কেয়ামতের একটি নাম ইয়াওমুল হাসরা বা আফসোসের দিন। সেদিন মানুষ দুনিয়ার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আফসোস করবে। জাহান্নামিরা এই কারণে পরিতাপ করবে যে দুনিয়ায় তারা ঈমান আনলে ও সৎকর্ম করলে জান্নাত লাভ করতে পারত। এছাড়াও নানা বিষয় নিয়ে তারা আফসোস করবে। ইসলামি বিশ্বাসমতে, পুনরুত্থানের পর মানুষের আর মৃত্যু হবে না—এটাই সবচেয়ে বেশি আফসোসের কারণ হবে জাহান্নামিদের।
যখন দেখবে মৃত্যুকে জবাই করে দেওয়া হচ্ছে, অর্থাৎ আর কোনোদিন তাদের মৃত্যু হবে না, তখন জাহান্নামিরা সবচেয়ে বেশি আফসোস করবে। তখন তাদের আফসোসের সীমা থাকবে না। ইবনে ওমর (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, জান্নাতিরা জান্নাতে যাওয়ার পর আর জাহান্নামিরা জাহান্নামে যাওয়ার পর মৃত্যুকে উপস্থিত করা হবে, এমনকি জান্নাত ও জাহান্নামের মধ্যস্থানে রাখা হবে। এরপর তাকে জবাই করে দেওয়া হবে, অতঃপর একজন ঘোষণাকারী ঘোষণা দেবে যে হে জান্নাতিরা, (আর) মৃত্যু নেই। হে জাহান্নামিরা, (আর) মৃত্যু নেই। তখন জান্নাতবাসীদের আনন্দের ওপর আনন্দ হবে। আর জাহান্নামিদের দুঃখের ওপর দুঃখ হবে। (সহিহ বুখারি: ৬৫৪৮)
বিজ্ঞাপন
কাফেররা ঈমান না আনার ভুলে আফসোস করতে করতে মাটি হওয়ার ইচ্ছা করবে। ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আমি তোমাদের আসন্ন শাস্তি সম্পর্কে সতর্ক করলাম; যেদিন মানুষ তার কৃতকর্ম দেখতে পাবে এবং কাফের বলবে, হায়! আমি যদি মাটি হতাম! (সুরা নাবা: ৪০)
আরও পড়ুন: যে আমল করলে জাহান্নামে যেতে হবে না
দুনিয়াতে যারা ভ্রান্ত নেতাদের অনুসরণ করেছে এবং তাদের কথামতো নিজেদের জীবন-যাপন পরিচালনা করেছে, সেদিন তারা তাদের ভুল বুঝতে পারবে আর আফসোস করবে। আল্লাহ বলেন, ‘তারা আরো বলবে, ‘হে আমাদের রব, আমরা আমাদের নেতা ও বড় লোকদের আনুগত্য করেছিলাম এবং তারা আমাদের পথভ্রষ্ট করেছিল। হে আমাদের রব, আপনি তাদের দ্বিগুণ শাস্তি দিন এবং তাদের দিন মহা অভিসম্পাত।’ (সুরা আহজাব: ৬৭-৬৮)
জান্নাতিদের সুখ-শান্তি দেখে জাহান্নামিরা আফসোস করে বলবে, হায়! আমরাও যদি এ জীবনের জন্য সৎকর্ম সম্পাদন করতাম, তাহলে আজ আমাদের এই দুর্দশার শিকার হতে হতো না। এ সম্পর্কে ইরশাদ হয়েছে, ‘এবং সেদিন জাহান্নামকে আনা হবে, সেদিন মানুষ স্মরণ করবে, কিন্তু এই স্মরণ তার কী কাজে আসবে? সে বলবে, হায়, এ জীবনের জন্যে আমি যদি কিছু অগ্রে প্রেরণ করতাম!’ (সুরা ফাজর: ২৩-২৪)
বিজ্ঞাপন
দুনিয়াতে যারা অসৎ লোককে বন্ধু বানিয়েছে সেসব ‘অপরাধী সেদিন স্বীয় হস্তদ্বয় দংশন করতে করতে বলবে, ‘হায় আফসোস! আমি যদি রাসুলের সাথে পথ অবলম্বন করতাম। হায়, দুর্ভোগ আমার! আমি যদি অমুককে বন্ধুরূপে গ্রহণ না করতাম! আমাকে তো সে বিভ্রান্ত করেছিল, আমার কাছে উপদেশ পৌঁছার পর। আর শয়তান মানুষের জন্য মহাপ্রতারক।’(সুরা ফুরকান: ২৭-২৯)
আরও পড়ুন: ৩ বদভ্যাস থাকলে জাহান্নাম নিশ্চিত
দুনিয়ায় যারা জিকিরবিমুখ ছিল, তারাও সেদিন আফসোস করবে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (স.) বলেন, যেসব লোক কোনো বৈঠকে বসেছে অথচ তারা আল্লাহ তাআলার জিকির করেনি এবং তাদের নবীর প্রতি দরুদও পড়েনি, তারা বিপদগ্রস্ত ও আশাহত হবে। আল্লাহ তাআলা চাইলে তাদের শাস্তিও দিতে পারেন কিংবা মাফও করতে পারেন। (তিরমিজি: ৩৩৮০)
সুরা বাকারা না পড়াও সেদিন আফসোসের কারণ হবে। আবু উসামা আল বাহিলি (রা.) বলেন, আমি রাসুল (স.)-কে বলতে শুনেছি, তোমরা কোরআন পাঠ করো। কারণ কেয়ামতের দিন তা পাঠকারীর জন্য শাফায়াতকারী হিসেবে উপস্থিত হবে। তোমরা দুটি উজ্জ্বল সুরা অর্থাৎ সুরা বাকারা এবং সুরা আলে ইমরান পড়ো। কেয়ামতের দিন এ দুটি সুরা এমনভাবে আসবে যেন তা দুই খণ্ড মেঘ অথবা দুটি ছায়াদানকারী অথবা দুই ঝাঁক উড়ন্ত পাখি, যা তার পাঠকারীর পক্ষ হয়ে কথা বলবে। আর তোমরা সুরা বাকারা পাঠ করো। এ সুরাটিকে গ্রহণ করা বরকতের কাজ এবং পরিত্যাগ করা পরিতাপের কারণ। (মুসলিম: ১৭৫৯)
আরও পড়ুন: জান্নাতে যাওয়ার সহজ কিছু আমল
জান্নাতিরাও বিশেষ কারণে এক প্রকার আফসোস করবে সেদিন। হজরত মুয়াজ ইবনে জাবাল (রা.) হতে বর্ণিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন— ‘জান্নাতিদের জান্নাতে যাওয়ার পর দুনিয়ার কোনো জিনিসের জন্য আফসোস থাকবে না। শুধু ওই সময়ের জন্য আফসোস হবে, যা আল্লাহর স্মরণ ব্যতীত অনর্থক কথা বা কাজে অতিবাহিত হয়েছে।’ (বায়হাকি: ৫০৯)
আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে মৃত্যুর আগে আল্লাহর সন্তুষ্টিলাভে বিশুদ্ধ ঈমানের সঙ্গে বেশি বেশি নেক আমল করার তাওফিক দান করুন। কোরআন ও সুন্নাহ অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

