হজ ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ রুকন ও ফরজ ইবাদত। মহান আল্লাহ বলেন, ‘...এবং আল্লাহর ঘরের দিকে পথ ধরতে যে সক্ষম তার জন্য ওই ঘরের হজ করা অবশ্য কর্তব্য...।’ (সুরা আলে ইমরান: ৯৭) আল্লাহ তাআলা আরও বলেন, ‘আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য হজ ও ওমরা পূর্ণ করো...।’ (সুরা বাকারা: ১৯৬)
কারো ওপর হজ ফরজ হলে দেরি না করে দ্রুত আদায় করে নেওয়া উচিত। ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (স.) বলেছেন, ‘ফরজ হজ আদায়ে তোমরা বিলম্ব করো না। কারণ তোমাদের কারো জানা নেই তোমাদের পরবর্তী জীবনে কী ঘটবে।’ (মুসনাদে আহমদ: ২৮৬৭; সুনানে কুবরা বায়হাকি: ৪/৩৪০)
বিজ্ঞাপন
প্রাপ্তবয়স্ক, সুস্থ ও মক্কায় গিয়ে হজকার্য সম্পন্ন করে ফিরে আসার সামর্থ্য রাখে, এমন প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীদের জন্য জীবনে একবার হজ করা ফরজ। তবে নারীদের জন্য স্বামী বা মাহরাম পুরুষ সঙ্গে থাকা জরুরি। (ফতোয়ায়ে শামি: ২/৪৫৫)
আরও পড়ুন: নারীদের হজ ফরজ হওয়ার শর্ত ও বিশেষ মাসায়েল
তবে অসুস্থতা বা যেকোনো ওজরের কারণে কেউ ফরজ হওয়া হজ আদায় করতে না পারলে তার জন্য অন্য কাউকে দিয়ে বদলি হজ আদায় করানো অথবা নিজের জীবদ্দশায় বদলি হজের অসিয়ত করা উচিত।
কিন্তু কেউ যদি বদলি হজের অসিয়ত করার আগেই ইন্তেকাল করেন, তাহলে তার ওয়ারিশদের কর্তব্য হলো- তার সম্পদ থেকে তার পক্ষ থেকে কাউকে দিয়ে বদলি হজ আদায় করানো। আর সেই ব্যক্তির সম্পদ না থাকলে বালেগ ওয়ারিসদের স্বতঃস্ফূর্ত ব্যয়ের মাধ্যমে এই হজ করানো উচিত। হাদিস শরিফে এসেছে, আবদুল্লাহ ইবনে আববাস (রা.) বলেন, এক মহিলা রাসুল (স.)-এর কাছে এসে বলল, আমার মা মান্নত করেছিলেন যে, তিনি হজ করবেন। কিন্তু তা পূর্ণ করার আগেই মারা গেছেন। (এখন আমার করণীয় কী?)
বিজ্ঞাপন
রাসুলুল্লাহ (স.) বললেন, তুমি তার পক্ষ থেকে হজ আদায় করে নাও। বল তো, যদি তোমার মা কারো নিকট ঋণী হতেন তুমি কি তার ঋণ পরিশোধ করতে না? মহিলাটি বলল, হ্যাঁ। আল্লাহর রাসুল (স.) বললেন, তোমরা আল্লাহর ঋণ পরিশোধ করো। কেননা তিনি প্রাপ্য পাওয়ার অধিক হকদার। (সহিহ বুখারি: ১/২৪৯; আলমানাসিক: ৪২, ৪৩২; গুনইয়াতুন নাসিক: ২০)
আরও পড়ুন: কাবাঘর তাওয়াফের বিধান ও ফজিলত
সামর্থ্য থাকার পরও হজ না করার পরিণাম ভয়াবহ। ফরজ হজ ত্যাগ করলে ইহুদি-নাসারার মতো মৃত্যু হবে বলে হাদিসে সতর্ক করা হয়েছে। রাসুল (স.) বলেন, ‘বায়তুল্লাহর হজ করার জন্য যে ব্যক্তির পথসম্বল আছে এবং বাহন ইত্যাদির ব্যয় বহনের সামর্থ্য আছে অথচ সে হজ সম্পাদন করে না, সে ইহুদি কিংবা খ্রিস্টান হয়ে মৃত্যুবরণ করুক, তাতে কিছু যায়-আসে না।’ (তিরমিজি: ৮১২; বায়হাকি: ৩৬৯২)
হাদিসে কুদসিতে ‘আল্লাহ তাআলা বলেন, আমি আমার বান্দার শরীরকে সুস্থ রাখলাম, তার রিজিক ও আয়-উপার্জনে প্রশস্ততা দান করলাম। পাঁচ বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পরও যদি সে আমার ঘরের হজের উদ্দেশ্যে আগমন না করে তাহলে সে হতভাগ্য, বঞ্চিত।’ (ইবনে হিব্বান: ৩৬৯৫; মুসনাদে আবু ইয়ালা: ১০৩১; তবারানি: ৪৯০)
অতএব, হজের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিধান পালনে অবহেলা কাম্য নয়। কেউ যদি কোনো কারণে ফরজ হজ সম্পাদনের আগেই ইন্তেকাল করেন, তাহলে তার সন্তানদের উচিত- তার পক্ষ থেকে বদলি হজ করানো। কারণ, নবীজির হাদিস অনুযায়ী, আল্লাহ তাঁর প্রাপ্য পাওয়ার অধিক হকদার। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে বুঝার তাওফিক দান করুন। আমিন।

