রোববার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

মদিনার ৭টি দর্শনীয় স্থান, ভ্রমণে বাধা নেই যেখানে

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৫ এপ্রিল ২০২৪, ০৭:২২ পিএম

শেয়ার করুন:

মদিনার ৭টি দর্শনীয় স্থান, ভ্রমণে বাধা নেই যেখানে

প্রতিবছর লাখ লাখ মুসলিম হজ ও ওমরা পালন করতে গিয়ে ইসলামের প্রথম রাজধানী মদিনায় যান। মক্কার পরে এই শহরকে ইসলামে দ্বিতীয় পবিত্র শহর হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কারণ সেখানে নবী (স.) দ্বারা নির্মিত ‘নবীর মসজিদ’ তথা মসজিদে নববি অবস্থিত।

৬২২ সালে নির্মিত এই মসজিদটি আজও বিশ্বের বৃহত্তম মসজিদগুলোর অন্যতম হিসেবে বিবেচিত। ইসলামের প্রথম মসজিদ ‘মসজিদে কুবা’ এই মদিনা শহরে অবস্থিত। 


বিজ্ঞাপন


ইসলামের আবির্ভাবের আগে মদিনা শহরটির নাম ছিল ‘ইয়াথ্রিব’। বাণিজ্যিক ও ভৌগোলিক গুরুত্বের দিক থেকে সেসময় এটি বেশ সুপরিচিত ছিল। কারণ এই শহরে তখন একাধারে পাহাড়, সমতল, মরূদ্যান, সোনা, রূপা ও তামার খনি ছিল।

সৌদি পর্যটন ওয়েবসাইট ‘ভিজিট সৌদি’ অনুসারে, মুসলিম ও বিদেশিরা কোনো বাধা ছাড়াই মদিনার পর্যটন স্থানগুলোতে ভ্রমণ করতে পারবেন। এই স্থানগুলোর মধ্যে রয়েছে জাবাল উহুদ, জাবাল জাবাব, জাবাল আল রামাহ (তীরন্দাজ পাহাড়) এবং জাবালে নূর। এসব স্থানের ধর্মীয় গুরুত্ব রয়েছে। এছাড়া মদিনায় অনেক জাদুঘরও আছে, যেখান থেকে আপনি এই শহরটির ইতিহাস সম্বন্ধে নিমিষেই জানতে পারবেন। মদিনার সেরকম কিছু দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে বলা হয়েছে এই লেখায়।

কুবা মসজিদ
মসজিদে নববি থেকে মাত্র সাড়ে তিন কিলোমিটার দূরে কুবা মসজিদ অবস্থিত। এটি ইসলামের ইতিহাসে প্রথম মসজিদ, যার ভিত্তি মহানবী (স.) নিজ হাতে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এটি বিশ্বাস করা হয় যে মদিনায় প্রবেশের আগে তিনি চারদিন কুবায় কাটিয়েছিলেন। মুসলমানরা আরও বিশ্বাস করেন, মসজিদে কুবায় নামাজ পড়া ওমরা’র সমান পূণ্যের কাজ। এর অনন্য স্থাপত্য এবং ঐতিহাসিক তাত্পর্যের জন্য অনেক লোক এটি পরিদর্শন করে। সাতচল্লিশ মিটার উচ্চতার একটি সাদা গম্বুজসহ এই মসজিদে চারটি মিনার রয়েছে, এর মধ্যে প্রথম মিনারের নির্মাণের কৃতিত্ব হজরত ওমর ইবনে আবদুল আজিজের।

হিজাজ রেলওয়ে
সিরিয়ার রাজধানী দামেস্ক ও মদিনার মাঝে সংযোগ স্থাপন করার জন্য ১৯০০ সালের দিকে হিজায রেলওয়ের নির্মাণকাজ শুরু করা হয়েছিল। কারণ সেসময় দামেস্ক থেকে মক্কায় পৌঁছাতে অন্তত ৪০ দিন সময় লাগতো। যাত্রাপথে শুষ্ক মরুভূমি আর পাহাড়ি পথ পাড়ি দিতে গিয়ে কাফেলার বহু যাত্রীর মৃত্যু হত। কিন্তু ১৯০৮ সালে এটি চালু হলে সেই ৪০ দিনের যাত্রা নেমে আসে মাত্র পাঁচ দিনে।


বিজ্ঞাপন


hijaj
১৯০০ সালের দিকে হিজায রেলওয়ে’র নির্মাণকাজ শুরু করা হয়েছিল।

যদিও প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় এটি ক্ষতিগ্রস্ত হলে ১৯১৬ সালে এটি বন্ধ হয়ে যায়। হিজায রেলওয়ে স্টেশনের কাছেই আছে মাদাইন সালেহ বা আল-হাজর কিলা। এটি সৌদি আরবের ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট। এখানে প্রথম শতাব্দীতে নাবাতিয়ান সাম্রাজ্যের ধ্বংসাবশেষ পাওয়া যায়। সেখানে পর্যটকদের জন্য ১১১টি সমাধি উন্মুক্ত রয়েছে। সেখানকার গুহায় প্রাচীন চিত্রকর্মের চিহ্ন পাওয়া যায়।

আরও পড়ুন: মসজিদে নববিতে ৪৭০০ ইতেকাফকারী, পাচ্ছেন একগুচ্ছ সেবা

উরওয়া বিন আল-জুবায়ের প্যালেস
প্রথম হিজরি সালে নির্মিত ইসলামী যুগের সূচনার অন্যতম নিদর্শন এই স্থানটি, যা মসজিদে নববি থেকে প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এটি কাদা ও পাথর দিয়ে তৈরি করা হয়েছিল। মেঝের কোথাও কোথাও আবার ইটের টাইলস ও লাভা পাথর আছে।

zubair_palace
উরওয়া বিন আল-জুবায়ের প্যালেস

এখানে তিনটি বিশাল বাগান, একাধিক কক্ষ (প্রাচীন স্থাপত্য, আসবাব দিয়ে সজ্জিত) ও রান্নাঘর রয়েছে। এখানে একটি জলকূপও রয়েছে। ধারণা করা হয়, মক্কার তীর্থযাত্রীরা পানি পান করার জন্য এই জলকূপটি ব্যবহার করতো।

কিবলাতিন মসজিদ
মদিনার বনু সালামা এলাকায় অবস্থিত এই মসজিদ সম্পর্কে বলা হয়, দুই হিজরিতে এই মসজিদে নামাজের সময় ‘কিবলা’ (নামাজের সময় যেদিকে মুখ করে দাঁড়ানো হয়) পরিবর্তনের নির্দেশ পাওয়া যায়। নবী (স.)-এর সাথে তাঁর সাথীরা নামাজের সময় জেরুজালেমের ‘বাইতুল মুকাদ্দাস’ বা ‘বাইতুল মাকদিস’-এর পরিবর্তে মক্কার কাবার দিকে মুখ ফিরিয়েছিলেন। যেহেতু এই মসজিদে দু’টি ভিন্ন কিবলার দিকে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করা হয়েছে, তাই এই মসজিদের নামকরণ করা হয় ‘মসজিদ কিবলাতিন বা মসজিদে কিবলাতাইন, অর্থাৎ দু’টি কিবলাবিশিষ্ট মসজিদ।

qiblatain-mosque
এই মসজিদে নামাজের সময় ‘কিবলা’ পরিবর্তনের নির্দেশ পান নবীজি (স.)

মসজিদের ভেতরের অংশটি গম্বুজ বিশিষ্ট এবং বাইরের খিলানটি উত্তর দিকে। অটোমান বা উসমানীয় সাম্রাজ্যের সময় এই মসজিদকে পুনরায় নির্মাণ করা হয়েছিল। সৌদি বাদশা ফাহাদ বিন আবদুল আজিজের শাসনামলে এটির সংস্কার কাজ করা হয়েছিল।

আরও পড়ুন: মসজিদে নববির ছাদে ৯০ হাজার মুসল্লির নামাজের ব্যবস্থা

আল বিনতে ড্যাম ও খাইবার
খাইবারে অজস্র প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন রয়েছে, যা দর্শনার্থীদেরকে মুগ্ধ করবে। যদিও খাইবারে অবস্থিত আল বিনতে ড্যাম (ড্যাম মানে হল বাঁধ, যা পানিকে আটকে রাখে) কিভাবে নির্মাণ করা হয়েছিল, সেই ঐতিহাসিক গল্পগুলোর মাঝে ভিন্নতা আছে। কিন্তু সেই ভিন্নতা বাঁধের সৌন্দর্যের ক্ষেত্রে বাধা হিসেবে প্রতিপন্ন হবে না। আল বিনতে ড্যাম, যা সাহবা ড্যাম নামেও পরিচিত। ধারণা করা হয় যে আজ থেকে তিন হাজার বছর পূর্বে, শেবা যুগে এটি নির্মাণ করা হয়েছিল। এই বাঁধ অনেকেটা ইয়েমেনের মারিব ড্যামের মতো দেখতে। এর শক্তিশালী পাথর হেরাত খাইবারকে অন্য পাশের বাঁধের পানি থেকে আলাদা করেছে।

dam
খাইবারে অজস্র প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন রয়েছে।

এই বাঁধের সামনে দাঁড়ালে আপনি অনুভব করবেন যে বাঁধের বিশালতার তুলনায় আপনি কত ক্ষুদ্র। কারণ এর উচ্চতা ৫০ মিটার, দৈর্ঘ্য ২৫০ মিটার ও প্রস্থ ১০ মিটার। বাঁধের চারপাশের প্রকৃতি অন্যান্য এলাকার চেয়ে আলাদা দেখতে। সেখানে খেজুর সহ অন্যান্য ফলের গাছ আছে।

তবে বাঁধের অবকাঠামো আপনার দৃষ্টি কাড়বে। কারণ এতে পানি ছাড়ার জন্য কোনও দরজা বা গেট নেই এবং এর সিঁড়িগুলো পাথরের তৈরি। মানুষ এগুলো দিয়ে নীচে নামে অথবা পানি পরিমাপের ক্ষেত্রেও ব্যবহার করে। তবে এই বাঁধের একাংশ ইতোমধ্যে ধসে পড়েছে। বাঁধের দিকে মুখ করা যে সড়কটি আছে, তা দিয়ে সহজেই যানবাহন নিয়ে প্রবেশ করা যায়।

আলী মসজিদ
মদিনার মসজিদ ফাতেহ এলাকায় ‘আলী ইবনে আবি তালিব’ মসজিদ অবস্থিত, সংক্ষেপে যাকে বলা হয় আলী মসজিদ। এই স্থানটি ইসলামিক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রতীক। এটি নির্মাণ করা হয়েছিল ৭০৬ ও ৭১২ সালের মাঝামাঝি সময়ে এবং ১৯৯০ সালে সৌদি বাদশা ফাহাদ ইবনে আবদুল আজিজের শাসনামলে এটিকে সংস্কার করা হয়েছিলো।

Masjid_Ali
আলী মসজিদ যে জায়গাটিতে নির্মাণ করা হয়েছে সেখানে ইসলামের নবী ঈদের নামাজ আদায় করেছিলেন।

এই মসজিদের দৈর্ঘ্য ৩১ মিটার বা ৯৩ ফুট এবং প্রশস্ততা ২২ মিটার বা ৬৬ ফুট। এর সাতটি গম্বুজ আছে। আলী মসজিদ যে জায়গাটিতে নির্মাণ করা হয়েছে সেখানে নবী (স.) ঈদের নামাজ আদায় করেছিলেন। তাঁর মৃত্যুর পর হজরত আলী (রা.)-ও একই স্থানে ঈদের নামাজ পড়েছিলেন।

জান্নাত আল-বাকি
মদিনার প্রাচীনতম কবরস্থানের নাম জান্নাত আল-বাকি, এটি মসজিদে নববির কাছে অবস্থিত। রাসুলুল্লাহ (স.)-এর অনেক সাহাবি ও পরিবারের সদস্যসহ অনেকে এখানে সমাহিত। ‘বাকি’ মানে সেই জায়গাকে বোঝানো হয়, যেখানে বন্য গাছপালা পাওয়া যায়। কবরস্থানে প্রবেশের জন্য উত্তর, পূর্ব ও পশ্চিম দিক থেকে তিনটি প্রবেশদ্বার আছে। 

মসজিদে নববির সর্বশেষ সম্প্রসারণের সময় কবরস্থান ও মসজিদে নববির মাঝে যে বাড়িগুলো ছিল, সেগুলোকে উচ্ছেদ করা হয়। তারপর জান্নাত আল-বাকি’কে মসজিদে নববির পূর্বদিকের প্রাঙ্গণের সাথে সংযুক্ত করে দেওয়া হয়।

সূত্র : বিবিসি বাংলা

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর