পবিত্র কোরআন মহান আল্লাহর কালাম। পৃথিবীর বুকে এটি সর্বশ্রেষ্ঠ ও সবচেয়ে মর্যাদার অধিকারী। আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন এবং সুপথপ্রাপ্ত হওয়ার জন্য এই পবিত্র কালামকে আঁকড়ে ধরার বিকল্প নেই। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে কোরআনের নির্দেশনাগুলো বাস্তবায়ন করা গেলে উভয় জাহানের সফলতা ও সম্মানের অধিকারী হওয়া যায়।
ওমর (রা.) বলেন, ‘তোমাদের নবী (স.) বলেছেন, আল্লাহ তাআলা এই কিতাব দ্বারা অনেক জাতিকে মর্যাদায় উন্নীত করেন আর অন্যদের অবনত করেন। অর্থাৎ যারা এই কিতাবের অনুসারী হবে, তারা দুনিয়ায় মর্যাদাবান এবং আখেরাতে জান্নাত লাভ করবে। আর যারা একে অস্বীকার করবে, তারা দুনিয়ায় লাঞ্ছিত এবং পরকালে জাহান্নামে পতিত হবে।’ (মুসলিম: ১৭৮২)
বিজ্ঞাপন
কোরআন তেলাওয়াতকারীরা বিশেষ সম্মানের অধিকারী। হাদিসে এসেছে, যে ব্যক্তি কোরআন তেলাওয়াত করে, তার উদাহরণ হচ্ছে ওই লেবুর ন্যায়, যা সুস্বাদু ও সুগন্ধযুক্ত। আর যে ব্যক্তি (মুমিন) কোরআন পাঠ করে না, তার উদাহরণ হচ্ছে এমন খেজুরের মতো, যা সুগন্ধহীন কিন্তু খেতে সুস্বাদু। আর ফাসিক-ফাজির ব্যক্তি যে কোরআন পাঠ করে, তার উদাহরণ হচ্ছে রায়হানজাতীয় গুল্মের মতো, যার সুগন্ধ আছে কিন্তু খেতে বিস্বাদযুক্ত। আর ওই ফাসিক যে কোরআন একেবারে পাঠ করে না, তার উদাহরণ হচ্ছে ওই মাকাল ফলের মতো, যা খেতেও বিস্বাদ এবং যার কোনো সুঘ্রাণও নেই। (বুখারি: ৪৬৫৪)
আরও পড়ুন: গোসল ফরজ অবস্থায় কোরআন শোনা যাবে?
কেয়ামতের দিন বিভীষিকাময় পরিস্থিতিতে আল্লাহর অনুমতিক্রমে কোরআন সুপারিশের ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে। আবু উমামা বাহিলি (রা.) বলেন, আমি রাসুল (স.)-কে বলতে শুনেছি, তোমরা কোরআন তেলাওয়াত করবে। কেননা কেয়ামতের দিন তা তেলাওয়াতকারীদের জন্য শাফায়াতকারী হিসেবে উপস্থিত হবে...। (মুসলিম: ১৭৪৭)
অন্য হাদিসে এসেছে, ‘রোজা বলবে, হে প্রতিপালক, আমি দিনের বেলা তাকে পানাহার ও সহবাস থেকে বিরত রেখেছি। তাই তার ব্যাপারে তুমি আমার সুপারিশ কবুল করো। কোরআন বলবে, হে প্রতিপালক, আমি তাকে রাতে নিদ্রা থেকে বিরত রেখেছি। তাই তার ব্যাপারে তুমি আমার সুপারিশ কবুল করো। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, এরপর তাদের উভয়ের সুপারিশই কবুল করা হবে।’ (মুসনাদে আহমদ: ৬৬২৬; মেশকাত: ১৯৬৩)
বিজ্ঞাপন
জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ (রা.) বলেন, রাসুল (স.) বলেছেন, এই কোরআন (কেয়ামতে) সুপারিশকারী, তার সুপারিশ গ্রহণযোগ্য হবে। (কোরআন) সত্যায়িত প্রতিবাদী। যে ব্যক্তি তাকে নিজ সামনে রাখবে, সে ব্যক্তিকে সে জান্নাতের প্রতি পথপ্রদর্শন করে নিয়ে যাবে। আর যে ব্যক্তি তাকে পেছনে রাখবে, সে ব্যক্তিকে সে জাহান্নামের দিকে পরিচালিত করবে। (ইবনে হিব্বান: ১২৪; সহিহ তারগিব: ১৪২৩)
সেই কঠিন দিনে পবিত্র কোরআন প্রয়োজনে ঝগড়া শুরু করবে। তার পাঠকের সর্বোচ্চ সম্মান আদায়ের জন্য কোরআনের ঝগড়া প্রসঙ্গে রাসুল (স.) ইরশাদ করেছেন, কেয়ামতের দিন তিনটি জিনিস আল্লাহর আরশের নিচে স্থান পাবে। সে তিনটি জিনিস হলো- ১. কোরআনুল কারিম। কোরআন সেদিন বান্দার ব্যাপারে ঝগড়া করতে থাকবে। কোরআনের জাহের ও বাতেন দুটি দিক আছে। ২. আমানত। ৩. আত্মীয়তা। আত্মীয়তা সেদিন উচ্চৈঃস্বরে বলবে, যে আমাকে মিলিয়ে রেখেছে আল্লাহপাক তাকে রহমতে সঙ্গে মিলিত করুন; আর যে আমাকে ছিন্ন করেছে আল্লাহপাক তাকে রহমত থেকে ছিন্ন করুন। (শরহুস সুন্নাহ: ৩৪৩৩)
আরও পড়ুন: কোরআন না বুঝে ও বুঝে পড়ার পার্থক্য
কোরআনের একটি সুরার নাম সুরাতুল মুলক। আনাস (রা.) বর্ণিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ (স.) এই সুরার ঝগড়া সম্পর্কে ইরশাদ করেছেন, কোরআনে ৩০ আয়াতবিশিষ্ট একটি সুরা রয়েছে, যা তার আমলকারীকে জান্নাতে প্রবেশ করানো পর্যন্ত তার পক্ষে ওকালতি করেছে, তার পক্ষে লড়েছে। তা হলো, সুরা তাবারাকা (সুরা মুলক)। (আলমুজামুল আওসাত, তবারানি: ৩৬৫৪)
আল্লাহর কাছে কোরআন তেলাওয়াতকারীদের মর্যাদা অনেক বেশি। হাদিসের ভাষায়, তারা আল্লাহর পরিজন ও বিশেষ বান্দা। আনাস ইবনে মালেক (রা.) বলেন, রাসুল (স.) ইরশাদ করেছেন, মানুষের মধ্যে এমন কিছু লোক আছে, যারা আল্লাহর পরিবারভুক্ত। সাহাবিরা জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! তারা কারা? তিনি বলেন, কোরআন তেলাওয়াতকারীরাই আল্লাহর পরিবার-পরিজন এবং তাঁর বিশেষ বান্দা। (ইবনে মাজাহ: ২১৫)
কোরআন হিফজকারীদের ব্যাপারে রাসুল (স.) বলেছেন, যে ব্যক্তি কোরআন পড়েছে এবং তা হিফজ করেছে, এর হালালকে হালাল বলে মেনেছে এবং হারামকে হারাম বলে গ্রহণ করেছে, আল্লাহ তাআলা এর কারণে তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন এবং সে তার পরিবারের এমন ১০ জনকে সুপারিশ করতে পারবে, যাদের প্রত্যেকের ওপর জাহান্নাম অবধারিত ছিল। (তিরমিজি: ২৯০৫; ইবনে মাজাহ: ২১৬)
আল্লাহ তাআলা আমাদের কোরআনময় জীবন দান করুন। কোরআনের সুপারিশ নসিব করুন। আমিন।

