আল্লাহ তাআলা নারীকে গর্ভধারণক্ষমতা দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। সন্তান যখন মায়ের গর্ভে থাকে, তখন ভ্রূণ অবস্থা থেকেই মায়ের যাপিত জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে অবর্ণনীয় ধকল বহন করতে হয়। এজন্য ইসলামে নারীর মর্যাদা একেবারেই ভিন্ন। একজন মায়ের এই অবর্ণনীয় কষ্টের কথা পবিত্র কোরআনে এভাবে বর্ণনা করা হয়েছে, ‘সন্তানের মা তাকে কষ্টের পর কষ্ট সয়ে পেটে বহন করেছে।’ (সুরা লুকমান: ১৪)
পবিত্র কোরআনে মায়ের কথা আলাদাভাবে উল্লেখ করে মাকে বিশেষ মর্যাদায় ভূষিত করা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘তার মা তাকে কষ্টের পর কষ্ট করে গর্ভধারণ করেছেন এবং দুই বছর দুগ্ধপান করিয়েছেন।’ (সুরা লোকমান: ১৪)
বিজ্ঞাপন
আরও পড়ুন: গর্ভবতী নারীর দোয়া ও আমল
একজন গর্ভবতীর জন্য মহান আল্লাহ পুরস্কার ঘোষণা করেছেন। হাদিসে এসেছে, এই গর্ভকালীন সময়ে সে আল্লাহর পথে সর্বদা রোজা পালনকারী ও সারা রাত নফল ইবাদতকারীর মতো সওয়াব পায়। তার যখন প্রসবব্যথা শুরু হয়, তখন তার জন্য নয়ন শীতলকারী কী কী নেয়ামত লুকিয়ে রাখা হয়, তা আসমান-জমিনের কোনো অধিবাসী জানে না। সে যখন সন্তান প্রসব করে তখন তার দুধের প্রতিটি ফোঁটার পরিবর্তে একটি করে নেকি দেওয়া হয়। এই সন্তান যদি কোনো রাতে তাকে জাগিয়ে রাখে (অসুখ ইত্যাদির কারণে বিরক্ত করে মাকে ঘুমাতে না দেয়) তাহলে সে আল্লাহর পথে নিখুঁত ৭০টি দাস আজাদ করার সওয়াব পাবে। (তাবরানি: ৬৯০৮, আবু নুআইম: ৭০৮৯)
আরও পড়ুন: ৪ আমলেই নারীর জান্নাত
গর্ভাবস্থায় মৃত্যু হলে সেটি ইসলামে বিশেষ সম্মানজনক মৃত্যু। হাদিসে একে শহিদি মৃত্যু বলা হয়েছে। রাসুল (স.) বলেন, আল্লাহর রাস্তায় নিহত ব্যক্তি ছাড়া আরও সাত প্রকার ‘শহিদ’ রয়েছে। তারা হলো- ১. মহামারিতে মৃত (মুমিন) ব্যক্তি ২. পানিতে ডুবে মৃত ব্যক্তি ৩. ‘জাতুল জাম্ব’ নামক কঠিন রোগে মৃত ব্যক্তি (যেসব গর্ভবতী নারীর পেটে বাচ্চা মারা যায় এবং প্রসূতি মাও মারা যায়, ইবনু হাজার বলেন, এটিই প্রসিদ্ধ মত। (ফতহুল বারি: ২৮২৯-এর ব্যাখ্যা, ৬/৫১ পৃ.) ৪. (কলেরা বা অনুরূপ) পেটের পীড়ায় মৃত ব্যক্তি ৫. আগুনে পুড়ে মৃত ব্যক্তি ৬. ধসে চাপা পড়ে মৃত ব্যক্তি ও ৭. প্রসবকালে মৃত্যুবরণকরী মহিলা। (আবুদাউদ, নাসায়ি, মেশকাত: ১৫৬১; সহিহ আত-তারগিব: ১৩৯৮)
বিজ্ঞাপন
আরও পড়ুন: বাচ্চাদেরকে শয়তানের অনিষ্ট ও বদনজর থেকে রক্ষার দোয়া
গর্ভে সন্তান থাকা অবস্থায় কোনো মহিলা মারা গেলে তাকে দাফন করার নিয়ম হলো- আগে দেখতে হবে সন্তান জীবিত আছে কি না? যদি জীবিত থাকে তবে দ্রুত অপারেশন করে বের করতে হবে। অতঃপর মৃতের গোসল ও কাফন-দাফন সম্পন্ন করতে হবে। আর গর্ভের সন্তান মৃত হলে গর্ভসহই মৃতকে দাফন করে দিতে হবে। (আততাজনিস: ২/২৪৫-২৪৬; আলবাহরুর রায়েক: ২/১৮৮; হাশিয়াতুত তহতাবি আলাদ্দুর: ১/৩৮২; ফতোয়ায়ে খানিয়া: ১/১৮৮)
আল্লাহ তাআলা গর্ভবতী নারী ও গর্ভে থাকা সন্তানদের সুস্থ রাখুন। সবরকম দুর্ঘটনা থেকে তাদের রক্ষা করুন। আমিন।

