মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

তাকওয়া অর্জনে দোয়ার গুরুত্ব

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ৩০ জুন ২০২৩, ১২:৪১ পিএম

শেয়ার করুন:

তাকওয়া অর্জনে দোয়ার গুরুত্ব

তাকওয়া বা আল্লাহভীতি অর্জন করা প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর ওপর ফরজ। আল্লাহ তাআলার নির্দেশ, ‘হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো, যেভাবে তাকে ভয় করা উচিত।’ (সুরা আলে ইমরান: ১২০)। আরও ইরশাদ হয়েছে, হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সত্যবাদীদের সঙ্গে থাকো। (সুরা তাওবা: ১১৯)। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা আরও ইরশাদ করেছেন, হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সঠিক ও সত্য কথা বলো। (সুরা আহজাব: ৭০)

এসব দলিলের আলোকে তাকওয়া অর্জন করা ফরজ। কেননা আল্লাহ তাআলার নির্দেশ অগ্রাহ্য করার সুযোগ নেই। পবিত্র কোরআনের বিভিন্ন আয়াতে আল্লাহ তাআলা তাকওয়া অবলম্বনকারীদের ভালোবাসেন বলেও ঘোষণা দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই তোমাদের মধ্যে মুত্তাকি বান্দারা আল্লাহর কাছে পছন্দনীয় এবং ভালোবাসার পাত্র।’ (সুরা হুজরাত: ১৩) আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘নিশ্চয়ই তোমাদের মধ্যে আল্লাহর নিকট সেই সবচেয়ে সম্মানী যে তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে বড় মুত্তাকি।’ (সুরা হুজরাত: ১৩)


বিজ্ঞাপন


তাকওয়া দুনিয়া-আখেরাতে সাফল্যের চাবিকাঠি। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, হে বুদ্ধিমানগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো, যাতে তোমরা সফল হও। (সূরা মায়েদা: ১০০)। ‘যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করবে আল্লাহ তাকে বিপদাপদ থেকে নিষ্কৃতি দেবেন এবং তাকে ধারণাতীত রিজিক দান করবেন।’ (সুরা তালাক: ২-৩)

আরও পড়ুন: যে দোয়া পড়লে জান্নাত ওয়াজিব

তাকওয়া এমন একটি গুণ যা অর্জন করলে জান্নাতের নিশ্চয়তা রয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন, নিশ্চয় মুত্তাকিরা থাকবে জান্নাতে ও নেয়ামতে, তারা উপভোগ করবে, যা তাদের পালনকর্তা দেবেন এবং তিনি জাহান্নামের আজাব থেকে তাদেরকে রক্ষা করবেন। (সুরা তুর: ১৭-১৮)

উল্লেখিত আয়াতসমূহের মাধ্যমে এ কথা সুস্পষ্ট যে, দুনিয়া ও আখেরাতে সফলতার জন্য তাকওয়া অর্জন করার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য।


বিজ্ঞাপন


তাকওয়া অর্জনে দোয়ার বড় ভূমিকা রয়েছে। আসলে আল্লাহর কাছে চাওয়া এবং চাইতেই থাকা মুত্তাকিদের বিশেষ গুণ। জীবনের সকল কাজে আল্লাহর সহায়তা কামনা করার মধ্যে লুকিয়ে আছে আল্লাহভীতির প্রমাণ। তাই প্রত্যেক বিষয়ে দোয়ার অভ্যাস করতে হবে। যেমন ঘুম থেকে উঠে দোয়া পড়া, টয়লেটে যেতে ও বের হতে দোয়া পড়া, ফজরের সময় মসজিদে যেতে দোয়া পড়া, ঘরে ঢুকতে ও বের হতে দোয়া পড়া, খাবারের শুরুতে ও শেষে দোয়া পড়া। মোটকথা, জীবনের প্রতিটি কাজে প্রিয়নবী (স.) যে দোয়া শিখিয়েছেন তা পাঠ করা। অনেকে দোয়াকে সামান্য আমল মনে করেন। বাস্তবঅর্থে দোয়া হলো অসামান্য আমল।

dua

কারণ, কোরআন হাদিসে বর্ণিত প্রত্যেকটি দোয়ার অর্থ অনেক সুন্দর ও অর্থবোধক। একেকটা দোয়া কবুল হলে জীবন সার্থক হয়ে যাবে। যেমন মসজিদে প্রবেশ করার সময় পড়তে হয়- اللهم افتح لي أبواب رحمتك ‘হে আল্লাহ! আমার জন্য আপনার রহমতের সকল দরজা খুলে দিন।’ অর্থটি লক্ষ্য করুন এবং নিজেকে প্রশ্ন করুন- এই দোয়াটি যদি কবুল হয়, জীবনে আর কিছুর প্রয়োজন আছে? 

ফজরের নামাজে মসজিদে যেতে যেতে পড়তে হয়- ‘হে আল্লাহ! আমার অন্তরে নূর দান করুন। আমার দৃষ্টিতে নূর দান করুন। আমার ডানে-বায়ে, সামনে-পেছনে, উপরে-নিচে সবদিকে নূর দান করুন এবং আমাকে নূরে নূরান্বিত করুন।’ ভেবে দেখুন তো- এই দোয়া যদি কবুল হয়ে যায় তাহলে কল্যাণের আর কিছু বাকি থাকে? তাকওয়া অর্জনের দোয়া

এভাবে প্রত্যেকটি মাসনুন দোয়ার তাৎপর্য এত গভীর যে একটি দোয়া কবুল হলেও জীবনের সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। আর এতে লাভ হবে তাকওয়া। কারণ দোয়ার অভ্যাস করার মর্মার্থ এটাই যে, আমি আল্লাহ ছাড়া কারো কাছে হাত পাতি না। মহান প্রভুর কাছেই আমার সকল মিনতি উপস্থাপন করি নবীজির শেখানো পদ্ধতিতে। মূলত প্রিয়নবী (স.) উম্মতকে যেসব দোয়া শিক্ষা দিয়েছেন তার দ্বারা আল্লাহ তাআলার সাথে বান্দার সার্বক্ষণিক যোগাযোগ স্থাপিত হয়।

doa

অতএব, দোয়া এক অমূল্য সম্পদ। অজ্ঞতা ও উদাসীনতার কারণে মানুষ মাসনুন দোয়াগুলো মুখস্থ করে না। সময়মতো পড়ে না। আলেমরা নসিহত করেন, সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত যত কাজ করতে হয় প্রত্যেক কাজের শুরুতে আল্লাহ তাআলার কাছে দোয়া করো। ঘর থেকে বের হওয়ার সময় দোয়া কর-‘হে আল্লাহ! সহজে যানবাহনের ব্যবস্থা করে দাও।’ যানবাহন পাওয়া গেল তো বল-‘আল্লাহ! নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছে দাও।’ রাস্তায় ট্রাফিক জ্যামে পড়েছ তো দোয়া কর, ‘হে আল্লাহ! রাস্তা পরিষ্কার করে দাও।’ মোটকথা সকল কাজে সকল অবস্থায় আল্লাহ তাআলার কাছে দোয়া কর। সারাদিনই কোনো না কোনো কাজ থাকে। সকল কাজে আল্লাহ তাআলার কাছে চাইতে থাক। আল্লাহর দুয়ারের ভিখারি হয়ে যাও, তাঁর রহমতের কাঙাল বনে যাও এবং বারবার চাইতে থাক। প্রিয়নবী (স.) বলেছেন, জুতার ফিতা ছিঁড়ে গেলেও আল্লাহ তাআলার কাছে চাও।

ফিতা ছিঁড়ে গেলেও আল্লাহর কাছে চাওয়ার এই নির্দেশনার মধ্য দিয়ে পেয়ারা নবী যেন উম্মতকে বললেন, ওহে মানুষ! তোমার তো অভাবের শেষ নেই, সবসময় কোনো না কোনো প্রয়োজন লেগেই থাকে। অতএব সব সময় আল্লাহর কাছে চাইতে থাক। মাখলুকের সহায়তা নেওয়ার আগে খালিকের কাছে চাও। তিনিই তো প্রকৃত প্রয়োজন পূরণকারী।

অনেকে বলে, কত দোয়া করলাম, কবুল হল না। মনে রাখবেন, বান্দার প্রতিটি দোয়াই কবুল হয়। কোনো দোয়াই ব্যর্থ হয় না। প্রতিটি দোয়ার কমপক্ষে তিনটি ফায়দা নিশ্চিত। এর মধ্যে দুটি তো সাথে সাথে পাওয়া যায়।

আরও পড়ুন: সন্তানের জন্য পাঁচটি দোয়া করতে ভুলবেন না

প্রথম ফায়দা হলো- দোয়া একটি ইবাদত। দোয়ার কারণে সাথে সাথে নেকি লেখা হয়।
দ্বিতীয় ফায়দা হচ্ছে, দোয়ার কারণে বান্দা আল্লাহ তাআলার নিকটবর্তী হয়। গুরুত্বপূর্ণ দোয়া, সর্বশ্রেষ্ঠ দোয়া, মুনাজাতের দোয়া
তৃতীয় ফায়দা হল, বান্দার জন্য প্রার্থিত বিষয় যদি কল্যাণকর হয় তাহলে প্রার্থিত বস্ত্তই তাকে দান করা হয়। অন্যথায় এর বিনিময় আল্লাহ তাআলা তাকে অন্যভাবে দান করেন। উদাহরণস্বরূপ- অবুঝ শিশু যদি ধারালো ছুরি নিয়ে খেলতে চায় তাহলে বাবা-মা তার ইচ্ছা পূরণ করেন না। সে যতই কান্নাকাটি করুক, বাবা-মা কখনোই তা দেন না। অন্যকিছু দিয়ে তাকে সন্তুষ্ট করেন। তেমনিভাবে বান্দা অনেক সময় না বুঝে অকল্যাণকর জিনিস চেয়ে বসে। কিন্তু মেহেরবান মালিক তা না দিয়ে অন্যভাবে তার প্রার্থনা মঞ্জুর করেন। তাকওয়া অর্জনের দোয়া, আল্লাহুম্মা দিয়ে সকল দোয়া

আরও পড়ুন: ঋণ পরিশোধের দোয়া

অতএব, কোনো দোয়াই নিষ্ফল নয়। এত বড় নেয়ামতকে মানুষ মামুলি মনে করে। ফলে এর বরকত থেকে বঞ্চিত থেকে যায়। তাই এর অভ্যাস গড়তে হবে। আল্লাহর কাছে তাকওয়া অর্জনেরও দোয়া করতে হবে। কারণ তাকওয়া অর্জন হয়ে গেলে তার আর কিছুই দরকার হয় না। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বর্ণনা করেন রাসুলুল্লাহ (স.) বলতেন- اَللَّهُمَّ اِنِّى أَسْألُكَ الْهُدَى وَالتُّقَى وَالْعَفَافَ وَالْغِنَى উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আস-আলুকাল হুদা ওয়াত-তুকা ওয়াল আ'ফাফা ওয়াল গিনা। অর্থ: ‘হে আল্লাহ আমি তোমার কাছে হেদায়েত, তাকওয়া, সুস্থতা ও সম্পদ প্রার্থনা করছি। (সুনানে আত-তিরমিজি: ৩৪৮৯) সবচেয়ে দামি দোয়া, শ্রেষ্ঠ দোয়া সমূহ

এই দোয়াটির অর্থও লক্ষ করুন। দোয়াটি কবুল হলে মুমিন জীবনে আর কিছুরই দরকার নেই। আল্লাহ তায়ালা মুসলিম উম্মাহকে সকাল-সন্ধ্যায় দোয়া করার তাওফিক দান করুন। দুনিয়ার সব মুখাপেক্ষিতা থেকে নিজেকে হেফাজত করার তাওফিক দান করুন। আমিন। প্রতিদিনের আমল ও দোয়া, কোরআনের শ্রেষ্ঠ দোয়া, প্রতিদিনের দোয়া, দোয়া dua doa

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর