রোববার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

হাদিসের বর্ণনায় ফিতনার যুগে মানুষের অবস্থা

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭:৫২ পিএম

শেয়ার করুন:

হাদিসের বর্ণনায় ফিতনার যুগে মানুষের অবস্থা

হাদিসের বর্ণনানুযায়ী, কেয়ামতের আগে পৃথিবীতে ফিতনা ছড়িয়ে পড়বে। মানুষের মধ্যে মনুষ্যত্ব থাকবে না। মায়া-দয়া উঠে যাবে। আপন মানুষের কাছেও মানুষ নিরাপদ থাকবে না। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, যখন কেয়ামত সন্নিকটে হবে, আমল কমে যাবে, অন্তরে কৃপণতা ঢেলে দেওয়া হবে এবং হারজ বেড়ে যাবে। সাহাবারা জিজ্ঞেস করলেন, হারজ কী? তিনি বলেন, হত্যা, হত্যা। (বুখারি: ৬০৩৭)

এমনকি হত্যাকারীও জানবে না যে সে কেন হত্যা করেছে, যাকে হত্যা করা হয়েছে সেও বুঝে উঠতে পারবে না যে তাকে ঠিক কেন হত্যা করা হচ্ছে। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুল (স.) বলেছেন, সেই সত্তার শপথ! যাঁর হাতে আমার জীবন, দুনিয়া ধ্বংস হবে না যে পর্যন্ত না মানুষের কাছে এমন এক যুগ আসে, যখন হত্যাকারী জানবে না যে কি দোষে সে অন্যকে হত্যা করেছে এবং নিহত লোকও জানবে না যে কি দোষে তাকে হত্যা করা হচ্ছে। জিজ্ঞেস করা হলো, কিভাবে এমন অত্যাচার হবে? তিনি জবাবে বলেন, সে যুগটা হবে হত্যার যুগ। এরূপ যুগের হত্যাকারী ও নিহত ব্যক্তি উভয়েই জাহান্নামি হবে। (মুসলিম: ৭১৯৬)


বিজ্ঞাপন


আরও পড়ুন: যে আমল করলে জাহান্নামে যেতে হবে না

এছাড়াও হাদিসের ভাষ্যমতে, ফিতনার যুগে মূর্খতা বৃদ্ধি পাবে, লোকেরা নামাজে ডাকাতি করবে, আমানতের খেয়ানত করা হবে, সুদের লেনদেন ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়বে, মানুষ মিথ্যাকে হালাল মনে করবে, দুনিয়ার স্বার্থে দ্বীন বিক্রি করে দেবে, আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে খারাপ আচরণ করবে, ইনসাফ উঠে যাবে, অপবাদ বৃদ্ধি পাবে, বৃষ্টি হওয়া সত্ত্বেও পরিবেশ উষ্ণ থাকবে, নীচ লোকেরা সম্পদশালী হবে ও বিলাসী জীবনযাপন করবে, ভদ্রলোকেরা নিগৃহীত হবে।

নেতৃবর্গ অত্যাচারী হবে, আলেম ও কোরআন তেলাওয়াতকারীও বদকার ও ফাসেক হবে, রুপার মূল্য বেড়ে যাবে, আমল কমে যাবে কিন্তু মসজিদকে মানুষ কারুকার্যময় করবে, মদ্যপান বেড়ে যাবে, শরিয়তের দণ্ডবিধিকে অকার্যকর করা হবে। দাসী স্বীয় মুনিবকে জন্ম দিবে; অর্থাৎ সন্তান মায়ের ওপর কর্তৃত্ব করবে এবং এরূপ ব্যবহার করবে- যেরূপ মুনিব দাসীর সঙ্গে ব্যবহার করে, পুরুষরা মহিলাদের বেশ ও মহিলারা পুরুষদের বেশভূষা ধারণ করবে, দূর থেকে দেখে বোঝা যাবে না- পুরুষ না মহিলা।

গায়রুল্লাহর নামে শপথ করা হবে, শুধু পরিচিত লোকদের সালাম দেওয়া হবে। জাকাতকে জরিমানা মনে করা হবে, সমাজের সবচেয়ে নীচ ও নিকৃষ্ট ব্যক্তিকে নেতা বানানো হবে, মানুষ নিজের পিতার অবাধ্য হবে, কিন্তু স্ত্রীর আনুগত্য করবে। অশ্লীল পোষাক পরা স্বাভাবিক বিষয় হবে।


বিজ্ঞাপন


বদকার লোকেরা মসজিদে শোরগোল করবে, গায়িকাদের সম্মান বেড়ে যাবে, বাদ্যযন্ত্রের বিশেষ যত্ন নেওয়া হবে, মহিলাদের চুল হবে উটের কুঁজের মতো (অর্থাৎ চুলকে ফুলিয়ে উঁচু করে বাঁধা), পবিত্র কোরআন গানের সুরে তেলাওয়াত করা হবে, লোকজন বাহনে চড়ে মসজিদে আসবে, উম্মতের প্রথম যুগের লোকদের ওপর অপবাদ আরোপ করা হবে, অনিষ্টের ভয়ে মানুষকে সম্মান করা হবে ইত্যাদি শেষ যুগের উল্লেখযোগ্য ফিতনা।

আরও পড়ুন: অপবাদের ভয়ংকর শাস্তি

নবীজি (স.) উম্মতদের শেষ যুগের ফিতনার ভয়াবহতা থেকে রক্ষা পেতে করণীয় কী হবে, সে বিষয়েও নির্দেশনা দিয়েছেন নবীজি (স.)। ফিতনার সময় নিজেকে নেক আমলে ব্যস্ত রাখা এবং একান্ত প্রয়োজন ছাড়া বাইরের পরিবেশে না বের হতে বলেছেন প্রিয়নবী (স.)। ইরশাদ হয়েছে, অচিরেই এমন ফিতনার আত্মপ্রকাশ হবে, বসে থাকা ব্যক্তি দাঁড়িয়ে থাকা ব্যক্তি হতে উত্তম হবে। আর দাঁড়িয়ে থাকা ব্যক্তি চলমান ব্যক্তি হতে উত্তম হবে। আর চলমান ব্যক্তি দ্রুতগামী ব্যক্তি হতে ভালো থাকবে। (মুসলিম: ৭১৩৯)

অন্য হাদিসে এসেছে, ‘ফিতনার সময় ঈমানদারের করণীয় হলো- সর্বদা চুপ থাকা। এত পরিমাণ চুপ থাকা, যার কারণে কোনো ফিতনা তাকে আকৃষ্ট করতে না পারে। (আল ফিতান: ৭৩৫) হাদিসে আরও এসেছে, ‘যে ব্যক্তি ফিতনার দিকে তাকাবে, ফিতনা তাকে ঘিরে ধরবে। তখন কেউ যদি কোনো আশ্রয়ের জায়গা কিংবা নিরাপদ জায়গা পায়, তাহলে সে যেন আত্মরক্ষা করে।’(বুখারি: ৭০৮১)

এছাড়াও ফিতনা থেকে বাঁচার জন্য আল্লাহর কাছে অধিক পরিমাণে দোয়া করতে হবে। হুজাইফা (রা.) বলেছেন, আল্লাহর রাসুল (স.) বলেছেন, মানুষের ওপর এমন একটা যুগ আসবে যখন কেউ রক্ষা পাবে না, সে ছাড়া যে দোয়া করছে, ডুবন্ত মানুষের দোয়ার মতো। (মুসান্নাফ ইবনে আবি শায়বা: ৩৬৪৪৭)

আরও পড়ুন: যে দোয়া পড়লে দুনিয়া-আখেরাতে আল্লাহই যথেষ্ট

অর্থাৎ নদীতে ডুবে যাওয়া ব্যক্তি যেভাবে বাঁচার আকুতি নিয়ে দোয়া করতে থাকে, সেভাবে দোয়া করা। পাশাপাশি নিজের নজরের হেফাজত করা। নারী ফিতনা ও সম্পদের ফিতনাসহ সব ধরণের ফিতনার বিষয় জানাতেও বের না হওয়া। ফিতনার দিকে দৃষ্টি বা উঁকি না দেওয়া এবং ফিতনার দিকে না যাওয়া। সবসময় সৎ কাজ আঁকড়ে ধরা, অসৎ কাজ পরিহার করা, সর্বসাধারণকে এড়িয়ে মুত্তাকিদের সঙ্গে চলাফেরা করা এবং পাপাচারীদের সঙ্গ ত্যাগ করা ফিতনাকালীন সময়ের গুরুত্বপূর্ণ আমল।

রাসুল (স.) বলেছেন, ‘যখন ফিতনা তীব্র আকার ধারণ করবে তখন তোমরা সৎ কাজকে মজবুতভাবে আঁকড়ে ধরবে এবং অসৎ কাজ হতে বিরত থাকবে। তোমাদের মাঝে বিশেষ লোক যারা রয়েছে তাদের প্রতি মনোনিবেশ করবে এবং সর্বসাধারণকে এড়িয়ে চলবে।’ (আল ফিতান: ৭২১)

ফিতনার যুগে কেউ যদি জান্নাতের উপযুক্ত হতে চায়, তার জন্য বিশেষ তিনটা উপায় রয়েছে। হজরত উকবা ইবনে আমির (রা.) বলেন, একদা আমি রাসুলুল্লাহর (স.) সঙ্গে সাক্ষাৎ করলাম এবং বললাম, সেসময় নাজাতের উপায় কী? তিনি বললেন, নিজের জিহ্বা আয়ত্তে রাখবে, নিজের ঘরে পড়ে থাকবে এবং নিজের পাপের জন্য রোদন করবে। (মেশকাত: ৪৮৩৭)

আরও পড়ুন: ইচ্ছাকৃত অনিচ্ছাকৃত সব গুনাহ থেকে ক্ষমা পাওয়ার দোয়া

এক কথায় কোরআন-সুন্নাহ আঁকড়ে ধরাই হবে নিজের জন্য সর্বোৎকৃষ্ট নিরাপত্তা, যা মানুষের মধ্যে না থাকলে যেকোনো সময় ফিতনা গ্রাস করে ফেলতে পারে। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘নিশ্চয় আমি তোমাদের মাঝে এমন বস্তু রেখে যাচ্ছি, তোমরা যদি তা আঁকড়ে ধরে থাকো, তবে কখনই পথভ্রষ্ট হবে না। আর তা হলো আল্লাহর কিতাব ও নবীর সুন্নত।’ (আত-তারগিব ওয়াত তাহরিব: ৪০)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে কঠিন ফিতনার দিনে ঈমান ঠিক রাখার তাওফিক দান করুন। সহিহ সুন্নাহর ওপর যথাযথ আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর