বিজ্ঞাপন


কবর আজাবের কারণসমূহ
১. পরনিন্দা
২. প্রস্রাব থেকে পবিত্র না হওয়া
৩.অন্যের দোষ খোঁজা
৪. অন্যের সম্পদ হরণ এবং প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত করা
৫. ধোঁকাবাজি ও প্রতারণা 
৬. কোরআন-হাদিস অস্বীকার করা
৭. কোরআন তেলাওয়াত বা অধ্যয়ন না করা
৮. ফরজ নামাজ না পড়ে ইচ্ছাকৃত ঘুমানো
৯. মিথ্যা বলা
১০. সুদ খাওয়া ও 
১১. জেনা-ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়া। 
কোরআন-হাদিসের আলোকে এগুলোই কবর আজাবের অন্যতম কারণ। (ড. আবদুল্লাহ ইবনে হামুদ আল-ফারিহ; মিন আসবাবি আজাবিল কাবরি মাআদ দলিল, শাবকাতুল আলুকাহ: ০৪-১১-২০১৮)

কবর আজাব থেকে মুক্তির উপায়
কবর আজাব থেকে মুক্তি পেতে হলে প্রথমত উল্লেখিত কবর আজাবের কারণ বা গুনাহগুলো থেকে দূরে থাকতে হবে। আর অধিক হারে মৃত্যুর স্মরণ করতে হবে। কেননা এটি গুনাহ থেকে বাঁচতে সহায়ক এবং তওবা করতে উৎসাহী করে, নেক আমলে উদ্বুদ্ধ করে, পরকালের ব্যাপারে ভীতি সঞ্চার করে এবং ঈমান-বিশ্বাসে সঞ্জীবিত করে। এছাড়াও তাওহিদ-বিশ্বাস, তাকওয়ায় অটলতা, আল্লাহর রাস্তায় গমন ও শাহাদাত বরণ, ইসলামি রাষ্ট্রের পাহারা দেওয়া, নিয়মিত সুরা মুলক পাঠ এবং সময়োপযোগী আমল-ইবাদত ইত্যাদি কবর আজাব থেকে রক্ষা করে। (ড. খালিদ রাতিব, আল-আসবাব আল-মুনজিয়া মিন আজাবিল কবর; শাবকাতুল আলুকাহ: ০৪-১১-২০১৮)

আরও পড়ুন: কবরে মুনকার নাকির যে প্রশ্ন করবেন

সুরা মুলক পাঠ করাও কবর আজাব থেকে মুক্তির অন্যতম উপায়। নবীজি (স.) ইরশাদ করেছেন, ‘প্রতিদিন এশার নামাজের পর রাতে ঘুমানোর আগে যে ব্যক্তি সুরা তাবারাকাল্লাজি, অর্থাৎ সুরা মুলক তেলাওয়াত করবে, তার মৃত্যুর পর কবরের আজাব মাফ করে দেওয়া হবে।’ (তিরমিজি: ২৮৯০, মুসতাদরাকে হাকেম)


বিজ্ঞাপন


আরও অনেকের ব্যাপারে কবর আজাব হবে না বলে হাদিস রয়েছে। যেমন- পেটের রোগে মৃত্যু হলে কবরের আজাব নেই। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘যাকে তার পেটের কোনো রোগ হত্যা করে তাকে কখনো কবরে ‘আজাব দেওয়া হবে না।’ (তিরমিজি: ১০৬৪; সুনানে নাসায়ি: ৪/৯৮)

আবার, জুমাবারে কেউ মারা গেলে তার কবর আজাব হয় না বলে হাদিস রয়েছে। আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বর্ণনা করেন, আল্লাহর রাসুল (স.) বলেছেন, ‘যে মুসলমান জুমার দিনে কিংবা জুমার রাতে মৃত্যুবরণ করবে, নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা তাকে কবরের ফেতনা থেকে বাঁচিয়ে রাখবেন। (তিরমিজি: ১০৯৫; মেশকাত: ১৩৬৭; মুসনাদে আহমদ: ১১/১৪৭)

আরও পড়ুন: কবরে যাদেরকে প্রশ্ন করা হবে না

এছাড়াও নবী-রাসুলগণ, সিদ্দিক, নাবালেগ ও পাগলদের কবর আজাব নেই মর্মে বিভিন্ন বর্ণনায় উঠে এসেছে। 

মোট কথা, আল্লাহর ওপর ঈমান, তাঁকে ভয় করা, তাঁর আদেশ-নিষেধ মেনে চলা, দান-সদকা, দোয়া, কোরআনকে ধারণ এবং তওবা-ইস্তেগফারের মাধ্যমেই কবর আজাব থেকে মুক্ত থাকা সম্ভব এবং এসব আমলই মূলত পরকালীন সফলতার সবচেয়ে বড় উপায়। যেমনটি আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই যারা বলে আমাদের রব আল্লাহ, অতঃপর এর ওপর দৃঢ় থাকে তাদের কোনো ভয় নেই এবং তারা চিন্তিতও হবে না।’ (সুরা আহকাফ: ১৩)

কবর আজাব থেকে মুক্তির দোয়া
 اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ جَهَنَّمَ وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ فِتْنَةِ الْمَسِيحِ الدَّجَّالِ وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ فِتْنَةِ الْمَحْيَا وَالْمَمَاتِ ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিন আজাবি জাহান্নামা, ওয়া আউজুবিকা মিন আজাবিল কবরি, ওয়া আউজুবিকা মিন ফিতনাতিল মাসিহিদ দাজ্জালি, ওয়া আউজুবিকা মিন ফিতনাতিল মাহইয়া ওয়াল মামাত।’ অর্থ: ‘হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে জাহান্নামের আজাব থেকে আশ্রয় চাই, কবরের আজাব থেকে আশ্রয় চাই, আশ্রয় চাই মাসিহ দাজ্জালের ফিতনা থেকে এবং আশ্রয় চাই জীবন-মরণের বিপদাপদ থেকে।’ আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, রাসুল (স.) এই দোয়াটি এমনভাবে শেখাতেন, যেভাবে তাদের কোরআনের সুরা শেখাতেন। (আবু দাউদ: ১৫৪২)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে কোরআন সুন্নাহ নির্দেশিত পবিত্র ও সরল জীবন-যাপন করার তাওফিক দান করুন। কবর আজাব থেকে মুক্তি দিয়ে আমাদের সবাইকে তিনি জান্নাত নসিব করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর