হজ নারী-পুরুষ উভয়ের ওপর ফরজ। আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেন, ‘মানুষের মধ্যে যারা সেখানে (বায়তুল্লাহ) পৌঁছার সামর্থ্য রাখে, তাদের ওপর আল্লাহর উদ্দেশে এ গৃহের হজ করা ফরজ। আর কেউ যদি অস্বীকার করে তাহলে তোমাদের জেনে রাখা উচিত, আল্লাহ তাআলা সৃষ্টিজগতের প্রতি মুখাপেক্ষী নন।’ (সুরা আলে ইমরান: ৯৭)
তবে, পুরুষের মতো আর্থিক ও শারীরিক সামর্থ্যবান হলেই নারীর ওপর হজ ফরজ হয় না, বরং নারীর জন্য কিছু অতিরিক্ত শর্ত পূরণ হওয়া জরুরি। স্বামী বা মাহরাম ছাড়া মহিলাদের হজে গমন শরিয়তের দৃষ্টিতে জায়েজ নয়, এতে হজ মাকরুহের সঙ্গে আদায় হয়ে গেলেও মহিলা গুনাহগার হবে। (আল জাওহারা: ১/১৫০)
বিজ্ঞাপন
আবার, মাহরামের হজের খরচ সম্পন্ন করার সক্ষমতা থাকতে হবে। কেবল নিজের হজ করার সামর্থ্য থাকলেও নারীর জন্য হজ ফরজ হয় না। তবে, মাহরাম যদি ফরজ হজ করতে যায়, সেক্ষেত্রে তার সঙ্গে গেলে খরচ দেওয়ার প্রয়োজন হবে না। (বাহরুর রায়েক: ২/৩৩৯)
আরও পড়ুন: হজের সময় পিরিয়ড শুরু হলে করণীয়
বিবাহিত নারীর ফরজ হজের জন্য স্বামীর অনুমতি নেওয়া বাধ্যতামূলক নয়, তবে অনুমতি নেওয়া মোস্তাহাব। যদি অনুমতি না দেয়, প্রথমে স্বামীকে হজের গুরুত্ব সম্পর্কে বোঝাতে হবে। সম্ভব হলে তাকে রাজি করে তার সাথেই হজে যাওয়া উচিত হবে। অনুমতি না দিলে ভাইয়ের সঙ্গে অথবা বাবার সঙ্গে (যেকোনো মাহরামের সঙ্গে) হজ করা যাবে। কারণ, ফরজ হজ আদায়ে স্বামীর অনুমতি বাধ্যতামূলক নয়।
তবে নফল হজ কিংবা ওমরা আদায়ের জন্য সফর করতে চাইলে অবশ্যই স্বামীর অনুমতি নিতে হবে। তার অনুমতি ছাড়া যাওয়া যাবে না। (বাদায়েউস সানায়ে: ২/৩০০; তাতারখানিয়া: ৩/৪৭৫; আদ্দুররুল মুখতার: ২/৪৬৫; গুনইয়াতুন নাসিক: ২৮)
বিজ্ঞাপন
পাঁচটি শর্তে হজ ফরজ হয়। ১. মুসলিম হওয়া ২. আকল থাকা বা পাগল না হওয়া ৩. বালেগ বা প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া ৪. আজাদ বা স্বাধীন হওয়া অর্থাৎ কারো গোলাম না হওয়া এবং ৫. দৈহিক ও আর্থিকভাবে সামর্থ্যবান হওয়া। মহিলাদের ক্ষেত্রে আরেকটি শর্ত যুক্ত হবে, সেটি হলো- সঙ্গে স্বামী বা ‘মাহরাম’ (যেসব পুরুষের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাত জায়েজ) থাকা।
আরও পড়ুন: যেসব মাসয়ালা নারীদের জানা জরুরি
হজ অনেক ফজিলতপূর্ণ আমল। হজ কবুল হলে মানুষ নিষ্পাপ হয়ে যায়। আর মাবরুর হজের বিনিময় হলো জান্নাত। মাবরুর হজ বলতে হজের কাজ ও বিধি-বিধানগুলো যথাযথা আদায় করাকে বুঝায়। এরকম হজের বিনিময় হলো জান্নাত। (বুখারি: ১৭৭৩; মুসলিম: ১৩৪৯; আহমদ: ৭৩৫৪; সহিহ ইবনে হিববান: ৩৬৯৫)
ফরজ হজ না করার পরিণাম ভয়াবহ। আল্লাহর যেকোনো ফরজ নির্দেশ অমান্য করা বড় গুনাহ। ফরজ হজ ত্যাগকারীর বিষয়ে তাফসিরে এসেছে, সে ইহুদি হয়ে মৃত্যুবরণ করল কি খ্রিস্টান হয়ে, তার কোনো পরোয়া আল্লাহর নেই।’ (ইবনে কাসির: ১/৫৭৮) হাদিস শরিফে এধরণের মানুষকে বঞ্চিত উপাধি দেওয়া হয়েছে। হাদিসে কুদসিতে এসেছে, ‘যে বান্দাকে আমি দৈহিক সুস্থতা দিয়েছি এবং আর্থিক প্রাচুর্য দান করেছি, অতঃপর (গড়িমসি করে) তার পাঁচ বছর অতিবাহিত হয়ে যায় অথচ আমার দিকে (হজব্রত পালন করতে) আগমন করে না, সে অবশ্যই বঞ্চিত।’ (ইবনে হিব্বান: ৩৭০৩)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে হজের বিধি-বিধান উপলব্ধি করার তাওফিক দান করুন। প্রতিটি ক্ষেত্রে শরিয়তের নির্দেশনা অনুযায়ী জীবন পরিচালনার তাওফিক দান করুন। আমিন।

