সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

দ্রুত নামাজ পড়লে যে ক্ষতি

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৪ অক্টোবর ২০২৪, ০৭:৫২ পিএম

শেয়ার করুন:

দ্রুত নামাজ পড়লে যে ক্ষতি

নামাজ ফরজ ইবাদত ও ইসলামের অন্যতম স্তম্ভ। নামাজে দাঁড়ানোর অর্থ আল্লাহর দরবারে উপস্থিত হয়ে বিনম্রভাবে তাঁর ইবাদত করা। তাই নামাজ আদায়ে তাড়াহুড়া করা কোনোভাবেই কাম্য নয়। বরং নামাজের সব আবশ্যক বিষয়াবলী ধীরস্থিরভাবে আদায় করা ওয়াজিব। (বুখারি: ৭৯৩; মুসলিম: ৩৯৭)

ইসলামী আইনবিদদের মতে, যে গতিতে পড়লে পবিত্র কোরআনের শব্দাবলী বোঝা যায়, ন্যূনতম সেই গতিতে পবিত্র কোরআন পড়তে হবে। যে গতিতে পড়লে কিছুই বোঝা যায় না, সে গতিতে পড়া বৈধ নয়, এর দ্বারা সওয়াবও হবে না। (ফতোয়ায়ে শামি: ২/৪৭; ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া: ১/১১৭)


বিজ্ঞাপন


সুতরাং দ্রুত নামাজ নয়, বরং ধীরেসুস্থে বিনয়ের সঙ্গে নামাজ পড়া কর্তব্য। আল্লাহ তাআলা কোরআন তেলাওয়াতের পদ্ধতি বর্ণনা করে ইরশাদ করেছেন, وَرَتِّلِ الْقُرْآنَ تَرْتِيلًا ‘এবং কোরআন আবৃত্তি করুন সুবিন্যস্ত ভাবে ও স্পষ্টভাবে।’ (সুরা মুজ্জাম্মিল: ৪)

নামাজে তাড়াহুড়া করা উদাসীনতার পরিচয়। তাফসিরবিদরা বলেছেন, যারা নামাজের সময় অন্য কাজে ব্যস্ত থাকে, তারাই শুধু উদাসীন নয়, উদাসীন লোকদের মধ্যে একদল এমনও আছে, যারা রুকু-সেজদা, ওঠা-বসা যথাযথভাবে করে না। কেরাত, দোয়া ও তাসবিহ যথাযথভাবে পাঠ করে না। কোনো কিছুর অর্থ বুঝে না, বুঝার চেষ্টাও করে না। আজান শোনার পরেও যারা অলসতাবশে এবং নামাজে দাঁড়িয়ে অমনোযোগী থাকে। দায়সারাভাবে নামাজ পড়ে এবং নামাজের বিধি-বিধানগুলো যথাযথভাবে পালন করে না। 

আরও পড়ুন: জীবনে অনেক নামাজ কাজা হয়েছে, করণীয় কী

পবিত্র কোরআনে তাদের ব্যাপারেই ইরশাদ হয়েছে, ‘অতঃপর দুর্ভোগ ওই সব মুসল্লির জন্য, যারা তাদের নামাজ সম্পর্কে  উদাসীন।’ (সুরা মাউন: ৪-৫)  


বিজ্ঞাপন


আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, ‘রাসুল (স.) মসজিদে প্রবেশ করেন। তখন জনৈক ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশ করে নামাজ আদায় শেষে রাসুলুল্লাহ (স.)-কে সালাম দিল। তিনি সালামের জবাব দিয়ে বলেন, তুমি যাও, পুনরায় নামাজ আদায় করো। কেননা তুমি নামাজ আদায় করোনি। এভাবে লোকটি তিনবার নামাজ আদায় করল। রাসুল (স.) তাকে তিনবারই ফিরিয়ে দিলেন। তখন লোকটি বলল, হে আল্লাহর রাসুল! যিনি আপনাকে সত্য সহকারে প্রেরণ করেছেন, তাঁর কসম করে বলছি, এর চাইতে সুন্দরভাবে আমি নামাজ আদায় করতে জানি না। অতএব আমাকে নামাজ শিখিয়ে দিন! অতঃপর রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, যখন তুমি নামাজে দাঁড়াবে তখন তাকবির দেবে। তারপর কোরআন থেকে যা পাঠ করা তোমার কাছে সহজ মনে হয়, তা পাঠ করবে। তারপর ধীরস্থিরভাবে রুকু করবে। অতঃপর সোজা হয়ে দাঁড়াবে। তারপর ধীরস্থিরভাবে সেজদা করবে। অতঃপর মাথা উঠিয়ে সোজা হয়ে বসবে। আর প্রত্যক নামাজ এভাবে আদায় করবে।’ (বুখারি: ৭৫৭)

অন্য হাদিসে রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, ‘মানুষের মধ্যে সর্বাপেক্ষা বড় চোর ওই ব্যক্তি যে তার নামাজ চুরি করে। সাহাবিরা জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! সে কীভাবে নামাজ চুরি করে? তিনি বলেন, সে নামাজে রুকু ও সেজদা পূর্ণ করে না।’ (মুসনাদে আহামদ: ২২৬৯৫)

আরও পড়ুন: যে ৬ কারণে সাহু সেজদা করতে হয়

যারা যত্নসহকারে একাগ্রতার সঙ্গে সময়মতো শুদ্ধভাবে নামাজ আদায় করেন, তাদের সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, যা আল্লাহ তাআলা (বান্দার জন্য) ফরজ করেছেন, যে ব্যক্তি এ সালাতের জন্য ভালোভাবে অজু করবে, সঠিক সময়ে আদায় করবে এবং এর রুকু ও খুশুকে পরিপূর্ণরূপে করবে, তার জন্য আল্লাহর ওয়াদা রয়েছে যে, তিনি তাকে ক্ষমা করে দেবেন। আর যে তা না করবে, তার জন্য আল্লাহর ওয়াদা নেই। ইচ্ছা করলে তিনি ক্ষমা করে দিতে পারেন, আর ইচ্ছা করলে শাস্তিও দিতে পারেন। (মেশকাত: ৫৭০)

আম্মার ইবনে ইয়াসির (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (স.)-কে বলতে শুনেছি, এমন লোকও আছে যারা নামাজ আদায় করা সত্ত্বেও নামাজের রুকন ও শর্তগুলো সঠিকভাবে আদায় না করায় এবং নামাজে পরিপূর্ণ একাগ্রতা ও খুশু-খুজু না থাকায় তারা নামাজের পরিপূর্ণ সাওয়াব পায় না। বরং তারা ১০ ভাগের এক ভাগ সওয়াব পায়, কেউ ৯ ভাগের এক ভাগ পায়, কেউ ৮ ভাগের এক ভাগ, ৭ ভাগের এক ভাগ, ৬ ভাগের এক ভাগ, ৫ ভাগের এক ভাগ, ৪ ভাগের এক ভাগ, ৩ ভাগের এক ভাগ বা অর্ধাংশ সাওয়াব পেয়ে থাকে। (আবু দাউদ: ৭৯৬)

আরও পড়ুন: মসজিদে হট্টগোল, নবীজি যা বলেছেন

তাই আমাদের উচিত পূর্ণ মনোযোগের সঙ্গে নামাজ আদায় করা। এর সহজ উপায় হলো, প্রতিটি নামাজকে জীবনের শেষ নামাজ মনে করা। কারণ, আল্লাহ আমাদের মনের অবস্থা জানেন। একটি হাদিস থেকে বোঝা যায় যে, মহান আল্লাহ আমাদের নামাজের মান অনুযায়ী আমাদের প্রতিদান দেবেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘অবশ্যই মুমিনরা সফল হয়েছে, যারা তাদের নামাজে বিনয়াবনত।’ (সুরা মুমিনুন: ১-২)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সহিহ সুন্নাহ অনুযায়ী নামাজের হক যথাযথ আদায় করার তাওফিক দান করুন। নবীজির দৃষ্টিতে ‘বড় চোর’ হওয়া থেকে হেফাজত করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর