জানাজায় শরিক হওয়ার জন্য মৃত্যু সংবাদের এলান করা জায়েজ। প্রয়োজনে মাইক দিয়েও প্রচার করা যাবে। বিভিন্ন হাদিস ও আসার থেকে বোঝা যায় সাধারণভাবে মৃত্যু সংবাদ প্রচার করা উত্তম ও বৈধ কাজ। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, এক ব্যক্তি রাতে ইন্তেকাল করলে সাহাবিরা তাকে রাতেই দাফন করে দেন। সকালে সংবাদটি নবীজিকে (স.) জানালে তিনি বলেন, কেন তোমরা আমাকে রাতেই জানালে না? (সহিহ বুখারি: ১২৪৭)
আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, আল্লাহর রাসুল (স.) বাদশাহ নাজাশির ইন্তেকালের দিন তার মৃত্যু-সংবাদ জানিয়ে জানাজার স্থানে যান এবং সাহাবায়ে কেরামকে নিয়ে জানাজা আদায় করেন। (সহিহ বুখারি: ১২৪৫, সহিহ মুসলিম: ৯৫১)
বিজ্ঞাপন
তবে মৃতের গুণগান প্রচার করে কিংবা মাইকে আর্তনাদ করে মৃত্যু সংবাদ প্রচার করা যাবে না। কেননা, এসব জাহেলি যুগের প্রথা। হাদিসে এভাবে মৃত্যুর এলান করতে নিষেধ করা হয়েছে। রাসুল (স.) বলেছেন- إِيَّاكُمْ وَالنَّعْىَ فَإِنَّ النَّعْىَ مِنْ عَمَلِ الْجَاهِلِيَّةِ ‘তোমরা মৃত্যুর খবর (মৃতের গুণগান গেয়ে) প্রচার করা থেকে বিরত থাক; এটা জাহেলি যুগের প্রথা। (সুনানে তিরমিজি: ৯৮৪)
আরও পড়ুন: জানাজার নামাজের নিয়মকানুন, গুরুত্ব ও ফজিলত
এ হাদিসের ব্যাখ্যায় ইমাম নববি (রহ.) বলেন, এ হাদিসে জাহেলি যুগের মতো মৃতের গুণগান গেয়ে মৃত্যু-সংবাদ প্রচার করতে নিষেধ করা হয়েছে। (আল মিনহাজ: ৭/২১) হাফেজ ইবনে হাজার (রহ) বলেন, মৃত্যু-সংবাদ প্রচার নিষেধ নয়, নিষেধ তো হলো জাহেলি যুগের কর্মকাণ্ড। (ফাতহুল বারি: ৩/১৪০)
জানাজা ও দাফন-কাফনে অংশগ্রহণ একটি ফজিলতপূর্ণ আমল। তাই সবাইকে জানাজা আদায় ও দাফনে অংশগ্রহণের সুযোগ করে দেওয়ার জন্যও মৃত্যুর খবর ও জানাজার সময়সূচি প্রচার করা জরুরি। রাসুল (স.) বলেন- حَقُّ المُسْلِمِ عَلَى المُسْلِمِ خَمْسٌ رَدُّ السَّلاَمِ وَعِيَادَةُ المَرِيضِ وَاتِّبَاعُ الجَنَائِزِ وَإِجَابَةُ الدَّعْوَةِ وَتَشْمِيتُ العَاطِسِ ‘এক মুসলিমের ওপর অপর মুসলিমের হক পাঁচটি: সালামের জবাব দেওয়া, অসুস্থ হলে দেখতে যাওয়া, তার জানাজার সঙ্গে যাওয়া, দাওয়াত কবুল করা এবং তার হাঁচির জবাব দেওয়া। (সহিহ বুখারি: ১২৪০, সহিহ মুসলিম: ২১৬২)
বিজ্ঞাপন
আরও পড়ুন: মুক্তাদির তাশাহুদ শেষ হওয়ার আগে ইমাম দাঁড়িয়ে গেলে করণীয় কী
ওপরে উল্লিখিত সুনানে তিরমিজির হাদিসে বিলাপ করে বা গুণ বর্ণনা করে মৃত্যু সংবাদ প্রচারে যে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে, তা থেকে অনেকে মনে করেন, সাধারণভাবে মৃত্যু সংবাদ সবাইকে জানানোই নিষিদ্ধ। এ ধারণা সঠিক নয়। ইবরাহিম হালাবি (রহ) বলেন, বিশুদ্ধ মত হলো- মৃতব্যক্তির গর্ব-গৌরবের উল্লেখ ছাড়া সাধারণভাবে অলিতে-গলিতে মৃত্যু-সংবাদ প্রচার করা দোষণীয় নয়। কেননা জাহেলি যুগের প্রচার তো হলো বিলাপ-আর্তনাদের সাথে মৃত্যু-সংবাদ প্রচার করা। (শরহুল মুনয়া, পৃষ্ঠা-৬০৩)
তবে, আলাদাভাবে মৃত্যুর খবর প্রচারের বিশেষ ফজিলত সংক্রান্ত কোনো হাদিস নেই। এক্ষেত্রে উদ্দেশ্য যদি হয় জানাজায় উপস্থিত হওয়ার আহ্বান, তাহলে তা নিঃসন্দেহে সওয়াবের কাজ। তাই মৃত্যুর খবরের পাশাপাশি জানাজার সময় প্রচার করতে পারলে অনেক সওয়াব লাভ হবে ইনশাআল্লাহ। কারণ নেক কাজে সহযোগিতা স্বীকৃত নেক আমল।
উল্লেখ্য, মসজিদের মাইকেও মৃত্যুসংবাদ প্রচার করা যাবে। কারণ তা একদিকে আমাদের সমাজের প্রচলন, অন্যদিকে অর্থদাতাগণও তা জেনেই মসজিদে দান করে থাকেন। তবে শুধু মৃত্যুর খবর না দিয়ে সাথে জানাজার সময় বলে দেওয়া উত্তম, তখন দোষণীয় কিছুই অবিশিষ্ট থাকে না।
(আলইসতিজকার, ইবনে আব্দুল বার: ২/৫৫১; আলমাজমু শরহুল মুহায্যাব: ৫/১৭৪; তুহফাতুল ফুকাহা: ১/২৩৯; ফতোয়া বাজজাজিয়া ৬/২৬৯; আলবাহরুর রায়েক: ৫/২৫০; রদ্দুল মুহতার: ৪/৪৪৫)

