শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

কবরে দাঁড়িয়ে তালকিন করার কোনো ভিত্তি আছে?

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:০৪ পিএম

শেয়ার করুন:

কবরে দাঁড়িয়ে তালকিন করার কোনো ভিত্তি আছে?

তালকিন অর্থ শেখানো, বুঝানো, স্মরণ করানো ইত্যাদি। সাধারণত মুমূর্ষু ব্যক্তিকে কালেমা স্মরণ করিয়ে দেওয়া এবং তাকে কালেমা পাঠের দীক্ষা দেওয়াকে আরবিতে তালকিন বলা হয়। এই তালকিন একবার বা দুইবারই যথেষ্ট, কিন্তু বারবার তালকিনের মাধ্যমে মুমূর্ষু ব্যক্তিকে পীড়াপীড়ি করা নিষেধ।

প্রশ্নে উল্লেখিত কবরে দাঁড়িয়ে তালকিন নামে যে প্রশ্নোত্তর পর্ব বিভিন্ন এলাকায় প্রচলিত রয়েছে, তার কোনো ভিত্তি ইসলামে নেই। যেমন- কবরের উপরে মাথা ও পায়ের দিকে দুজন ব্যক্তি দাঁড়িয়ে একজন প্রশ্ন করে- মান রাব্বুকা, মান নাবিয়্যুকা, মা দ্বীনুকা। অপরজন এর উত্তর দেয়। এভাবে তালকিন করলে নাকি মৃত ব্যক্তি ফেরেশতার প্রশ্নের জবাব দিতে সক্ষম হন।


বিজ্ঞাপন


এ প্রসঙ্গে ফুকাহায়ে কেরাম বলেন, দাফনের পর কবরে অবস্থান করে এভাবে তালকিন করা শরিয়তসম্মত নয়। কোনো সহিহ হাদিস দ্বারা এভাবে তালকিন করা প্রমাণিত নয়। অনেক ফকিহ পরিষ্কার ভাষায় দাফনের পর এ ধরনের তালকিন করা থেকে বিরত থাকতে বলেছেন। এক্ষেত্রে দাফনের পর কবরে অবস্থান করে যতটুকু সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণিত শুধু সেটুকুই করা যাবে। অন্য কিছু করা থেকে বিরত থাকতে হবে।

আরও পড়ুন: কবরে যাদেরকে প্রশ্ন করা হবে না

দাফনের পর কবরে অবস্থান করে যেসব আমলের কথা হাদিসে বর্ণিত হয়েছে সেগুলো হলো-

১. কিছু সময় অবস্থান করে মৃতের জন্য মাগফেরাতের দোয়া করবে এবং কবরে প্রশ্নের জবাবে সে যেন সুদৃঢ় থাকতে পারে সেজন্যও দোয়া করবে। উসমান রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন– নবীজি (স.) যখন কোনো মৃত ব্যক্তির দাফন সম্পন্ন করতেন তখন তিনি কবরের পাশে দাঁড়িয়ে বলতেন, তোমরা তোমাদের ভাইয়ের জন্য মাগফেরাতের দোয়া করো এবং সে যেন (প্রশ্নের জবাবে) সুদৃঢ় থাকতে পারে সে দোয়া কর। কেননা এখনই তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। (সুনানে আবু দাউদ: ৩২১৩)


বিজ্ঞাপন


২. আস্তে আস্তে মাটি ঢালা ও কিছুক্ষণ অবস্থান করা। আমর ইবনুল আস রা. বলেন– আমি যখন মৃত্যুবরণ করব তখন যেন কোনো বিলাপকারী অথবা আগুন আমার জানাজার সাথে না থাকে। আমাকে যখন দাফন করবে তখন আস্তে আস্তে মাটি ঢালবে এবং দাফন সেরে একটি উট জবাই করে তার গোশত বণ্টন করা পরিমাণ সময় আমার কবরের পাশে অবস্থান করবে। যেন তোমাদের উপস্থিতিতে আমি আতঙ্কমুক্ত অবস্থায় আমার প্রতিপালকের ফেরেশতাদেরকে ভেবে চিন্তে জবাব দিতে পারি। (সহিহ মুসলিম: ১২১)

আরও পড়ুন: দাফনের সময় কবরে উপস্থিত লোকদের তিনবার মাটি দেওয়া কি শরিয়তসম্মত?

৩. সুরা বাকারার শুরু ও শেষের আয়াতগুলো পড়া। আবদুর রহমান ইবনুল আলা রহ. বলেন– আমার পিতা আলা ইবনুল লাজলাজ (রা.) আমাকে বলেন, হে আমার প্রিয় পুত্র, যখন আমি মৃত্যুবরণ করব তখন আমার জন্য লাহদ (বুগলি কবর) খনন করবে। আমাকে কবরে রাখার সময় বলবে– ‘বিসমিল্লাহি ওয়াআলা মিল্লাতি রাসুলিল্লাহ’ অতঃপর আমার কবরে আস্তে আস্তে মাটি ঢালবে। এরপর আমার মাথার পাশে সুরা বাকারার শুরু ও শেষ অংশ পড়বে। কেননা আমি রাসুলুল্লাহ (স.)-কে এমনই বলতে শুনেছি। (আল মুজামুল কাবির, তবারানি: ১৯/২২০)

অতএব, প্রশ্নোক্ত প্রথাটি পরিহার করে দাফনের পর কবরের পাশে অবস্থান করে শুধু সুন্নাহসম্মত আমলগুলোই করবে। আল্লাহ তাআলা তাওফিক দান করুন। আমিন।

(ফতোয়ায়ে সিরাজিয়া, পৃ. ২৪; জাওয়াহিরুল ফতোয়া, কিরমানি, পৃ. ১২৩; শরহুল বেকায়াহ, ইবনে মালাক: ১/৫০৩; জামেউর রুমুজ: ১/২৭৮; মিরকাতুল মাফাতিহ: ৪/৭৪; ইমদাদুল আহকাম: ১/২০৯)

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর