বন্ধু নির্বাচনে খুব সতর্ক থাকতে হয় একজন মুমিনকে। সুন্দর, প্রভাবশালী কিংবা সম্পদশালী বিবেচনায় বন্ধুত্ব করার যে প্রবণতা, ইসলামে তা নিন্দনীয়। বরং আল্লাহওয়ালাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে কোরআন ও হাদিসে।
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন- ‘আর তুমি নিজেকে ধৈর্যশীল রাখো তাদের সঙ্গে, যারা সকাল-সন্ধ্যায় তাদের রবকে ডাকে, তার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে এবং দুনিয়ার জীবনের সৌন্দর্য কামনা করে তোমার দুই চোখ যেন তাদের থেকে ঘুরে না যায়। আর ওই ব্যক্তির আনুগত্য করো না, যার অন্তরকে আমি আমার জিকির থেকে গাফেল করে দিয়েছি এবং যে তার প্রবৃত্তির অনুসরণ করেছে এবং যার কর্ম বিনষ্ট হয়েছে।’ (সুরা কাহাফ: ২৮)
বিজ্ঞাপন
কেয়ামতের দিন অসৎ বন্ধুদের কারণে মানুষ আফসোস করে বলবে— ‘হায়, দুর্ভোগ আমার, আমি যদি অমুককে বন্ধুরূপে গ্রহণ না করতাম! আমাকে তো সে বিভ্রান্ত করেছিল আমার কাছে উপদেশ পৌঁছার পর। আর শয়তান তো মানুষের জন্য মহাপ্রতারক।’ (সুরা ফুরকান: ২৮-২৯)
কেয়ামতের কঠিন দিনে কিছু বন্ধু ছাড়া বাকি সব বন্ধু শত্রু হয়ে যাবে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন- اَلۡاَخِلَّآءُ یَوۡمَئِذٍۭ بَعۡضُهُمۡ لِبَعۡضٍ عَدُوٌّ اِلَّا الۡمُتَّقِیۡنَ ‘পরহেজগার বন্ধু ছাড়া অন্য সকল বন্ধু কেয়ামতের দিন আপনার শত্রু হয়ে যাবে।’ (সুরা জুখরুফ: ৬৭)
আরও পড়ুন: মুসলিম হয়েও জান্নাতে যাবেন না যারা
এই আয়াতের তাফসিরে এসেছে, যাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব হয় কেবল কুফুরি ও পাপাচারের ভিত্তিতে, কেয়ামতের দিন তারা একে অপরকে দোষারোপ করবে এবং পরস্পরের শত্রু হয়ে যাবে। পক্ষান্তরে ঈমানদার ও আল্লাহভীরু লোকদের পারস্পরিক বন্ধুত্ব ও ভালবাসা যেহেতু আল্লাহর সন্তুষ্টির ভিত্তিতে হয়, আর এই দ্বীন ও ঈমানই হল কল্যাণ ও সওয়াব লাভের মাধ্যম, সেহেতু তাঁদের এই বন্ধুত্বে কোনো বিচ্ছেদ ঘটবে না। আখেরাতেও তাঁদের এই বন্ধুত্ব অটুট থাকবে, যেমন দুনিয়াতে ছিল।
বিজ্ঞাপন
অতএব, কারো সঙ্গে সম্পর্ক গড়ার ক্ষেত্রে আগে যাচাই করা উচিত, লোকটি ঈমানদার ও পরহেজগার কি না। এ ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করতে গিয়ে মহানবী (স.) বলেন— ‘মানুষ তার বন্ধুর রীতিনীতি অনুসরণ করে। কাজেই তোমাদের প্রত্যেকেই যেন লক্ষ করে, সে কার সঙ্গে বন্ধুত্ব করছে।’ (আবু দাউদ: ৪৮৩৩) অন্য হাদিসে এসেছে, ‘তুমি মুমিন ব্যক্তি ছাড়া অন্য কারো সঙ্গী হবে না এবং তোমার খাদ্য যেন আল্লাহভীরু মানুষ খায়।’ (আবু দাউদ: ৪৮৩২)
কোরআন হাদিসের শিক্ষা হলো- যারা ঈমানদার, ধর্মপ্রাণ, সত্যবাদী, সদাচারী, সৎকাজে অভ্যস্ত এবং নীতিবান তাদের সঙ্গেই সম্পর্ক থাকবে মুমিনদের। নবীজি বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য কাউকে ভালোবাসল, আল্লাহর জন্য কাউকে ঘৃণা করল, আল্লাহর জন্য কাউকে দান করল এবং আল্লাহর জন্য কাউকে দান করা থেকে বিরত থাকল, সে ব্যক্তি নিজ ঈমানকে পূর্ণতা দান করল।’ (আবু দাউদ: ৪৬৮৩)
আরও পড়ুন: নিজের সংশোধনে যে দোয়া করবেন
ইসলামি স্কলারদের মতে, যারা মহান আল্লাহর জন্য পরস্পরকে ভালোবাসে, তাঁর খাতিরে সমবেত হয়, পরস্পরের খবরাখবর নেয় ও পারস্পরিক যোগাযোগ বহাল রাখে, আল্লাহর ভালোবাসাই তাদেরই প্রাপ্য। আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, ‘এক ব্যক্তি তার কোনো (মুসলমান) ভাইয়ের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য অন্য গ্রামে রওনা হয়, পথে আল্লাহ তার জন্য একজন ফেরেশতা বসিয়ে দেন। অতঃপর তিনি এ-ও বলেন যে, (ফেরেশতা তাকে বলেন) নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাকে এরূপ ভালোবাসেন, যেরূপ তুমি আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে অমুক ব্যক্তিকে ভালোবাসো।’ (মুসলিম: ২৫৬৭)
পরকালেও এরকম বন্ধুরা সবাই পাশে থাকবে। তাদেরকে আল্লাহ তাআলা বলবেন- یٰعِبَادِ لَا خَوۡفٌ عَلَیۡكُمُ الۡیَوۡمَ وَ لَاۤ اَنۡتُمۡ تَحۡزَنُوۡنَ ‘হে আমার বান্দাগণ! আজি তোমাদের কোনো ভয় নেই এবং তোমরা চিন্তিতও হবে না।’ (সুরা জুখরুফ: ৬৮)

