মোহরানা নারীর অর্থনৈতিক অধিকার। এই মোহরানা এক ধরনের উপঢৌকন। তা সন্তুষ্টচিত্তে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আল্লাহ তাআলা। ইরশাদ হয়েছে- وَ اٰتُوا النِّسَآءَ صَدُقٰتِهِنَّ نِحۡلَۃً ‘আর তোমরা নারীদের তাদের মোহরানা স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে প্রদান করো...।’ (সুরা নিসা: ৪) আরও ইরশাদ হয়েছে, ‘...সুতরাং তাদের অভিভাবকের অনুমতিক্রমে তাদের বিয়ে করবে এবং ন্যায়সঙ্গতভাবে তাদের প্রতিমূল্য (মোহরানা) আদায় করবে...।’ (সুরা নিসা: ২৫)
ছলে-বলে-কৌশলে নারীকে মোহর থেকে বঞ্চিত করা যাবে না। অতি ভালোবাসার ছল করে ‘মোহর মাফ’ করিয়ে নেওয়ার সংস্কৃতি চালু হয়েছে আমাদের সমাজে, যা ইসলাম সমর্থন করে না। যে স্বামীর মনে স্ত্রীর মোহর আদায়ের ইচ্ছাটুকুও নেই, হাদিস শরিফে তাঁকে বলা হয়েছে ‘ব্যভিচারী’। (মাজমাউজ জাওয়ায়েদ: ৪/৫২২-৫২৩)
বিজ্ঞাপন
আরও পড়ুন: স্ত্রী মাফ করে দিলে কি মোহর মাফ হয়?
তাই মোহরের পরিমাণ এমন হওয়া চাই, যা সাধারণত আগ্রহের বিষয় হয় এবং নারীর জন্য অর্থনৈতিক শক্তি ও সম্মানের বিষয় হয়। নবী কারিম (স.)-এর সুন্নাহ ও সাহাবায়ে কেরামের সাধারণ রীতি এক্ষেত্রে উত্তম আদর্শ। আবু সালামা ইবনে আবদুর রহমান বলেন, আমি উম্মুল মুমিমিন আয়েশা (রা.)-কে জিজ্ঞাসা করলাম, নবী কারিম (স.) কী পরিমাণ মোহর দিয়েছেন? তিনি বলেন, ‘নবী কারিম (স.) তাঁর স্ত্রীদের সাড়ে ১২ উকিয়া অর্থাৎ পাঁচ শ দিরহাম মোহর দিয়েছেন।’ (সহিহ মুসলিম: ১৪২৬; সুনানে আবু দাউদ: ২১০৫)
অনেক বিয়েতে বিশাল অংকের মোহরানা ধার্য করা হয়, যা পরিশোধ করা হয় না। অনেক সময় তা পরিশোধ করা ছেলের সাধ্যাতীত থাকে। ধার্যের সময় বলা হয়- মোহরানা দেয়ইবা কে, নেয়ইবা কে? এসব কথা ইসলামের বিপরীত। বরং মোহর যেহেতু পুরোটাই পরিশোধ করার বিষয়, শুধু লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে বেশি পরিমাণ মোহর ধরা জায়েজ হবে না। কিন্তু এভাবে নির্ধারণ করে ফেললেও সেই মোহরানা পুরোটাই স্ত্রীর প্রাপ্য এবং তা পুরোপুরিই স্ত্রীকে প্রদান করতে হবে।
বিজ্ঞাপন
তাই মোহর ধার্য করার ক্ষেত্রে উত্তম পন্থা হলো- স্ত্রীর বংশে তার সমমানের নারীদের বাস্তবসম্মত মোহর এবং স্বামীর আর্থিক সামর্থ্য—এ দুটি বিষয়কে বিবেচনায় নিয়ে মোহর নির্ধারণ করা এবং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব স্ত্রীকে তা পরিশোধ করে দেওয়া। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে মোহরানার টাকার ব্যাপারে এবং নারীর সকল অধিকারের ব্যাপারে সচেতনতা দান করুন। আমিন।
(রদ্দুল মুহতার: ৩/১০২; মাজমাউজ জাওয়ায়েদ: ৭৫০৭; তাফসিরে কুরতুবি: ৫/৬৭; ফাতহুল মুলহিম: ৩/৪৭৬; মাজমু ফতোয়া, লাখনবি: ৩/৪৮; ইমদাদুল আহকাম: ২/৩৬৫)

