শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ঢাকা

আল্লাহ ‘সফল’ ঘোষণা করেছেন যাদের

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৪ জানুয়ারি ২০২৩, ০৪:৪৫ পিএম

শেয়ার করুন:

আল্লাহ ‘সফল’ ঘোষণা করেছেন যাদের

প্রকৃত সফল কে? এর সঠিক উত্তর রয়েছে একজন মুমিনের কাছে। কারণ তার কাছে রয়েছে পবিত্র আল-কোরআন। আল্লাহ তাআলা সেই কোরআনে ঘোষণা করেছেন ‘অবশ্যই মুমিনগণ সফল হয়েছে’ (সুরা মুমিনুন: ০১)

প্রশ্ন হলো—সেই সফল মুমিন কারা? শুধু আল্লাহ আছেন বলে স্বীকার করলেই কি প্রকৃত মুমিন হওয়া যায়? এর উত্তর আল্লাহ তাআলাই দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা অদৃশ্যের প্রতি ঈমান আনে, নামাজ কায়েম করে এবং আমি তাদের যে রিজিক দিয়েছি তা থেকে ব্যয় করে। আর যারা ঈমান আনে তাতে, যা তোমার প্রতি নাজিল করা হয়েছে এবং যা তোমার আগে নাজিল করা হয়েছে। আর আখেরাতের প্রতি তারা পূর্ণ বিশ্বাস রাখে। তারা তাদের রবের পক্ষ থেকে হেদায়েতের ওপর রয়েছে এবং তারাই সফলকাম।’ (সুরা বাকারা: ৩-৫)


বিজ্ঞাপন


সফল মুমিনদের ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা আরও বলেন, ‘যারা অনুসরণ করে রাসুলের, যে উম্মি নবী; যার গুণাবলি তারা নিজদের কাছে তাওরাত ও ইঞ্জিলে লিখিত পায়, যে তাদের সৎকাজের আদেশ দেয় ও বারণ করে অসৎ কাজ থেকে এবং তাদের জন্য পবিত্র বস্তু হালাল করে, আর অপবিত্র বস্তু হারাম করে। আর তাদের থেকে তাদের ওপর থাকা বোঝা ও শৃঙ্খল অপসারণ করে। সুতরাং যারা তাঁর প্রতি ঈমান আনে, তাঁকে সম্মান করে, তাঁকে সাহায্য করে এবং তাঁর সঙ্গে যে নূর নাজিল করা হয়েছে তা অনুসরণ করে, তারাই সফলকাম।’ (সুরা আরাফ: ১৫৭)

আরও পড়ুন:  ঈমানের স্বাদ পেতে হলে তিন গুণ জরুরি

কোরআনের দৃষ্টিতে যারা সফলকাম, তারা মূলত আল্লাহরই দলভুক্ত। এই দলের সদস্যরা কোরআন-সুন্নাহর বিরুদ্ধাচরণকে ঘৃণা করেন। এ সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলছেন, ‘তুমি পাবে না আল্লাহ ও আখেরাতে বিশ্বাসী এমন কোনো সম্প্রদায়, যারা ভালোবাসে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের বিরুদ্ধাচরণকে (ভালোবাসে)—হোক না এই বিরুদ্ধাচরণকারী তাদের পিতা, অথবা পুত্র, অথবা ভাই, অথবা জ্ঞাতি-গোষ্ঠী। এদের অন্তরে আল্লাহ সুদৃঢ় করেছেন ঈমান এবং তাদের শক্তিশালী করেছেন তাঁর পক্ষ থেকে রুহ দ্বারা। তিনি তাদের জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত; সেথায় তারা স্থায়ী হবে; আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন এবং তারাও আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট। এরাই আল্লাহর দল। জেনে রেখো, আল্লাহর দলই সফলকাম।’ (সুরা মুজাদালা: ২২)

বস্তুত আল্লাহ তাআলার হেদায়েত ছাড়া কেউ সফল হতে পারেন না। যাদের অন্তরে আল্লাহ তাআলা হেদায়েতের নূর ঢেলে দিয়েছেন তারা দুনিয়া-আখেরাতে সফল ও আল্লাহর ঘোষণায় সফলকামদের অন্তর্ভুক্ত। কারা হেদায়েতের ওপর আছেন সে প্রসঙ্গে ইরশাদ হয়েছে, ‘এগুলো প্রজ্ঞাপূর্ণ কিতাবের আয়াত, সৎকর্মশীলদের জন্য হেদায়েত ও রহমতস্বরূপ, যারা নামাজ কায়েম করে এবং জাকাত দেয়, আর তারাই আখেরাতে দৃঢ় বিশ্বাস পোষণ করে; তারাই তাদের রবের পক্ষ থেকে হেদায়েতের ওপর এবং তারাই সফলকাম।’ (সুরা লুকমান: ২-৫)


বিজ্ঞাপন


সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজে নিষেধ করাও সফল মানুষের নিদর্শন। আল্লাহ তাআলা তাদের সম্পর্কে বলেছেন, ‘আর যেন তোমাদের মধ্য থেকে এমন একটি দল হয়, যারা কল্যাণের প্রতি আহ্বান করবে, ভালো কাজের আদেশ দেবে এবং মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করবে। আর তারাই সফলকাম।’ (সুরা আলে-ইমরান: ১০৪)

আরও পড়ুন: সৎকাজের আদেশ ও অন্যায়ে বাধা দোয়া কবুলের অন্যতম শর্ত 

যারা সেই আহ্বানে সাড়া দেয় তারাও সফলকাম। ইরশাদ হয়েছে, ‘মুমিনদের যখন আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সা.)-এর প্রতি এ মর্মে আহ্বান করা হয় যে তিনি তাদের মধ্যে বিচার মীমাংসা করবেন, তাদের কথা তো এই হয় যে তখন তারা বলে, ‘আমরা শুনলাম ও আনুগত্য করলাম।’ আর তারাই সফলকাম।’ (সুরা নূর: ৫১)

কেয়ামতের দিন তাদের আমলনামা ভারী হবে। আর যাদের আমলের পাল্লা ভারী হবে, তারা সফল। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর সেদিন পরিমাপ হবে যথাযথ। সুতরাং যাদের পাল্লা ভারী হবে, তারাই হবে সফলকাম’ (সুরা আরাফ: ৮)। অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘অতঃপর যাদের পাল্লা ভারী হবে তারাই হবে সফলকাম।’ (সুরা মুমিনুন: ১০২)

শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াইকারীরা যাবতীয় কল্যাণের অধিকারী হবেন এবং আল্লাহ তাআলা তাদেরকে সফলকাম বলেছেন। এ প্রসঙ্গে ইরশাদ হয়েছে, ‘কিন্তু রাসুল ও তাঁর সঙ্গে মুমিনরা তাদের মাল ও জান দিয়ে লড়াই করে, আর সেসব লোকের জন্যই রয়েছে যাবতীয় কল্যাণ এবং তারাই সফলকাম।’ (সুরা তাওবা: ৮৮)

আরও পড়ুন: তিন মানুষের চোখ জাহান্নামের আগুন দেখবে না

আল্লাহ তাআলার ঘোষণায় সফলকামদের তালিকায় রয়েছেন মানুষের হক আদায়কারীরাও। পবিত্র কোরআনের ঘোষণা— ‘অতএব আত্মীয়-স্বজনকে তাদের হক দিয়ে দাও এবং মিসকিন ও মুসাফিরকেও। এটি উত্তম তাদের জন্য, যারা আল্লাহর সন্তুষ্টি চায় এবং তারাই সফলকাম।’ (সুরা রুম: ৩৮)

অন্য মুমিনকে নিজের ওপর প্রাধান্য দানকারীরাও সফলকামদের অন্তর্ভুক্ত বলে ঘোষণা করেছেন আল্লাহ তাআলা। ইরশাদ হয়েছে, ‘আর মুহাজিরদের আগমনের আগে যারা মদিনায় নিবাস হিসেবে গ্রহণ করেছিল এবং ঈমান এনেছিল (তাদের জন্যও এ সম্পদে অংশ রয়েছে), আর যারা তাদের কাছে হিজরত করে এসেছে তাদের ভালোবাসে। আর মুহাজিরদের যা প্রদান করা হয়েছে তার জন্য এরা তাদের অন্তরে কোনো ঈর্ষা অনুভব করে না এবং নিজেদের অভাব থাকা সত্ত্বেও নিজেদের ওপর তাদের অগ্রাধিকার দেয়। যাদের মনের কার্পণ্য থেকে রক্ষা করা হয়েছে, তারাই সফলকাম।’ (সুরা হাশর: ৯)

মূলত উল্লেখিত সব গুণের সমন্বয় থাকবে একজন সফল মানুষের মধ্যে। অর্থাৎ উপরে উল্লেখিত সব গুণের সমাহার যার মধ্যে থাকবে সে-ই পবিত্র কোরআনে ঘোষিত সফলকাম বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সফল হওয়ার আমলগুলো যথাযথ পালন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর