বুধবার, ১০ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

গর্ভবতী নারীর দোয়া ও আমল

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ২২ ডিসেম্বর ২০২২, ০৫:৩৩ পিএম

শেয়ার করুন:

গর্ভবতী নারীর দোয়া ও আমল

গর্ভে সন্তান আসা নারীর জন্য সম্মান ও সৌভাগ্যের বিষয়। হাদিস শরিফে এসেছে, নারী যখন গর্ভধারিণী হয়ে স্বামীর প্রতি সন্তুষ্ট থাকেন, তখন সর্বদা রোজা পালন এবং সারারাত নফল নামাজের সওয়াব লাভ হয়। আর যখন প্রসব বেদনা শুরু হয় তখন তার জন্য নয়নজুড়ানো কী কী নেয়ামত লুকিয়ে রাখা হয়, তা আসমান-জমিনের কোনো অধিবাসীই জানে না। সে যখন সন্তান প্রসব করে তখন তার দুধের প্রতিটি ফোঁটার বিনিময়ে একটি করে নেকি দেওয়া হয়। সন্তান যদি কোনো রাতে তাকে জাগিয়ে রাখে (কান্নাকাটি করে মাকে বিরক্ত করে ঘুমাতে না দেয়) তাহলে সে আল্লাহর জন্য নিখুঁত ৭০টি গোলাম আজাদ করার সওয়াব পাবে।’ (তাবরানি: ৬৯০৮; মাজমাউজ জাওয়ায়েদ: ৪/৩০৫)

গর্ভাবস্থায় কোনো নারী মারা গেলে তিনি শহিদি মর্যাদা লাভ করবেন। রাসুল (স.) বলেছেন, ‘আল্লাহর রাস্তায় নিহত (শহিদ) হওয়া ছাড়াও আরও সাত ধরনের শহিদ আছে— ১. মহামারিতে মৃত্যুবরণকারী শহিদ। ২. পানিতে মৃত্যুবরণকারী শহিদ। ৩. পক্ষাঘাতে মৃত্যুবরণকারী শহিদ। ৪. পেটের রোগের কারণে (কলেরা, ডায়রিয়া ইত্যাদিতে) মৃত্যুবরণকারী শহিদ। ৫. অগ্নিদগ্ধ হয়ে মৃত্যুবরণকারী শহিদ। ৬. কোনো কিছুর নিচে চাপা পড়ে মৃত্যুবরণকারী শহিদ এবং ৭. যে মহিলা গর্ভাবস্থায় মারা যাবে সেও শহিদ।’ (আবু দাউদ: ৩১১১)


বিজ্ঞাপন


আরও পড়ুন: ৪ আমলেই নারীর জান্নাত

সুতরাং গর্ভবতী নারীদের বিশেষ মর্যাদা রয়েছে ইসলামে। কোরআন ও হাদিসে বেশকিছু আমলের প্রতি তাদের উৎসাহিত করা হয়েছে। এর একটি হলো অনাগত সন্তানের জন্য কল্যাণের দোয়া করা। এই শিক্ষা দেখা যায় হজরত মরিয়ম (আ.)-এর মায়ের জীবনে। তাঁকে যখন সন্তানের ব্যাপারে সুসংবাদ দেওয়া হলো, তখন তিনি মহান প্রভুর দরবারে যে দোয়া করেছিলেন সেটি সুরা আলে ইমরানের ৩৫ নাম্বার আয়াতে উল্লেখ রয়েছে। যে দোয়ার ফলে আল্লাহ তাআলা তাকে মরিয়ম (আ.)-এর মতো রত্মগর্ভা কন্যা সন্তান দিয়েছেন, যিনি নবী ঈসা (আ.)-এর মা। সুতরাং সুসন্তান বা পরহেজগার সন্তান লাভের জন্য গর্ভবতী নারীদের ওই দোয়াটি করার শিক্ষা দেয় ইসলাম। দোয়াটি হলো— رَبِّ هَبْ لِي مِن لَّدُنْكَ ذُرِّيَّةً طَيِّبَةً إِنَّكَ سَمِيعُ الدُّعَاء ‘রাব্বি হাবলি মিনলাদুনকা জুররিয়াতান তাইয়িবাতান ইন্নাকা সামিউদ্দুয়া’, অর্থাৎ, ‘হে আমার পালনকর্তা! আপনার পক্ষ থেকে আমাকে পুত-পবিত্র সন্তান দান করুন। নিশ্চয়ই আপনি প্রার্থনা শ্রবণকারী।’ (সুরা আলে ইমরান: ৩৮)

নেক নিয়তে পুত্র সন্তান চেয়েও দোয়া করা যেতে পারে। যেমন- رَبِّ هَبْ لِي مِنَ الصَّالِحِينَ ‘রাব্বি হাবলি মিনাস সালিহিন’, অর্থাৎ ‘হে আমার প্রতিপালক! আপনি আমাকে সৎকর্মশীল পুত্র সন্তান দান করুন।’ (সুরা সাফফাত: ১০০)

আরও পড়ুন: ১০টি গুরুত্বপূর্ণ দোয়া


বিজ্ঞাপন


গর্ভাবস্থার সুসংবাদটি বেশি মানুষকে জানানো উচিত নয়। অবশ্য ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর সবাইকে জানাতে বাধা নেই। রাসুল (স.) বলেছেন, ‘কিছু খুশির সংবাদ গোপন রাখতে হয়। কেননা প্রত্যেক সংবাদ শ্রবণকারী বন্ধু হয় না।’ (তাবরানি)

হাদিসটির উদ্দেশ্য হলো— হিংসা ও বদনজরের প্রভাব মানুষের ওপর পড়ে। আর যে শিশুটি আগমন করতে যাচ্ছে, তাকে বদনজর থেকে হেফাজতে রাখা একজন মায়ের দায়িত্ব। তাই মায়ের উচিত গর্ভের সংবাদ শুধু তাদেরই দেওয়া যারা তাতে খুশি হবে; কোনোরকম খারাপ কিছুকে মনে স্থান দেবে না। 

আল্লাহর কৃতজ্ঞতা আদায় করাও গর্ভবতী নারীর দায়িত্ব। এর প্রভাব আগত বাচ্চার মধ্যেও স্থানান্তরিত হয়। সারাজীবন চেষ্টা করেও অনেক নারী নিঃসন্তান থাকেন। তাই মাতৃত্বের উপলব্ধির পর থেকেই আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করতে থাকা গর্ভবতী নারীর জন্য একটি বরকতময় আমল। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আমার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো; অকৃতজ্ঞ হয়ো না।’ (সুরা বাকারা: ১৫২)

গর্ভাবস্থার ইবাদত অন্য সময়ের চেয়ে অনেক দামি ও মূল্যবান। তাই এই সময় আল্লাহর ইবাদত, জিকিরে মশগুল থাকা উচিত। নামাজের প্রতি অধিক যত্নশীল হওয়া উচিত। যত বেশি সম্ভব কোরআন তেলাওয়াত করা উচিত। এছাড়াও সবসময় পবিত্র থাকা, অজু অবস্থায় থাকার প্রতি গুরুত্বারোপ করে ইসলাম। এসব শারীরিক ও মানসিক প্রশান্তিরও কারণ। নামাজের সময় হলে রাসুল (স.) বেলাল (রা.)-কে বলতেন, নামাজের ব্যবস্থা করো এবং এর মাধ্যমে আমাকে তৃপ্ত করো। (আবু দাউদ: ৪৩৩৩)

আরও পড়ুন: জান্নাতে নবীজির আগে বেলালের পায়ের শব্দ, রহস্য কী?

মা হতে যাওয়া নারীকে ধৈর্য ও অল্পে তুষ্টির পরিচয় দিতে হবে। যেসব খারাপ অভ্যাস মানুষের জীবনকে নিকৃষ্ট বানিয়ে ফেলে যেমন হিংসা, অহংকার, মিথ্যা—এসব থেকে বেঁচে থাকার চেষ্টা করা গর্ভবতী নারীর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। অনর্থক বা অপ্রয়োজনীয় কথা কাজ পরিহার করাও আরেকটি মূল্যবান আমল। বেশি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না যাওয়া উচিত। এসব কাজে অনাগত সন্তানও অংশগ্রহণ করে। ফলে তার ওপরও এর প্রভাব পড়তে পারে এবং আল্লাহর সামনে মায়ের প্রত্যেকটা আমলের সাক্ষী হবে সে।

হারাম খাবার থেকে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে হবে গর্ভাবস্থায়। এ সময় যেহেতু মায়ের রক্ত গ্রহণ করে সন্তান বড় হয়, তাই এই রক্তে যেন পাপের সংমিশ্রণ না থাকে।

হারাম কাজ যেমন—পরপুরুষের প্রতি কুদৃষ্টি ও কুকল্পনা করা, টিভি কিংবা ডিভাইসের মাধ্যমে অনৈতিক কোনো কিছু উপভোগ করা, বেপর্দা চলাফেরা করা—এসব থেকেও দূরে থাকা বাঞ্ছনীয়।

আশা করা যায় আল্লাহ তাঁকে নেক সন্তান দান করবেন, যা তাঁর পরবর্তী জীবনকে করবে সুখময়। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘কষ্টের সঙ্গেই আছে সুখ।’ (সুরা ইনশিরাহ: ৬)

আল্লাহ প্রত্যেক গর্ভবতী মাকে সব ধরনের জটিলতা থেকে নিরাপদ রাখুন। গর্ভকালীন সময়ে ইসলামি নির্দেশনাগুলো মেনে চলার তাওফিক দান করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর