জান্নাত মুমিনের চিরস্থায়ী আবাস। ঈমান ও আমলের বিনিময়ে পরকালে আল্লাহ তাআলা পুরস্কার হিসেবে মানুষকে জান্নাত দেবেন। জান্নাতি মানুষের দুনিয়াবি জীবন একজন প্রবাসীর মতোই। বিদেশের মাটিতে প্রবাসীর মনটা যেমন স্বদেশের জন্য ছটফট করে, তেমনি প্রকৃত মুমিনের মনও সদা জান্নাতে যেতে ব্যাকুল থাকে। হাদিসে প্রিয়নবী (স.) দুনিয়াকে মুমিনের জেলখানা বলে আখ্যায়িত করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘পৃথিবী মুমিনের জেলখানা এবং কাফেরের জন্য জান্নাত।’ (ইবনে মাজাহ: ৪১১৩)
তাই পৃথিবীর দুঃখ-কষ্ট, সম্পদ বা আকর্ষণীয় সবকিছুই জান্নাতি মানুষগুলোর কাছে মূল্যহীন। ঈমান, তাকওয়া ও নেক আমলই তার মহামূল্যবান সম্পদ। এখানে কোরআন ও হাদিসের আলোকে জান্নাতি মানুষের কিছু বৈশিষ্ট্য তুলে ধরা হলো।
বিজ্ঞাপন
১. নেক আমলের প্রতি ঝোঁক থাকবে
জান্নাতি মানুষের প্রধান বৈশিষ্ট্যই হলো—নেক আমলের প্রতি ঝোঁক থাকবে তাদের। কেননা আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেন, ‘যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকাজ করেছে, তারাই জান্নাতের অধিবাসী। তারা সেখানে চিরকাল থাকবে।’ (সূরা বাকারা : ৮২) অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা ভালো কাজ করেছে, তাদের জন্য রয়েছে কল্যাণ এবং তার চেয়েও বেশি। সেদিন তাদের চেহারাকে স্পর্শ করবে না মলিনতা কিংবা অপমান। তারাই হবে জান্নাতের অধিবাসী, তারা সেখানে থাকবে চিরকাল। কিন্তু যারা মন্দ কাজ করেছে, তাদের মন্দের প্রতিফল মন্দের মতোই হবে, অপমান তাদের আচ্ছন্ন করে ফেলবে; সেদিন আল্লাহর আজাব থেকে তাদের রক্ষাকারী কেউ থাকবে না। তাদের চেহারা এমন কালো হবে, যেন তাদের মুখমণ্ডলকে ঢেকে দেয়া হয়েছে আঁধার রাতের টুকরো দিয়ে। এরা হচ্ছে জাহান্নামের অধিবাসী। এরা সেখানে অনন্তকাল থাকবে।’ (সূরা ইউনুস : ২৬-২৭)
২. গুনাহ হয়ে গেলে দ্রুত তওবা করবে
দ্রুত তওবা করা জান্নাতি মানুষের বৈশিষ্ট্য। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করা হয়েছে, ‘আল্লাহ তাদেরই তওবা কবুল করেন, যারা না জেনে মন্দ কাজ করে, তারপর অচিরেই তওবা করে। এদেরই তওবা আল্লাহ কবুল করেন। আল্লাহ মহাজ্ঞানী প্রজ্ঞাময়।’ (সুরা নিসা: ১৭) আরও ইরশাদ হয়েছে, ‘তারা কখনো কোনো অশ্লীল কাজ করে ফেললে কিংবা কোনো মন্দ কাজে জড়িত হয়ে নিজের ওপর জুলুম করে ফেললে, আল্লাহকে স্মরণ করে এবং নিজের পাপের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে। আল্লাহ ছাড়া আর কে পাপ ক্ষমা করবে? তারা নিজেদের কৃতকর্মের জন্য হঠকারিতা প্রদর্শন করে না এবং জেনে-শুনে তা-ই করতে থাকে না। তাদের জন্য প্রতিদান হলো তাদের পালনকর্তার ক্ষমা ও জান্নাত, যার তলদেশে প্রবাহিত হচ্ছে প্রস্রবণ-যেখানে তারা থাকবে অনন্তকাল। যারা সৎ কাজ করে তাদের জন্য কতই না চমৎকার প্রতিদান।’ (সুরা আলে ইমরান: ১৩৫-১৩৬)
আরও পড়ুন: তাওবা কবুলের জন্য যে দোয়াগুলো পড়বেন
৩. সহজ-সরল নম্রভাষী হবে
আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘আমি কি তোমাদেরকে জানিয়ে দিবো না, কোন ব্যক্তির জন্য জাহান্নাম হারাম এবং জাহান্নামের জন্য কোন ব্যক্তি হারাম? যে ব্যক্তি মানুষের কাছাকাছি (জনপ্রিয়), সহজ-সরল, নম্রভাষী ও সদাচারী।’ (তিরমিজি: ২৪৮৮)
বিজ্ঞাপন
৪. হিংসা-বিদ্বেষ থাকবে না
পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর আমি তাদের অন্তর থেকে হিংসা-বিদ্বেষ বের করে ফেলব, তারা সেখানে ভাই ভাই হয়ে আসনে মুখোমুখি বসবে।’ (সুরা হিজর: ৪৭)
৫. মানুষের ওপর রাগ করবে না
রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি নিজের ক্রোধ চরিতার্থ করার ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও তা সংবরণ করে, আল্লাহ তাকে কেয়ামতের দিন সমগ্র সৃষ্টির সামনে ডেকে আনবেন এবং জান্নাতের যেকোনো হুর নিজের ইচ্ছামতো বেছে নেওয়ার অধিকার দান করবেন।’ (ইবনে মাজাহ: ৪১৮৬)। প্রিয়নবী (স.) আরও বলেন, ‘আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য বান্দার ক্রোধ সংবরণে যে মহান প্রতিদান রয়েছে, তা অন্য কিছুতে নেই।’ (ইবনে মাজাহ: ৪১৮৯)
আরও পড়ুন: রাগ নিয়ন্ত্রণ করলে আল্লাহ যে পুরস্কার দেবেন
৬. কুপ্রবৃত্তি থেকে বিরত থাকবে
মহান আল্লাহ বলেন, ‘অনন্তর যে সীমালঙ্ঘন করে এবং পার্থিব জীবনকে অগ্রাধিকার দেয় জাহান্নামই হবে তার আবাস। পক্ষান্তরে যে তার রবের সামনে উপস্থিত হওয়ার ভয় করে এবং কুপ্রবৃত্তি থেকে নিজেকে বিরত রাখে জান্নাতই হবে তার ঠিকানা।’ (সুরা নাজিয়াত: ৩৭-৪০)
৭. দুর্বল হবে ৮. মজলুম হবে
হজরত হারিসা ইবনে ওয়াহাব (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী (স.)-কে বলতে শুনেছি—‘আমি কি তোমাদেরকে জান্নাতি লোকদের সম্পর্কে অবহিত করব না? তারা হবে দুনিয়াতে দুর্বল, মাজলুম। তারা যদি কোন কথায় আল্লাহর ওপর কসম করে ফেলে, তবে আল্লাহ তাআলা তা পূর্ণ করে দেন। আর যারা জাহান্নামে যাবে তারা হবে অবাধ্য, ঝগড়াটে ও অহংকারী।’ (বুখারি: ৬২০২)
আরও পড়ুন: মজলুমের ফরিয়াদ সম্পর্কে নবীজির সতর্কতা
৯. ন্যায়পরায়ণ সত্যবাদি হবে ১০. দয়ালু হবে ১১. চরিত্রবান হবে
রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘তিন শ্রেণীর মানুষ জান্নাতি। প্রথমত, রাষ্ট্রের কর্ণধার, ন্যায়পরায়ণ, সত্যবাদী এবং নেক কাজের সুযোগ লাভে ধন্য লোক। দ্বিতীয়ত, দয়ালু, আত্মীয়-স্বজন ও মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতি কোমলচিত্ত লোক। তৃতীয়ত, পুতপবিত্র চরিত্রের অধিকারী, ভিখারি নয় এবং সন্তানাদি সম্পন্ন লোক।..’ (মুসলিম: ৭০৯৯)
আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে জান্নাতি হিসেবে কবুল করুন। জান্নাতি মানুষের গুণাবলী অর্জনের তাওফিক দান করুন। আমিন।

