ঈমান আনার পর একজন মুসলমানের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজটি হলো পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া। রাসুলুল্লাহ (স.) নামাজ পড়ার নিয়ম-কানুন সবিস্তারে বর্ণনা করেছেন। ওসব নিয়ম-কানুনের মধ্যে কিছু কাজ এমন রয়েছে, যা করলে সমস্যা নেই, না করলেও গুনাহ নেই। আবার কিছু কাজ একটু আগ-পিছ হলেও সমস্যা নেই। তেমনই একটি বিষয় হলো—সেজদার সময় জমিনে হাত আগে রাখা সুন্নত নাকি হাঁটু?
নবীজির হাদিস থেকে জানা যায়, রাসুলুল্লাহ (স.) সেজদা দিতে গিয়ে কোনোসময় আগে জমিনে হাত রেখেছেন বা রাখতে বলেছেন, কোনোসময় হাঁটু আগে রেখেছেন। ওসব হাদিস কোনোটাই মওজু নয়। তাই দুটোই সুন্নত। তবে ইমাম আবু হানিফা (রহ.) আগে হাঁটু রাখার পক্ষে নিজের মত ব্যক্ত করেছেন। এই মতের সমর্থনে একটি হাদিসে দেখা যায়—ওয়াইল ইবনে হুজর (রা.) বলেন, আমি রাসুল (স.)-কে দেখেছি তিনি যখন সেজদায় যেতেন তখন হাত রাখার আগে হাঁটু রাখতেন। আর যখন সেজদা থেকে উঠতেন তখন হাঁটুর আগে হাত উঠাতেন। (আবু দাউদ: ৮৩৮, তিরমিজি: ৩৬৮, নাসায়ি: ১০৮৯)
বিজ্ঞাপন
ইমাম তিরমিজি (রহ.) এই হাদিস উল্লেখ করে বলেন, হাদিসটি হাসান-গারিব। এই হাদিস অনুসারে অধিকাংশ আলেমের আমল। তারা মনে করেন, হাত রাখার পূর্বে হাঁটু রাখবে এবং হাঁটুর পূর্বে হাত উঠাবে না। (তিরমিজি: ২৬৮)
শাব্দিক কিছু তারতম্যসহ হাদিসটি আবু দাউদ, নাসায়ি এবং ইবনে মাজায়ও বর্ণিত হয়েছে। (জামিউল উসুল: ৩৫১৭)
অন্যদিকে, সেজদার সময় জমিনে আগে হাত রাখার ব্যাপারেও হাদিস রয়েছে। যেমন—আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘যখন তোমাদের কেউ সেজদা করে, তখন সে যেন উটের মতো না বসে। বরং সে যেন তার উভয় হাত উভয় হাঁটুর পূর্বে মাটিতে রাখে’ (আবুদাউদ, নাসায়ি, দারেমি, মেশকাত: ৮৯৯; ‘সেজদা ও তার ফজিলত’ অনুচ্ছেদ)
আরও পড়ুন
উটের গোশত খেলে কি অজু ভেঙে যায়?
স্বামী-স্ত্রী কে কোন পাশে ঘুমানো সুন্নত?
স্বামী কৃপণ হলে স্ত্রীর গোপনে যা করা জায়েজ
এছাড়াও রুকু থেকে সেজদায় যাওয়ার সময় জমিনে আগে হাত কিংবা হাঁটু রাখা নিয়ে অনেক বর্ণনা রয়েছে। এসব নিয়ে বিতর্ক করার সুযোগ নেই। এই বিষয়ে প্রখ্যাত ইসলামিক স্কলার শাইখ আহমাদুল্লাহ একটি সুন্দর কথা বলেছেন। তা হলো— ‘ইমাম আবু হানিফার দৃষ্টিতে সেজদার সময় হাঁটুর আগে হাত রাখার বিষয়টি হয়ত নবীজির অসুস্থতার সময়ের। যাই হোক- দুই মতের পক্ষেই হাদিস রয়েছে, কিন্তু কামড়াকামড়ির পক্ষে কোনো হাদিস নেই।’
বিজ্ঞাপন
প্রসঙ্গত, হানাফি মাজহাবমতে, সেজদার সময় আগে হাঁটু রাখার হাদিসগুলো অধিক সমৃদ্ধ। একইসঙ্গে বৃদ্ধ, অসুস্থ বা মাজুর (অপারগ) কষ্টকর হলে জমিনে আগে হাত রাখলেও কোনো অসুবিধা নেই। (তথ্যসূত্র: বাদায়েউস সানায়ে, খণ্ড : ০১, পৃষ্ঠা- ৪৯১; ফতোয়া তাতারখানিয়া, খণ্ড: ০২, পৃষ্ঠা-১৭২; তাবয়িনুল হাকায়িক, খণ্ড: ০১, পৃষ্ঠা-৩০২)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে শাখাগত বিষয়ে বিতর্ক করা থেকে হেফাজত করুন। নবীজির সুন্নতকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে জীবন পরিচালনা করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

