মৃত্যু যেমন অনিবার্য, মৃত্যুর যন্ত্রণাও অবধারিত। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘মৃত্যুযন্ত্রণা সত্যই আসবে। এটা হতে তোমরা অব্যাহতি চেয়ে এসেছ।’ (সুরা কাফ: ১৯) রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই। নিশ্চয়ই মৃত্যুর যন্ত্রণা অনেক কঠিন।’ (সহিহ বুখারি: ৬৫১০)
মৃত্যুর সময় মহানবী (স.)-এরও কষ্ট হয়েছিল। আয়েশা (রা.) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (স.)-কে মুমূর্ষু অবস্থায় দেখেছি একটি পানিভর্তি বাটি তাঁর সামনে রাখা ছিল। তিনি সেই বাটিতে তাঁর হাত প্রবেশ করাচ্ছিলেন এবং পানি দিয়ে তাঁর মুখমণ্ডল মলছিলেন। আর বলছিলেন, ‘হে আল্লাহ! মৃত্যুকষ্ট ও মৃত্যুযন্ত্রণা হ্রাসে আমায় সহায়তা করুন।’ (সুনানে তিরমিজি: ৯৭৮)
বিজ্ঞাপন
তবে বিশ্বাসী ও অবিশ্বাসীর মৃত্যু যন্ত্রণার ধরণ ও কারণ একরকম নয়। পাপীদের ব্যাপারে ইরশাদ হয়েছে, ‘তুমি যদি দেখতে পেতে ফেরেশতারা অবিশ্বাসীদের মুখমণ্ডল ও পিঠে আঘাত করে তাদের প্রাণহরণ করছে এবং বলছে, তোমরা দহনযন্ত্রণা ভোগ করো।’ (সুরা আনফাল: ৫০)
সুন্দর মৃত্যুর ১০ আমল
হঠাৎ মৃত্যু থেকে বাঁচার দোয়া
মৃত্যু আসার আগে যেসব কাজ দ্রুত শেষ করবেন
আরও ইরশাদ হয়েছে, ‘যদি তুমি দেখতে পেতে যখন অবিচারকারীরা মৃত্যুযন্ত্রণায় থাকবে এবং ফেরেশতারা হাত বাড়িয়ে বলবে, তোমাদের প্রাণ বের করো। তোমরা আল্লাহ সম্পর্কে অন্যায় বলতে ও তাঁর নিদর্শন সম্পর্কে ঔদ্ধত্য প্রকাশ করতে। সেজন্য আজ তোমাদের অবমাননাকর শাস্তি দেওয়া হবে।’ (সুরা আনআম: ৯৩)
অন্যদিকে, মুমিনের মৃত্যুযন্ত্রণা গুনাহ মাফ বা মর্যাদা বৃদ্ধির কারণ। এ বিষয়ে এক বর্ণনায় এসেছে, রাসুলুল্লাহ (স.) আয়েশা (রা.)-এর কাছে উপস্থিত হন। তখন তাঁর এক নিকটতম প্রতিবেশী মৃত্যুযন্ত্রণায় ছটফট করছিল। নবী (স.) তাকে চিন্তিত দেখে বলেন, ‘তোমার প্রতিবেশীর কারণে তুমি চিন্তিত হয়ো না। কেননা এটা সৎকর্মগুলোর অন্তর্ভুক্ত।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ: ১৪৫১)
বিজ্ঞাপন
এই হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয়, মুমিনের মৃত্যুযন্ত্রণা তার মর্যাদা বৃদ্ধির কারণ। অন্য হাদিসে এসেছে, ‘আল্লাহ যখন কোনো মুমিনের জন্য কোনো মর্যাদার স্তর নির্ধারণ করেন এবং নিজ আমল দ্বারা যদি তা অর্জন করতে না পারে, তখন আল্লাহ তাঁর শরীর বা তাঁর সম্পদ অথবা তাঁর সন্তানদের বিপদগ্রস্ত করেন। অতঃপর মুমিন ধৈর্যধারণ করার ফলে সে পূর্বনির্ধারিত মর্যাদার স্তরে পৌঁছে যায়।’ (সুনানে আবি দাউদ: ৩০৯০)
জানাজার নামাজের নিয়মকানুন, গুরুত্ব ও ফজিলত
মৃত মা-বাবার জন্য সন্তানের করণীয়
শহীদরা জান্নাতে সবুজ পাখি হয়ে যা করবেন
সবচেয়ে কম মৃত্যুযন্ত্রণা হয় শহীদের। আল্লাহর রাস্তার শহীদদের মৃত্যু সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘তোমাদের কাউকে পিঁপড়া কামড়ালে যতটুকু কষ্ট অনুভব করো, শহীদের নিহত হওয়ার কষ্ট তার চেয়ে বেশি হবে না।’ (সুনানে নাসায়ি: ৩১৬১)
মৃত্যুযন্ত্রণা হালকা হওয়ার দোয়া
মৃত্যুশয্যায় মহানবী (স.) মৃত্যুযন্ত্রণা হালকা হওয়ার জন্য দুটি দোয়া করেন। তা হলো—১. اللَّهُمَّ أَعِنِّي عَلَى غَمَرَاتِ الْمَوْتِ উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা আঈন্নী আলা গামারা-তিল মাউত।’ অর্থ: ‘হে আল্লাহ, মৃত্যুকষ্ট ও মৃত্যুযন্ত্রণা হ্রাসে আমায় সহায়তা করুন।’ (সুনানে তিরমিজি: ৯৭৮)
২. اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي وَارْحَمْنِي وَأَلْحِقْنِي بِالرَّفِيقِ الأَعْلَى উচ্চারণ: ‘আল্লা-হুম্মাগফিরলী ওয়ারহামনী ওয়ালহিকনী বিররাফীকিল আ’লা।’ অর্থ: ‘হে আল্লাহ, আমাকে ক্ষমা করুন, আমার প্রতি দয়া করুন, আর আমাকে মহান বন্ধুর সঙ্গে মিলিত করুন।’ (সহিহ বুখারি: ৫৬৭৪)
আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে নেককার মুমিন হিসেবে কবুল করুন। মৃত্যুযন্ত্রণা থেকে রক্ষা করুন। আমিন।

