রোববার, ১৩ এপ্রিল, ২০২৫, ঢাকা

যে স্থানে যেভাবে জন্মগ্রহণ করেছিলেন ঈসা (আ.)

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:৫৮ পিএম

শেয়ার করুন:

loading/img

হজরত ঈসা (আ.) একজন সম্মানিত নবী ও রাসুল। তাঁর প্রতি আল্লাহর নাজিলকৃত কিতাবের নাম ইঞ্জিল। ঈসা (আ.)-এর জন্ম পৃথিবীবাসীর জন্য এক নিদর্শন। অলৌকিকভাবে কোনো পুরুষের হস্তক্ষেপ ছাড়াই জন্মগ্রহণ করেছিলেন তিনি। কুমারি মা হজরত মরিয়ম (আ.)-কে আল্লাহ তাআলা ফেরেশতা জিব্রাইল (আ.)-এর মাধ্যমে এক পুত-পবিত্র সন্তানের সুসংবাদ দেন। যিনি নবী হবেন এবং মানুষকে আল্লাহর পথে ডাকবেন।

অবাক বিস্ময়ে মা মরিয়ম জানতে চান- আমার কীভাবে সন্তান হতে পারে, আমার তো বিয়েই হয়নি। কখনো কোনো পুরুষ আমাকে স্পর্শ করেনি, আমি ব্যভিচারিণীও নই। জবাবে ফেরেশতা জিব্রাইল (আ.) বলেন, এটা সত্য যে, স্বামী ছাড়া নারীর সন্তান হয় না, তবে আল্লাহ তাআলা চাইলে সেটা করতে পারেন। আল্লাহ তাআলা এ ঘটনাকে মানুষের জন্য নিদর্শন বানাতে চান। যেমন তিনি আদম (আ.)-কে মা-বাবা ছাড়া সৃষ্টি করেছেন। তখন হজরত জিব্রাইল (আ.) মরিয়ম (আ.)-এর জামার কলারের মধ্যে ফুঁ দিলেন, এরপর তিনি আল্লাহর হুকুমে গর্ভবতী হন। 


বিজ্ঞাপন


এরপর তাঁকে নিয়ে শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনা। ইমাম মুহাম্মদ ইবনু ইসহাক (রহ) বলেন, মরিয়ম (আ.)-এর গর্ভবতী হওয়ার বিষয়টি যখন লোকজন জানতে পারল, তারা তাকে নিয়ে কটু কথা শুরু করলো এবং তাকে বিভিন্ন অপবাদ দিতে শুরু করল। 

মানুষজনের কটুকথা আর আপবাদের মুখে হজরত মরিয়ম (আ.) লোকালয় থেকে নির্জন স্থানে চলে গেলেন, যেখানে তাকে কেউ দেখতে পাবে না এবং তিনিও কাউকে দেখতে পাবেন না। লোকালয় থেকে দূরে সরে যাওয়ার পর তার প্রসব বেদনা উঠল। তখন তিনি একটি খেজুর গাছের নিচে বসে পড়েন। কথিত আছে, এই নির্জন স্থানটি ছিল বায়তুল মুকাদ্দাসের পূর্ব দিকের কক্ষটি।

আরও পড়ুন: দামেস্কের যে মসজিদে ঈসা (আ.) অবতরণ করবেন

আরেক বর্ণনামতে, লোকালয় থেকে বের হয়ে তিনি যখন সিরিয়া ও মিসরের মধ্যবর্তী স্থানে পৌঁছেন তখন তার প্রসব বেদনা শুরু হয়। আরেক বর্ণনায় পাওয়া যায়, লোকালয় থেকে বের হয়ে তিনি বায়তুল মুকাদ্দাস থেকে আট মাইল দূরে গিয়েছিলেন। যেখানে হজরত ঈসা (আ.)-এর জন্ম হয় সেই জায়গাটির নাম ছিলো বাইতে লাহাম। তাফসির গ্রন্থ ইবনে কাসিরে বলা হয়েছে, বায়তুল মুকাদ্দাসের আশপাশে কোথাও জন্মগ্রহণ করেছিলেন তিনি। এ সম্পর্কে আল্লাহ তাআলাই ভালো জানেন।


বিজ্ঞাপন


মরিয়ম (আ.) প্রসব বেদনা শুরু হওয়ার পর নিজের মৃত্যু কামনা করতে লাগলেন। কারণ, একে তো প্রসব বেদনা, অন্যদিকে তাঁর কোলে সন্তান দেখলে মানুষ সত্য কথা বিশ্বাস না করে বদনাম রটাবে। এসবের চেয়ে মৃত্যুকেই তাঁর ভালো মনে হতে লাগল। তিনি বললেন,  হায় আমি যদি মানুষের স্মৃতি থেকেই মুছে যেতে পারতাম!

সন্তান ভুমিষ্ট হলো। এরপর সন্তান নিয়ে লোকালয়ে ফিরতেই মানুষের প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হলো। এ ঘটনার বর্ণনা পবিত্র কোরআনে এসেছে এভাবে—‘আর স্মরণ করুন। এ কিতাবে মরিয়মকে, যখন সে তার পরিবারের কাছ থেকে পৃথক হয়ে নিরালায় পূর্ব দিকে এক স্থানে আশ্রয় নিল, তারপর সে তাদের কাছ থেকে নিজেকে আড়াল করল। তখন আমি তার কাছে আমার রুহকে (জিবরাঈল আ.) পাঠালাম, সে তার কাছে পূর্ণ মানবাকৃতিতে আত্মপ্ৰকাশ করল।

মরিয়ম বলল, আমি তোমার থেকে দয়াময়ের আশ্রয় প্রার্থনা করছি (আল্লাহকে ভয় কর) যদি তুমি মুত্তাকি হও। সে বলল, আমি তো তোমার রব-এর দূত, তোমাকে এক পবিত্র পুত্র দান করার জন্য (আমি প্রেরিত হয়েছি)। মরিয়ম বলল, কেমন করে আমার পুত্র হবে, যখন আমাকে কোন পুরুষ স্পর্শ করেনি এবং আমি ব্যভিচারিণীও নই!

আরও পড়ুন: দাজ্জালের সঙ্গে দেখা হয়েছিল যে সাহাবির

সে বলল, ‘এভাবেই হবে; তোমার প্রতিপালক বলেছেন, এটা আমার জন্য সহজসাধ্য এবং তাকে আমি এজন্য সৃষ্টি করব, যেন সে হবে মানুষের জন্য এক নিদর্শন ও আমার কাছ থেকে এক অনুগ্রহ; এটা তো এক স্থিরীকৃত ব্যাপার।’

এরপর সে গর্ভে সন্তান ধারণ করল ও তাকে নিয়ে এক দূরবর্তী স্থানে চলে গেল। প্রসব-বেদনা তাকে এক খেজুর গাছের নিচে আশ্রয় নিতে বাধ্য করল। সে বলল, হায়, এর আগে যদি আমি মরে যেতাম এবং মানুষের স্মৃতি থেকে সম্পূর্ণ হারিয়ে যেতাম!

তখন ফেরেশতা (জিব্রাইল) তার নিচ থেকে ডেকে তাকে বলল, তুমি পেরেশান হয়ো না, তোমার রব তোমার নিচে একটি ঝর্ণা সৃষ্টি করেছেন। আর তুমি খেজুর গাছের কান্ড ধরে তোমার দিকে নাড়া দাও, তাহলে তা তোমার উপর তাজা-পাকা খেজুর ফেলবে। তুমি খাও, পান করো এবং চোখ জুড়াও। আর যদি তুমি কোনো লোককে দেখতে পাও তাহলে বলে দিও, ‘আমি পরম করুণাময়ের জন্য চুপ থাকার মানত করেছি। অতএব আজ আমি কোনো মানুষের সাথে কিছুতেই কথা বলব না’। 

তারপর সে সন্তানকে নিয়ে তার সম্প্রদায়ের কাছে উপস্থিত হলো; তারা বলল, হে মরিয়ম! তুমি তো এক অঘটন করে বসেছ। হে হারুনের বোন! তোমার বাবা অসৎ ব্যক্তি ছিল না এবং তোমার মা-ও ছিল না ব্যভিচারিণী।

মরিয়ম তখন ইঙ্গিতে সন্তানকে দেখাল। তারা বলল, যে দোলনার শিশু তার সাথে আমরা কেমন করে কথা বলব?’ (শিশুটি) বলল, ‘নিশ্চয় আমি আল্লাহর বান্দা; তিনি আমাকে কিতাব দিয়েছেন এবং আমাকে নবী করেছেন। যেখানেই আমি থাকি না কেন তিনি আমাকে বরকতময় করেছেন, তিনি আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন যতদিন জীবিত থাকি ততদিন নামাজ ও জাকাত আদায় করতে। আর আমাকে আমার মায়ের প্রতি অনুগত করেছেন এবং তিনি আমাকে করেননি দাম্ভিক, হতভাগ্য। আমার প্রতি শান্তি, যেদিন আমি জন্ম লাভ করেছি ও যেদিন আমার মৃত্যু হবে এবং যেদিন আমি জীবিত অবস্থায় পুনরুত্থিত হব।

এই হচ্ছে মরিয়ম পুত্র ঈসা। এটাই সঠিক বক্তব্য, যে বিষয়ে লোকেরা সন্দেহ পোষণ করছে। (সুরা মরিয়ম: ১৬-৩৪, তাফসিরে ইবনে কাসির: ১৪-খণ্ড, ১৪৬)

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন