রোববার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

ইকামতের আগে দাঁড়িয়ে যাওয়া কি বিদআত?

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৫ মে ২০২৪, ০৬:১০ পিএম

শেয়ার করুন:

ইকামতের আগে দাঁড়িয়ে যাওয়া কি বিদআত?

ইকামত হলো জামাতে নামাজ শুরু করার আহ্বান। এই আহ্বানের একটি বাক্য হলো- হাইয়া আলাস সালাহ অর্থাৎ নামাজের দিকে আসুন। অনেক মসজিদে দেখা যায়, ওই বাক্যটি উচ্চারিত হওয়ার আগে মুসল্লিরা দাঁড়ান না। আসলে তা-ই কি সঠিক পদ্ধতি, নাকি ইকামত শুরু হলেই দাঁড়িয়ে যাওয়া উত্তম?

এ বিষয়ে আমাদের ফিকহ-ফতোয়ার কিতাবাদিতে এসেছে, ‘মুয়াজ্জিন ইকামত দেওয়ার সময় যখন হাইয়া আলাস সালাহ বলবে তখন মুসল্লিরা দাঁড়িয়ে কাতারবন্দী হবে’—এর অর্থ এই নয় যে, তার পূর্বে দাঁড়ানো সুন্নতের খেলাফ, বরং অর্থ হচ্ছে- কাতারে দাঁড়ানোর সময় হাইয়া আলাস সালাহ থেকে দেরি না করা। যেমনটি ইলাউস সুনানে এ বিষয়ে সকল বক্তব্য উদ্ধৃত করার পর আল্লামা তাহতাবি (রহ)-এর বক্তব্য নকল করা হয়েছে- ‘স্পষ্ট হলো এই যে, এর চেয়ে দেরি করা যাবে না, কিন্তু আগে করা যাবে না—এমন নয়। সুতরাং কেউ যদি ইকামতের শুরুতেই দাঁড়িয়ে পড়ে, তাহলে এতে কোনো সমস্যা নেই। (ইলাউস সুনান: ৪/৩২৮)


বিজ্ঞাপন


বরং ইকামতের প্রথম থেকে দাঁড়ানো উত্তম, যাতে জামাতের কাতার ঠিক করতে অসুবিধা না হয়। (তথ্যসূত্র: সুনানে আবু দাউদ: ১/৯৭, ফাতহুল বারি: ২/১০০, শরহে বেকায়া: ১/৫৫, হাশিয়ায়ে হালবি: ১৮০)

আরও পড়ুন: স্বামী কি মৃত স্ত্রীর গোসল দিতে পারবে?

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- أَنَّ الصَّلَاةَ كَانَتْ تُقَامُ لِرَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَيَأْخُذُ النَّاسُ مَصَافَّهُمْ، قَبْلَ أَنَّ يَقُومَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَقَامَهُ ‘রাসুলুল্লাহ (স.)-এর জন্য সালাতের ইকামাত বলা হতো। তিনি আপন জায়গায় দাঁড়াবার পূর্বেই লোকেরা নিজ নিজ কাতারে দাঁড়িয়ে যেত।’ (সহিহ মুসলিম: ১/২২০, হাদিস নং: ৬০৫, ইফাবা: ১২৪৬)

অন্য হাদিসে হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন- أُقِيمَتِ الصَّلَاةُ، فَقُمْنَا، فَعَدَّلْنَا الصُّفُوفَ، قَبْلَ أَنْ يَخْرُجَ إِلَيْنَا رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، ” فَأَتَى رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَتَّى إِذَا قَامَ فِي مُصَلَّاهُ ‘একদা সালাতের ইকামাত দেওয়া হয়। তখন আমরা দাঁড়িয়ে গেলাম এবং রাসুলুল্লাহ (স.) আমাদের সামনে বের হয়ে আসার আগে আমরা কাতারগুলো সোজা করে নিলাম। এরপর রাসুলুল্লাহ (স.) এসে তাঁর মুসাল্লায় গিয়ে দাঁড়ালেন।’ (সহিহ মুসলিম: ১/২২০,হাদীস নং: ৬০৫, ইফাবা: ১২৪৪)


বিজ্ঞাপন


তাই মুসল্লিগণ ইকামত শুরু হওয়ার সময় দাঁড়িয়ে যাবে। যাতে ইকামতের শেষ পর্যন্ত কাতার সোজা হয়ে যায় এবং ইকামত শেষ হওয়ার পর ইমাম সাহেব নামাজ শুরু করতে পারেন। আর কাতার সোজা করা নামাজের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এবং নামাজের পূর্ণতার শর্ত। (সুনানে তিরমিজি: ১/৩১, হাদিস নং: ২২৭; সুনানে ইবনে মাজাহ-১/৭১, হাদিস নং: ৯৯৩, মুসনাদে আহমদ: ৩/১৭৭, হাদিস নং: ১২৮৪৪)

আরও পড়ুন: সেজদার সময় আগে হাঁটু জমিনে রাখবেন নাকি হাত?

ঘটনাক্রমে কখনো এমনও হয়েছে যে, বেলাল (রা.) রাসুল (স.)-এর আগমনের পূর্বেই ইকামত দিয়ে দিয়েছেন। আর সাহাবাগণও ইকামত শুনে দাঁড়িয়ে নবীজির জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন। তখন দয়াল নবী (স.) দয়ার্দ্রতার কারণে বলেন যে, আমি বের হবার আগে ইকামত হয়ে গেলে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করবে না। বরং যখনি আমাকে দেখতে পাবে তখন নামাজে জন্য দাঁড়াবে। এ সম্পর্কে হজরত আবু কাতাদা (রা.) বর্ণনা করেন- قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِذَا أُقِيمَتِ الصَّلَاةُ فَلَا تَقُومُوا حَتَّى تَرَوْنِي ‘রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, যখন সালাতের ইকামাত দেওয়া হয় আমাকে না দেখা পর্যন্ত তোমরা দাঁড়াবে না।’ (সহিহ মুসলিম: ১/২২০, হাদিস নং: ৬০৪, ইফাবা: ১২৪২)

এ হাদিসের উদ্দেশ্য এমন নয় যে, হাইয়া আলাস সালাহ বলার আগ পর্যন্ত বসে থাকবে। ফুকাহায়ে কেরামগণ কোথাও এ কথা বলেননি যে, এ সময় পর্যন্ত বসে থাকা জরুরি বা সুন্নত। বরং কেউ যদি ইকামতের শুরুতে না দাড়িয়ে বসে থাকে, তাহলে তার বসে থাকার সর্বোচ্চ সীমা হল, হাইয়া আলাল ফালাহ পর্যন্ত—এটাই হলো ফকিহদের বক্তব্য। ফুকাহায়ে কেরামের কথা না বুঝার কারণে অনেকের মধ্যে বিষয়টি নিয়ে ভুল বোঝাবুঝি রয়েছে। والظاهر أنه احتراز عن التاخير لا التقديم حتى لو قام أول الإقامة لا بأس (طحطاوى على الدر المختار-1/189)

সুতরাং ইকামত শুরু হলে বসে থাকা নয়, বরং দাঁড়িয়ে যাওয়াটাই হলো নবীজি ও সাহাবিদের আমলের অনুকূল। আর জরুরি ভেবে বসে থাকা সুন্নতের খেলাফ। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে প্রত্যেক বিষয়ে সুন্নত মেনে আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর