একজন মুমিনের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আমল হলো নামাজ। দিনে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ যথাসময়ে আদায় করা ফরজ। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘নির্ধারিত সময়ে নামাজ আদায় করা মুমিনের অবশ্য কর্তব্য।’ (সুরা নিসা: ১০৩)
মুসলিম উম্মাহর সব বরেণ্য মুজতাহিদ ইমাম এ ব্যাপারে একমত যে ফরজ নামাজ নির্ধারিত সময়ে আদায় করতে না পারলে পরে তা কাজা করা আবশ্যক। ইমাম কুরতুবি (রহ.) বলেন, সব আলেম এ কথার ওপর ঐকমত্য পোষণ করেন যে জেনে-শুনে ইচ্ছাকৃতভাবে নামাজ পরিত্যাগ করলে তা কাজা করা জরুরি। (তাফসিরে কুরতুবি: ১/১৭৮)
বিজ্ঞাপন
শাফেয়ি মাজহাবের প্রসিদ্ধ আলেম মুহাম্মদ ইবনে আবদুর রহমান (রহ.) বলেন, ছুটে যাওয়া নামাজের কাজা করা বিষয়ে সব ফকিহ একমত পোষণ করেন। (রহমতুল উম্মাহ, পৃষ্ঠা-৪৬) শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়া (রহ.) বলেন, যদি কারো দায়িত্বে কাজা নামাজের পরিমাণ অনেক বেশি হয়, তবে সুন্নত নামাজে লিপ্ত হওয়ার চেয়ে ছুটে যাওয়া ফরজ নামাজগুলোর কাজা করাই উত্তম। (ফতোয়া ইবনে তাইমিয়া: ২২/১০৪)
জীবনে না পড়া নামাজের জন্য তাওবা কোনো সমাধান নয়। বরং কাজা আদায় করতেই হবে। এ কারণেই হাদিসে দেখা যায়, রাসুল (স.) নামাজ কাজা হলে তা আদায় করে নিতেন ও অন্যকে আদায় করতে বলতেন। রাসুল (স.) বলেন- مَنْ نَسِيَ صَلَاةً فَلْيُصَلِّهَا إِذَا ذَكَرَهَا، لَا كَفَّارَةَ لَهَا إِلَّا ذَلِكَ ‘কেউ যদি নামাজের কথা ভুলে যায়, সে যেন স্মরণ হওয়া মাত্রই তা আদায় করে নেয়। কেননা, তার কাফফারা একমাত্র সেই নামাজই।’ (সহিহ মুসলিম: ৬৮৪)
আরও পড়ুন: ফজরের কাজা কখন পড়বেন, সুন্নত পড়তে হবে কি?
মৃত্যুর আগে কাজা নামাজের ফিদিয়া দেওয়ার ওসিয়ত করা জরুরি। নামাজের ফিদিয়া হলো- প্রতিদিনকার কাজা করা বিতিরসহ ছয় ওয়াক্ত নামাজ হিসেব করে প্রত্যেক ওয়াক্তের জন্য পৌনে দুই সের গম বা আটা অথবা এর বাজার মূল্য গরীব মিসকিনকে মালিক বানিয়ে দান করে দিতে হবে। অথবা প্রতি ওয়াক্তের বদলে একজন গরীবকে দুই বেলা তৃপ্তি সহকারে খানা খাওয়াতে হবে। যা সদকায়ে ফিতর এর টাকা পরিমাণ হয়। (ফতোয়ায়ে শামি: ২/৭২)
বিজ্ঞাপন
আপনি বালেগ হওয়ার পর থেকে কোন ওয়াক্তের ফরজ নামাজ এবং বিতির নামাজ কী পরিমাণ ছুটেছে- প্রথমে প্রবল ধারণার ভিত্তিতে এর একটি হিসাব বের করবেন। এরপর উক্ত নামাজগুলো আদায়ের ক্ষেত্রে এভাবে নিয়ত করবেন- ‘আমার জিম্মায় থাকা প্রথম ফজর (উদাহরণস্বরূপ) নামাজের কাজা পড়ছি’। এভাবে প্রত্যেক নামাজের জন্য নিয়ত করে এ কাজা নামাজগুলো পড়তে থাকবেন। পাশাপাশি ইচ্ছাকৃত এ নামাজগুলো কাজা করার কারণে আল্লাহ তাআলার কাছে কায়মনোবাক্যে তওবা-ইস্তেগফার করবেন। (আততাজনিস ওয়াল মাজিদ: ২/৬৯; মুখতারাতুন নাওয়াজেল: ১/৩৪৯; ইমদাদুল ফাত্তাহ, পৃ-৪৯৪; হাশিয়াতুত তাহতাবি আলাল মারাকি, পৃ-২৪৩)
আরও পড়ুন: ইশরাক ও চাশতের নামাজ কখন পড়তে হয়, ফজিলত কী?
প্রতি ওয়াক্তে কয়েক ওয়াক্তের কাজা আদায় করলেও সমস্যা নেই। এছাড়া সুবিধামতো যখন যে নামাজের কাজা আদায়ের সুযোগ হবে, তখনই তা আদায় করা যাবে। সুন্নত নামাজের কাজা নেই, কেবল ফরজ ও বিতিরের নামাজেরই কাজা আদায় করা যায়। (বুখারি: ৫৯৬; আল ইসতিজকার: ১/৩০২; আদ্দুররুল মুখতার, সাঈদ, খণ্ড: ২, পৃষ্ঠা-৬৮; ফতোয়া দারুল উলুম, জাকারিয়া, খণ্ড: ৪, পৃষ্ঠা-৩৩২)
উল্লেখ্য, কোনো মুসলমানের জিম্মায় ৬ ওয়াক্ত নামাজের কম কাজা থাকলে ফিকহের পরিভাষায় তাকে “সাহেবে তারতিব” বলা হয়। এরকম ব্যক্তির ওপর সিরিয়াল ঠিক রাখা আবশ্যক। অর্থাৎ আগে কাজা নামাজ আদায় করতে হবে তারপর ওয়াক্তিয়া আদায় করবে। কাজার ক্ষেত্রেও তাকে ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে হবে। সেই হিসেবে কাজা নামাজ আদায় করার আগেই যদি পরবর্তী নামাজের সময় হয়ে যায় তাহলে প্রথমে কাজা আদায় করা আবশ্যক। তারপর ওয়াক্তিয়া নামাজ আদায় করবে। আর যদি ৬ ওয়াক্ত থেকে বেশি নামাজ কাজা হয়ে থাকে, তাহলে তারতিব বা সিরিয়াল রক্ষা করা জরুরি নয়। সুতরাং সে কাজা আদায় না করেই নতুন আসা ওয়াক্তিয়া নামাজ পড়তে পারবে। ব্যতিক্রম করলে ওয়াজিব তরকের গুনাহ হবে। (আলমুহিতুল বুরহানি: ২/৩৪৭-৩৫০; আল বাহরুর রায়েক: ২/৮০; ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া: ১/১২২; ফতোয়ায়ে আলমগিরি: ১/১২১; বাদায়েউস সানায়ে: ১/৫৬০-৫৬৩)