রোববার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

আল্লাহর রাস্তায় শহীদের মর্যাদা নিয়ে নবীজির হাদিস

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ০৩:২৯ পিএম

শেয়ার করুন:

আল্লাহর রাস্তায় শহীদের মর্যাদা নিয়ে নবীজির হাদিস

আরবি শহীদ শব্দের অর্থ সাক্ষী, প্রত্যক্ষকারী। যাঁরা ইসলাম ও আল্লাহর কালিমাকে সমুন্নত রাখার জন্য কাফিরদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে করতে নিহত হন, তাঁরাই শহীদ। আল্লাহ তাআলা তাঁদেরকে মৃত বলতে নিষেধ করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা আল্লাহর রাস্তায় নিহত হয়, তাদের মৃত বলো না। বরং তারা জীবিত, কিন্তু তোমরা অনুভব করতে পার না।’ (সুরা বাকারা: ১৫৪)

পবিত্র কোরআনে আরও ইরশাদ আছে, ‘আর যে আল্লাহর রাস্তায় লড়াই করবে, অতঃপর সে নিহত হোক কিংবা বিজয়ী হোক, অচিরেই আমি তাকে দেব মহাপুরস্কার।’ (সুরা নিসা: ৭৪) শহীদের মর্যাদা নিয়ে রাসুলুল্লাহ (স.)-এর বহু হাদিস রয়েছে। এখানে কিছু হাদিস তুলে ধরা হলো।


বিজ্ঞাপন


শহীদরা দুনিয়ায় ফেরার আকাঙ্ক্ষা করবেন
আনাস ইবনু মালিক (রা.) হতে বর্ণিত। আল্লাহর রাসুল (স.) বলেছেন, ‘আল্লাহর কোনো বান্দা এমতাবস্থায় মারা যায় যে, আল্লাহর কাছে তার সাওয়াব রয়েছে তাকে দুনিয়ার সবকিছু দিলেও দুনিয়ায় ফিরে আসতে আগ্রহী হবে না। কিন্তু শহীদ ব্যতিক্রম। সে শাহাদাতের ফজিলত দেখার কারণে আবার দুনিয়ায় ফিরে এসে আল্লাহর পথে শহীদ হতে আগ্রহী হবে।’ (সহিহ বুখারি: ২৭৯৫)

শহীদের সঙ্গে আল্লাহর কথোপকথন
রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, ‘শহীদদের রুহ সবুজ পাখির মাঝে প্রতিস্থাপন করা হয়, ফলে তারা জান্নাতের যেখানে ইচ্ছা সেখানে ঘুরে বেড়াতে পারে। তারপর তারা আরশের নিচে অবস্থিত কিছু ঝাড়বাতির মধ্যে ঢুকে পড়ে। তখন তাদের রব তাদের প্রতি এক দৃষ্টি দিয়ে তাদেরকে জিজ্ঞেস করেন, তোমরা কী চাও? তারা বলে হে রব! আমরা কী চাইতে পারি? আমাদেরকে যা দিয়েছেন তা তো আপনি আপনার কোনো সৃষ্টিকে দেননি। তারপরও তাদের রব আবার তাদের প্রতি দৃষ্টি দিয়ে একই প্রশ্ন করেন। যখন তারা বুঝল যে, তাদের কিছু চাইতেই হবে, তখন তারা বলে, আমরা চাই আপনি আমাদেরকে দুনিয়ার জীবনে ফেরত পাঠান, যাতে আমরা পুনরায় আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করে শহীদ হতে পারি। শহীদগণের সওয়াবের আধিক্য দেখেই তারা এ কথা বলবে- তখন তাদের মহান রব তাদের বলবেন, আমি এটা পূর্বে নির্ধারিত করে নিয়েছি যে, এখান থেকে আর ফেরার কোনো সুযোগ নেই। (মুসলিম: ১৮৮৭)

আরও পড়ুন: শহীদি মৃত্যু লাভের দোয়া

শহীদদের ৬টি বিশেষ পুরস্কার
হাদিসের বর্ণনায় ছয়টি বিশেষ পুরস্কার দেওয়া হবে শহীদদের। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘শহীদ আল্লাহ পাকের পক্ষ হতে বড়বড় ছয়টি পুরস্কার পাবে। ১. তাঁকে তৎক্ষণাৎ ক্ষমা করে দেওয়া হবে এবং জান্নাতী নিবাস দেখনো হবে। ২. কবরের আজাব মাফ করে দেওয়া হবে। ৩. হাশরের ময়দানে যখন ব্যতিক্রম ছাড়া সবাই সন্ত্রস্ত ও পেরেশান থাকবে, তখন আল্লাহ পাক তাঁকে সেই পেরেশানি ও বিভীষিকা থেকে মুক্ত রাখবেন। ৪. সেদিন তাঁর মাথায় এমন একটি সম্মাননা মুকুট পরানো হবে, যার একেকটি হীরা ও মুক্তা দুনিয়া ও তার সবকিছু থেকে দামী হবে। ৫. স্ত্রী হিসেবে তাঁকে ৭২ জন হুর দেওয়া হবে এবং ৬. তাঁর নিকটজনদের মধ্যে হতে ৭০ জনের ব্যাপারে তাঁর সুপারিশ গ্রহণ করা হবে।’ (সুনানে তিরমিজি: ১৬৬৩)


বিজ্ঞাপন


সর্বপ্রথম জান্নাতে প্রবেশকারীদের অন্তর্ভুক্ত
রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘সবার আগে যে তিনজন জান্নাতে যাবে, তাদেরকে আমার সামনে উপস্থিত করা হয়েছে। ১. শহীদ ২. হারাম ও সংশয়পূর্ণ জিনিস থেকে এবং অপরের নিকট হাত পাতা থেকে দূরে অবস্থানকারী এবং ৩. উত্তমরূপে আল্লাহর ইবাদতকারী ও মনিবদের কল্যাণকামী গোলাম।’ (তিরমিজি: ১৬৪২; ইমাম তিরমিজি বলেন হাদিসটি হাসান)

আরও পড়ুন: যে কারণে সবচেয়ে বেশি মানুষ জান্নাতে যাবে

শহীদরা অবস্থান করবেন জান্নাতের বিশেষ তাঁবুতে
রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘শহীদগণ এক উজ্জ্বল স্থানে জান্নাতের দুয়ারে অবস্থিত একটি নহরের ধারে এক সবুজ তাঁবুর ভেতরে অবস্থান করবে। জান্নাত থেকে সকাল-সন্ধ্যা তাদের রিজিক সেখানে চলে আসবে।’ (মুসনাদে আহমদ: ২৩৯০)

শহীদদের সুপারিশ কবুল করা হবে
যাঁরা আল্লাহর রাস্তায় শাহাদাতবরণ করেছেন, কেয়ামতের দিন তাঁদের সুপারিশ গ্রহণ করা হবে। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘শহীদ তার পরিবারের ৭০ জনের জন্য শাফায়াত করবে এবং তার সুপারিশ কবুল করা হবে।’ (আবু দাউদ: ২৫২২)

শহীদদের মৃত্যুযন্ত্রণা পিঁপড়ার কামড়ের মতো
কোরআন-হাদিসের বর্ণনানুযায়ী, মৃত্যু যন্ত্রণা থেকে কেউ রেহাই পাবে না। কিন্তু সবচেয়ে কম মৃত্যুযন্ত্রণা হবে শহীদের। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘তোমাদের কাউকে পিঁপড়া কামড়ালে যতটুকু কষ্ট অনুভব করো, শহীদের নিহত হওয়ার কষ্ট তার চেয়ে বেশি হবে না।’ (সুনানে নাসায়ি: ৩১৬১)

রাসুলুল্লাহ (স.) সবসময় শহীদি মৃত্যু কামনা করতেন। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, যে‘ সত্তার হাতে আমার প্রাণ তাঁর শপথ! আমি কামনা করি যেন আল্লাহর পথে যুদ্ধ করি। এতে আমাকে শহীদ করা হয়। আবার জীবিত করা হয় আবার শহীদ করা হয়। আবার জীবিত করা হয় আবার শহীদ করা হয়। আবু হুরায়রা (রা.) বললেন, বাক্যটি তিনি তিনবার বলেছেন। এ ব্যাপারে আমি আল্লাহর নামে সাক্ষ্য দিচ্ছি। (সহিহ বুখারি: ৬৭৩৩)

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর