রোববার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

সিলেটের ইলমি নক্ষত্র ইসহাক আল মাদানী আর নেই

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ২০ জানুয়ারি ২০২৫, ০৪:২৩ পিএম

শেয়ার করুন:

সিলেটের ইলমি নক্ষত্র ইসহাক আল মাদানী আর নেই

বর্ষীয়ান আলেমে দ্বীন, আন্তর্জাতিক ইসলামিক স্কলার, সিলেটের কৃতি সন্তান শাইখুল হাদিস আল্লামা ইসহাক আল মাদানী আর নেই (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তিনি সোমবার (২০ জানুয়ারি) সকাল ৮টায় সিলেট মাউন্ট এডোরা হাসপাতালে ইন্তেকাল করেছেন। 

এর আগে রোববার  শ্বাসকষ্ট নিয়ে ওই হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি হয়েছিলেন তিনি। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর। তিনি স্ত্রী, ২ ছেলে ও ৪ মেয়েসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে মারা যান। মরহুমের জানাজার নামাজ সোমবার (২০ জানুয়ারী) পৌণে ৫টায় (৪.৪৫ মিনিটে) সিলেট সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা ময়দানে অনুষ্ঠিত হবে।


বিজ্ঞাপন


মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে আরবি ভাষা ও সাহিত্য অনুষদে ১৯৮৩ সালে স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত বিরল সম্মানের অধিকারী আল্লামা ইসহাক আল মাদানী বাংলাদেশের ১ম ব্যাচের স্কলারশিপপ্রাপ্ত (১৯৭৮) কৃতি শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগ থেকে এমএ পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে প্রথম স্থান অর্জন করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন এওয়ার্ডপ্রাপ্ত প্রখর মেধাবী আল্লামা ইসহাক ঢাবির কলা অনুষদে সর্বোচ্চ মার্ক পেয়ে বিশেষ সম্মানে ভূষিত হয়েছিলেন।

আরও পড়ুন: আল্লাহ যাদের দ্বীনি জ্ঞান দান করেন

সৌদি দারুল ইফতার সাবেক মাবউছ আল্লামা ইসহাক আল মাদানী সৌদি আরবের ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অধীনে ইসলামি স্কলার হিসেবে প্রায় ৩৭ বছর (১৯৮৩-২০২০) বাংলাদেশ প্রতিনিধির দায়িত্ব আঞ্জাম দিয়েছেন। এছাড়া তিনি শাহজালাল জামেয়া ইসলামিয়া কামিল মাদ্রাসার (পাঠানটুলা, সিলেট) প্রতিষ্ঠাকালীন শায়খুল হাদিস হিসেবে দীর্ঘদিন জ্ঞানের আলো বিতরণ করেছেন। তৈরি করেছেন অসংখ্য আলেম- যাঁরা দেশে বিদেশে ইসলামের দ্যুতি ছড়াচ্ছেন।

দারুল উলুম দেওবন্দ থেকে সর্বোচ্চ ডিগ্রিপ্রাপ্ত মাওলানা মুফতি মাযহারুল ইসলাম ওসমান কাসেমী কর্তৃক ২০০৯ সালের মার্চ মাসে প্রকাশিত ‘বিখ্যাত ১০০ ওলামা-মাশায়েখের ছাত্রজীবন’ শীর্ষক গবেষণা গ্রন্থের অন্যতম শীর্ষ ব্যক্তিত্ব হিসেবে তিনি স্বীকৃতি লাভ করেছেন। যে তালিকায় রয়েছেন ইমাম আবু হানিফা (রঃ), আল্লামা ইমাম গাযালী (রঃ), সাইয়েদ আহমদ কবির রেফায়ী (রঃ), হযরত শেখ সাদী (রঃ), আল্লামা জালালুদ্দীন সূয়ুতী (রঃ), শাহ ওয়ালী উল্লাহ মুহাদ্দিছ দেহলভী (রঃ), শায়খুল হিন্দ মাহমুদুল হাসান দেওবন্দী (রঃ), আল্লামা ইকবাল (রঃ)-সহ যুগশ্রেষ্ট ইসলামি স্কলার ও গবেষকরা।


বিজ্ঞাপন


আরও পড়ুন: দ্বীনি জ্ঞান ও নেক আমল আল্লাহর বিশেষ নেয়ামত

আল্লামা ইসহাক আল মাদানীর আমন্ত্রণে ১৯৮৬ সালের জুলাই মাসে কাবা শরিফের প্রধান ইমাম ও খতিব শায়খ মুহাম্মদ বিন আব্দুল্লাহ বিন সুবায়ল সিলেট সফর করেন। তিন দিনের এই সফরে কাবার ইমামের বক্তব্য আরবি থেকে বাংলায় অনুবাদ করে গণমানুষের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছিলেন তিনি।

সিলেটের শাহী ঈদগাহে হাজারো ওলামা-সহ লাখো জনতার সমাবেশে ইসহাক আল মাদানীর ভাষান্তর ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়। এই শতকের অনন্য স্কলার হিসেবে তাঁর ইলমি আলোচনার সাবজেক্টিভিটি ও বুদ্ধিদীপ্ত কথামালা প্রাণসঞ্চারক।

ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতির বিকাশ এবং সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সমৃদ্ধির মূলমন্ত্র সম্পর্কে তাঁর গভীর পান্ডিত্যপূর্ণ বক্তব্য বিস্ময়কর। তাঁর মাহফিলের দর্শক-শ্রোতারা প্রবলভাবে আলোড়িত হন। শায়খুল হাদিস আল্লামা ইসহাক আল মাদানী কোরআন-হাদিসের দলিল দিয়ে বিজ্ঞানভিত্তিক বিশ্লেষণের জন্য বিখ্যাত। যার শান্তিপূর্ণ আলোচনা ও বিশ্লেষণ শুনে মহান আল্লাহর সাথে বান্দাদের মেলবন্ধন সৃষ্টি হয়। আল্লাহ তাআলা তাঁর এই বান্দাকে জান্নাতুল ফিরদাউস নসিব করুন। শোকসন্তপ্ত পরিবারকে সবর করার তাওফিক দান করুন। আমিন। 

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর