আল্লাহ তাআলা দয়ার গুণে গুণান্বিত। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা নিজের এই গুণের পরিচয় দিয়ে বলেন, ‘আর তোমাদের ইলাহ এক ইলাহ, তিনি ছাড়া অন্যকোনো ইলাহ নেই। তিনি দয়াময়, অতি দয়ালু।’ (সুরা বাকারা: ১৬৩)
আল্লাহর অনুগ্রহ সব সৃষ্টি ও মানুষের জন্য। তবে মুমিনদের ওপর আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ রয়েছে। যেমন পরকালীন জীবনে কেবল মুমিনরাই আল্লাহর দয়া লাভ করবে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘যারা আল্লাহে ঈমান আনে ও তাঁকে দৃঢ়ভাবে অবলম্বন করে, তাদের তিনি অবশ্যই তাঁর দয়া ও অনুগ্রহের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করবেন এবং তাদের সরল পথে তাঁর দিকে পরিচালিত করবেন।’ (সুরা নিসা: ১৭৫)
বিজ্ঞাপন
প্রকৃত মুমিন কখনো আল্লাহর দয়া ও অনুগ্রহের ব্যাপারে হতাশ হয় না। কেননা হতাশা আল্লাহর প্রতি মন্দ ধারণারই নামান্তর। আল্লাহ বলেন, ‘বলো, হে আমার বান্দারা! তোমরা যারা নিজেদের প্রতি অবিচার করেছ—আল্লাহর অনুগ্রহ থেকে নিরাশ হয়ো না; আল্লাহ সমুদয় পাপ ক্ষমা করে দেবেন। তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (সুরা জুমার: ৫৩)
কোরআন-হাদিসের আলোকে আল্লাহর অনুগ্রহ লাভের কিছু উপায় নিচে তুলে ধরা হলো—
১. সৃষ্টির প্রতি দয়া করা
আল্লাহর সৃষ্টির প্রতি দয়া করলে আল্লাহর দয়া লাভ করা যায়। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, দয়াশীলদের ওপর করুণাময় আল্লাহ দয়া করেন। তোমরা দুনিয়াবাসীকে দয়া করো, তাহলে যিনি আসমানে আছেন তিনি তোমাদের দয়া করবেন। (আবু দাউদ: ৪৯৪১)
আরও পড়ুন: সৃষ্টিকুলের প্রতি দয়া করলে আল্লাহর অনুগ্রহ অনিবার্য
বিজ্ঞাপন
২. ফরজ বিধান পালন করা
ফরজ বিধান পালনের মাধ্যমে বান্দা আল্লাহর অনুগ্রহ লাভ করতে পারে। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা নামাজ কায়েম করো, জাকাত দাও এবং রাসুলের আনুগত্য করো, যাতে তোমরা অনুগ্রহভাজন হতে পারো।’ (সুরা নুর: ৫৬)
৩. ইহসান করা
ইসলামে ইহসান একটি ব্যাপক অর্থবোধক শব্দ। এর একটি অর্থ- দয়া ও অনুগ্রহ করা বা দয়ার গুণ থাকা, আরেক অর্থ আল্লাহকে হাজির-নাজির জেনে ইখলাসের সঙ্গে তাঁর ইবাদত করা। প্রতিটি কাজ যথাযথ সুন্দর, সুষ্ঠু ও সুচারুভাবে আন্তরিকতার সঙ্গে সম্পাদন করাই ইহসান। যা আল্লাহর অনুগ্রহ লাভে সহায়ক। ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহর অনুগ্রহ সৎকর্মপরায়ণদের নিকটবর্তী।’ (সুরা আরাফ: ৫৬)
৪. তাকওয়া অবলম্বন করা
তাকওয়া বা আল্লাহর ভয় তাঁর অনুগ্রহ লাভের মাধ্যম। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর আমার দয়া—তা প্রত্যেক বস্তুতে ব্যাপ্ত। সুতরাং আমি তা তাদের জন্য নির্ধারিত করব, যারা তাকওয়া অবলম্বন করে, জাকাত দেয় এবং আমার নিদর্শনে বিশ্বাস করে।’ (সুরা আরাফ: ১৫৬)
আরও পড়ুন: তাকওয়া অর্জনে দোয়ার গুরুত্ব
৫. দ্বীনের জন্য আত্মত্যাগ
ঈমানের সঙ্গে যারা দ্বীনের জন্য ত্যাগ স্বীকার করে, আল্লাহ তাদের প্রতি অনুগ্রহ করেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা ঈমান আনে এবং যারা হিজরত করে ও সংগ্রাম করে আল্লাহর পথে, তারাই আল্লাহর অনুগ্রহ প্রত্যাশা করে। আল্লাহ ক্ষমাপরায়ণ, পরম দয়ালু।’ (সুরা বাকারা: ২১৮)
৬. আল্লাহ ও রাসুলের আনুগত্য করা
আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আনুগত্য করলে আল্লাহ তার প্রতি দয়া করেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা আল্লাহ ও রাসুলের আনুগত্য করো, যাতে তোমরা দয়া লাভ করতে পারো।’ (সুরা আলে ইমরান: ১৩২)
৭. কোরআনের অনুসরণ করা
পবিত্র কোরআনের অনুসরণের মাধ্যমেও ব্যক্তি আল্লাহর দয়া লাভ করতে পারে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘এই কিতাব আমি অবতীর্ণ করেছি, যা কল্যাণময়। সুতরাং তার অনুসরণ করো এবং সাবধান হও, তা হলে তোমাদের প্রতি দয়া প্রদর্শন করা হবে।’ (সুরা আনআম: ১৫৫)
আরও পড়ুন: কেয়ামতের দিন কোরআন যেভাবে ঝগড়া করবে
৮. কোরআন তেলাওয়াত শোনা
মনোযোগসহ কোরআন তেলাওয়াত শুনলে আল্লাহর রহমত লাভ করা যায়। ইরশাদ হয়েছে, ‘যখন কোরআন পাঠ করা হয়, তখন তোমরা মনোযোগের সঙ্গে তা শ্রবণ করবে এবং নিশ্চুপ হয়ে থাকবে, যাতে তোমাদের প্রতি দয়া করা হয়।’ (সুরা আরাফ: ২০৪)
৯. অনুগ্রহ লাভের দোয়া
আল্লাহর কাছে দয়া লাভের দোয়া করলে আল্লাহ দয়া করেন। এ জন্য মহান আল্লাহ দোয়া শিখিয়েছেন- رَبَّنَاۤ اٰتِنَا مِنۡ لَّدُنۡكَ رَحۡمَۃً وَّ هَیِّیٴۡ لَنَا مِنۡ اَمۡرِنَا رَشَدًا ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি আমাদেরকে আপনার পক্ষ থেকে অনুগ্রহ দান করুন এবং আমাদের জন্য আমাদের কাজকর্ম সঠিকভাবে পরিচালনার ব্যবস্থা করুন।’ (সুরা কাহাফ: ১০)
১০. ইস্তেগফার (ক্ষমা প্রার্থনা) করা
আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করলে আল্লাহ খুশি হন এবং বান্দার প্রতি দয়া করেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘সে বলল, হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা কেন কল্যাণের আগে অকল্যাণ ত্বরান্বিত করতে চাইছ? কেন তোমরা আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছ না, যাতে তোমরা অনুগ্রহভাজন হতে পারো?’ (সুরা নামল: ৪৬)
আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে তাঁর অনুগ্রহ দ্বারা ধন্য করুন। আমিন।

