মহানবী (স.)-এর হাদিস অনুযায়ী মুসলিম হয়েও কিছু মানুষের ইসলামে কোনো অংশ নেই। তারা কারা? তারা হলো নামাজ পরিত্যাগকারী। মিসওয়ার ইবন মাখরামা (রহ) হতে বর্ণিত, যে রাতে ওমর ইবনে খাত্তাব (রা.)-কে ছুরিকাঘাত করা হয়, সেই রাতে জনৈক ব্যক্তি ওমর ইবনে খাত্তাব (রা.)-এর নিকট প্রবেশ করল। ওমর (রা.)-কে ফজরের নামাজের জন্য জাগানো হলো। ওমর (রা.) বললেন- نَعَمْ وَلَا حَظَّ فِي الْإِسْلَامِ لِمَنْ تَرَكَ الصَّلَاةَ ‘হ্যাঁ, আমি এই অবস্থায়ও নামাজ পড়ব। যে ব্যক্তি নামাজ ছেড়ে দেয়, ইসলামে তার কোনো অংশ নেই।’ অতঃপর ওমর (রা.) নামাজ পড়লেন, অথচ তাঁর জখম হতে তখন রক্ত প্রবাহিত হচ্ছিল।’ (মুয়াত্তা মালিক: ৮১)
অন্য বর্ণনায় এসেছে, তিনি বলেন- إِنَّهُ لَا حَظَّ فِي الْإِسْلَامِ لِمَنْ أَضَاعَ الصَّلَاةَ، ‘যে ব্যক্তি সালাত বিনষ্ট করে ইসলামে তার কোনো অংশ নেই’ (দারা কুতনি: ১৭৫০; মুয়াত্তা: ১০১; ইরওয়া: ২০৯)
বিজ্ঞাপন
নামাজ একজন ঈমানদারের জন্য সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। ইসলামের পাঁচ স্তম্ভের মধ্যে নামাজ অন্যতম। কোনো অবস্থাতেই তা পরিত্যাগ করার সুযোগ নেই। এমনকি নামাজ কাজা করাও কঠিন গুনাহের কাজ। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন- اِنَّ الصَّلٰوۃَ كَانَتۡ عَلَی الۡمُؤۡمِنِیۡنَ كِتٰبًا مَّوۡقُوۡتًا ‘নির্ধারিত সময়ে সালাত আদায় করা মুমিনদের জন্য অবশ্যকর্তব্য।’ (সুরা নিসা: ১০৩)
আরও পড়ুন: ফজর নামাজের ১০ ফজিলত
জাহান্নামে নিজের ঠিকানা করে নেওয়ার অন্যতম কারণ নামাজ না পড়া। পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘(জাহান্নামিদের জিজ্ঞাসা করা হবে) مَا سَلَكَكُمۡ فِیۡ سَقَرَ তোমাদের কোন জিনিস সাকারে (জাহান্নাম) নিক্ষেপ করেছে? তারা বলবে- لَمۡ نَكُ مِنَ الۡمُصَلِّیۡنَ আমরা সালাত আদায়কারীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলাম না।’ (সুরা মুদ্দাসসির: ৪২-৪৩)
নামাজের মাধ্যমে ঈমান ও কুফরের পার্থক্য হয়। জাবির (রা.) বলেন, আমি নবী (স.)-কে বলতে শুনেছি- إِنَّ بَيْنَ الرَّجُلِ وَبَيْنَ الشِّرْكِ وَالْكُفْرِ تَرْكَ الصَّلاَةِ ‘বান্দা এবং শিরক-কুফরের মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে সালাত ছেড়ে দেওয়া।’ (সহিহ মুসলিম: ১৪৮)
বিজ্ঞাপন
নামাজ জান্নাত লাভের উপায়। উবাদা ইবনে সামিত (রা.) বলেন, আমি রাসুল (স.)-কে বলতে শুনেছি- خَمْسُ صَلَوَاتٍ كَتَبَهُنَّ اللَّهُ عَلَى الْعِبَادِ فَمَنْ جَاءَ بِهِنَّ لَمْ يُضَيِّعْ مِنْهُنَّ شَيْئًا اسْتِخْفَافًا بِحَقِّهِنَّ كَانَ لَهُ عِنْدَ اللَّهِ عَهْدٌ أَنْ يُدْخِلَهُ الْجَنَّةَ ‘আল্লাহ তাআলা বান্দার ওপর পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করেছেন। যে ব্যক্তি এই নামাজগুলো যথাযথভাবে আদায় করবে এবং অবহেলাবশত তাতে কোনো ত্রুটি করবে না, তার সঙ্গে আল্লাহ তাআলার চুক্তি হয়েছে যে তিনি তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।’ (আবু দাউদ: ১৪২০; ইবনে মাজাহ: ১৪০১)
আরও পড়ুন: যে দুই ওয়াক্ত নামাজ পড়লে জান্নাতের গ্যারান্টি দিয়েছেন নবীজি
ইচ্ছাকৃত ফরজ নামাজ ছেড়ে দিলে মহান আল্লাহ ওই ব্যক্তির ওপর থেকে তার জিম্মাদারি তুলে নেন। হজরত মুআজ (রা.) বলেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (স.) আমাকে ১০টি নসিহত করেন, তার মধ্যে বিশেষ এটাও যে, তুমি ইচ্ছাকৃত ফরজ নামাজ ত্যাগ করো না। কারণ যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃত ফরজ নামাজ ত্যাগ করল তার ওপর আল্লাহ তাআলার কোনো জিম্মাদারি থাকল না।’ (মুসনাদে আহমদ: ৫/২৩৮)
নামাজ পড়া মুসলিমদের একটি নিদর্শন। তাই হজরত ওমর (র.) বলতেন, ‘নামাজ ত্যাগকারী নির্ঘাত কাফের’ (বায়হাকি: ১৫৫৯, ৬২৯১)। হজরত আলি (রা.) বলেন, ‘যে নামাজ পড়ে না সে কাফের’ (বায়হাকি: ৬২৯১)। হজরত আবদুল্লাহ বিন মাসউদ (রা.) বলেন, ‘যে নামাজ পড়ে না সে মুসলমান নয়।’ (বায়হাকি: ৬২৯১)
ইমাম আহমদ এর মতানুযায়ী, অলসতা করে নামাজ বর্জনকারী কাফের এবং এটাই অগ্রগণ্য মত। কোরআন, হাদিস, সলফে সালেহিনের বাণী ও সঠিক কিয়াসের দলিল এটাই প্রমাণ করে। (আল-শারহুল মুমতি আলা-জাদিল মুসতানকি: ২/২৬)
নামাজ পড়া একজন মুমিনের জন্য বড় সৌভাগ্যের বিষয়! আর না পড়া বড় দুর্ভাগ্যের বিষয়! হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ যত্নের সঙ্গে আদায় করবে, কেয়ামতের দিন এ নামাজ তার জন্য আলো হবে। তার ঈমান ও ইসলামের দলিল হবে এবং তার নাজাতের ওসিলা হবে। আর যে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়মিত নামাজ আদায় করবে না, কেয়ামতের বিভীষিকাময় পরিস্থিতিতে নামাজ তার জন্য আলো হবে না। দলিলও হবে না এবং সে আজাব থেকে রেহাইও পাবে না। (মুসনাদে আহমদ: ৬৫৭৬)