কঠিন কেয়ামতের দিন ভয়ে ও আতঙ্কে সবাই ইয়া নাফসি, ইয়া নাফসি করতে থাকবে। ‘বিচার দিবসে সূর্যকে মানুষের কাছে আনা হবে, তা হবে তাদের থেকে এক ফরসাখ (তিন মাইল) দূরে। আমল অনুযায়ী ঘামের মধ্যে অবস্থান করবে মানুষ। কারো ঘাম হবে টাখনু সমান, কারো হাঁটু সমান, কারো কোমর সমান, কারো মুখ সমান (মেশকাত পৃ: ৪৮৩)। ‘হাশরের দিন ভয়ে প্রত্যেকে বলতে থাকবে—আমাকে বাঁচান, আমাকে বাঁচান। মুহাম্মদ (স.) শুধু উম্মত নিয়ে চিন্তা করবেন’। (সহিহ বুখারি: ২৭১২)
কিন্তু এই কঠিন দিনেও কিছু মানুষের বিচার হবে না। হাদিস অনুযায়ী, বিনা হিসেবেই তারা জান্নাতে যাবেন। হাদিসে এসব মানুষের সংখ্যা বলা হয়েছে ৭০ হাজার। কারা সেই ৭০ হাজার সৌভাগ্যবান মানুষ? এ সম্পর্কে হাদিসে এসেছে, একদিন রাসুল (স.) ইরশাদ করেন, ‘আমার কাছে সব উম্মতের লোকদের উপস্থাপন করা হলো। আমি দেখলাম, কোনো নবীর সঙ্গে মাত্র সামান্য ক’জন (তিন থেকে সাতজন অনুসারী) আছে। কোনো নবীর সঙ্গে আছে একজন বা দুজন। কোনো নবীর সঙ্গে দেখলাম কেউ নেই! ইতোমধ্যে বড় একটি জামাত আমার সামনে পেশ করা হলো। আমি মনে করলাম, এটাই বুঝি আমার উম্মতের জামাত। কিন্তু আমাকে বলা হলো যে, এটা হলো মুসা (আ.) ও তাঁর উম্মতের জামাত; আপনি অন্য দিগন্তে তাকান।
বিজ্ঞাপন
অতঃপর আমি সেই দিকে তাকাতেই এক বিরাট জামাত দেখতে পেলাম। আমাকে বলা হলো—এরা আপনার উম্মত। আর তাদের সঙ্গে এমন ৭০ হাজার লোক আছে, যারা বিনা হিসাবে ও বিনা আজাবে সরাসরি জান্নাতে প্রবেশ করবে। এ কথা বলে তিনি (আল্লাহর রাসুল) উঠে নিজ ঘরে প্রবেশ করলেন। এদিকে লোকেরা (উপস্থিত সাহাবিরা) ওসব জান্নাতি লোকদের ব্যাপারে আলোচনা শুরু করে দিলো, (কারা হবে সেই লোক) যারা বিনা হিসাবে ও বিনা আজাবে জান্নাতে প্রবেশ করবে!
আরও পড়ুন: জান্নাতের সুখ শান্তি কেমন হবে
কেউ কেউ বলল, সম্ভবত ওসব ব্যক্তি তারাই, যারা আল্লাহর রাসুল (স.)-এর সাহাবা। কিছু লোক বলল, বরং সম্ভবত ওরা হলো তারা, যারা ইসলামে জন্মগ্রহণ করেছে এবং আল্লাহর সঙ্গে কখনো কাউকে শরিক করেনি। আরো অনেকে অনেক কিছু বলল। কিছুক্ষণ পরে আল্লাহর রাসুল (স.) তাদের কাছে বের হয়ে এসে বলেন, তোমরা কী ব্যাপারে আলোচনা করছ?
তারা ব্যাপারটি খুলে বললে আল্লাহর রাসুল (স.) বলেন, (বিনা বিচারে জান্নাতি লোক) হলো তারা, যারা—
বিজ্ঞাপন
১. দাগ কেটে রোগের চিকিৎসা করায় না,
২. অন্যের কাছে রুকইয়া বা ঝাড়ফুঁক করে দিতে বলে না এবং
৩. কোনো জিনিসকে অশুভ লক্ষণ বলে মনে করে না, বরং তারা শুধু আল্লাহর ওপর ভরসা রাখে।
আরও পড়ুন: জন্মতারিখে বিয়ে করা কি মাকরুহ?
এ কথা শুনে উক্কাশাহ ইবনু মিহসান নামক একজন সাহাবি উঠে দাঁড়ালেন এবং বলেন, (হে আল্লাহর রাসুল!) আপনি আমার জন্য দোয়া করুন, আল্লাহ যেন আমাকে তাদের দলভুক্ত করে দেন! তিনি (স.) বলেন, তুমি তাদের মধ্যে একজন। অতঃপর আরেক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বলল, আপনি আমার জন্যও দোয়া করুন, যেন আল্লাহ আমাকেও তাদের দলভুক্ত করে দেন। তিনি বলেন, উক্কাশাহ (এ ব্যাপারে) তোমার অগ্রগামী হয়ে গেছে।’ (সহিহ বুখারি: ৫৭০৫, ৩৪১০; তিরমিজি: ২৪৪৬)
উল্লেখ্য, মুহাদ্দিসিনে কেরামের মতে, ৭০ হাজার বলতে বরাবর ৭০ হাজার হতে হবে এমন নয়। অগণিত সংখ্যা বোঝাতেও হাদিসে ৭০ হাজার শব্দের প্রয়োগ হয়েছে। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে ঝাড়ফুঁক, অশুভ লক্ষণ ইত্যাদি কাজ থেকে বিরত থাকার এবং মহান রবের ওপর ভরসা করার তাওফিক দান করুন। আমিন।