সাহু সেজদা বা সেজদায়ে সাহু অর্থ ভুলের সেজদা। নামাজের কিছু ভুলের ক্ষতিপূরণ হিসেবে নামাজ শেষ করার আগে যে দুটি অতিরিক্ত সেজদা আদায় করতে হয়, তা-ই সাহু সেজদা। এই সেজদার মাধ্যমে মূলত ভুল হওয়া নামাজ বিশুদ্ধ নামাজে রূপ নেয়। শরয়ি দৃষ্টিকোণ থেকে এই সেজদা ওয়াজিব। মৌলিকভাবে ছয় কারণে সাহু সেজদা দিতে হয়। সেগুলো হলো—
১. কোনো রুকন আগে করে ফেলা।
বিজ্ঞাপন
২. কোনো রুকন নির্দিষ্ট সময় ও নিয়ম থেকে দেরিতে আদায় করা।
৩. কোনো রুকন বারবার আদায় করা।
আরও পড়ুন: দীর্ঘদিনের কাজা নামাজ আদায়ের সহজ উপায় কী
৪. কোনো ওয়াজিব পরিবর্তন করে ফেলা। যেমন জোরে পড়া বিষয়কে আস্তে পড়া।
বিজ্ঞাপন
৫. কোনো ওয়াজিব ছেড়ে দেওয়া।
৬. এমন কোনো সুন্নত ছেড়ে দেওয়া যা পুরো নামাজের নিয়মকেই উলটপালট করে দেয়। যেমন প্রথম বৈঠকে তাশাহুদ ছেড়ে দেওয়া।
(আল মুহিতুল বুরহানি: ১/৫০১; গুনিয়াতুল মুসতামলি, পৃ-৪৫৬-৪৫৭; ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া: ১/১২৫; বাদায়েউস সানায়ে: ১/৪১৭; তাবয়িনুল হাকায়েক: ১/৪৭২; মাজমাউল আনহুর: ১/২১৯)
উল্লেখিত ভুলগুলোর কারণেই মূলত সাহু সেজদা আদায় করতে হয়। ভুলগুলো হওয়ার পর সাহু সেজদা ছাড়া নামাজ শেষ করলে ওই নামাজ পুনরায় পড়তে হবে।
উদাহরণস্বরূপ
ফরজের দুই রাকাত বা এক রাকাতে কেরাত মেলাতে ভুলে গেলে সাহু সিজদা দিতে হবে। (নাসায়ি: ১২৪৩)
তিন বা চার রাকাতবিশিষ্ট নামাজে প্রথম বৈঠক করতে ভুলে গেলে, তা ফরজ নামাজ হোক বা নফল, সেজদায়ে সাহু দিতে হবে। (আবু দাউদ: ৮৮২)
তাশাহুদ পড়তে ভুলে গেলে সাহু সেজদা দিতে হবে। (নাসায়ি: ১২৪৩)
আরও পড়ুন: নামাজ আল্লাহর কাছে গৃহীত হওয়ার জন্য ৫ বিষয় খেয়াল রাখবেন
বিতির নামাজের তৃতীয় রাকাতে রুকুর আগে কুনুত পড়তে ভুলে গেলে সাহু সেজদা দিতে হবে। (বায়হাকি: ৪০৪২)
প্রথম বৈঠকে তাশাহুদের সঙ্গে দরুদ ইত্যাদি পড়ে ফেললে সাহু সেজদা দিতে হবে। (মুসলিম: ৮৯৫)
ফরজের প্রথম দুই রাকাতে বা কোনো এক রাকাতে সুরায়ে ফাতেহা পড়তে ভুলে গেলে অথবা নফল ও বিতিরের যেকোনো রাকাতে ভুলক্রমে সুরায়ে ফাতেহা না পড়লে সাহু সেজদা ওয়াজিব হবে। (মুসলিম: ৮৯৩)
তবে, ইচ্ছাকৃতভাবে নামাজের কোনো ওয়াজিব আমল ছেড়ে দিলে সেজদায়ে সাহুর মাধ্যমে নামাজ পূর্ণ হবে না। বরং এজন্য গুনাহগার হতে হবে এবং নামাজও নষ্ট হয়ে যাবে। তাই ওই নামাজ পুনরায় আদায় করতে হবে। সেইসঙ্গে আল্লাহর কাছে তাওবাও করতে হবে।
সাহু সেজদার নিয়ম হলো—শেষ বৈঠকে তাশাহুদ পড়া শেষ করে ডান দিকে সালাম ফেরাবে। তারপর তাকবির বলে নামাজের মতো দুটি সেজদা করে বসে যাবে এবং তাশাহুদ, দরুদ, দোয়া মাসুরা পড়ে সালাম ফেরাবে। (মুসনাদে আহমদ: ১৮১৮৮, বুখারি: ১১৫০, ১১৫৩)