বিয়ে বৈধ সাব্যস্ত হওয়ার জন্য মোহর পরিশোধ করা বাধ্যতামূলক। কোনোভাবেই এ মোহর আদায় না করার সুযোগ নেই। মোহরানা স্ত্রীর সম্মানের প্রতীক ও স্ত্রীর একচ্ছত্র অধিকার। মোহর পরিশোধ করার নির্দেশ দিয়ে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা নারীদেরকে তাদের মোহর দিয়ে দাও খুশিমনে। এরপর তারা যদি স্বেচ্ছায় সাগ্রহে ছেড়ে দেয় কিছু অংশ তোমাদের জন্য, তাহলে তা স্বাচ্ছন্দ্যে ভোগ করো।’ (সুরা নিসা: ৪)
এই আয়াতের প্রধান শিক্ষাটি হলো- মোহর আদায় করা ফরজ। কেননা স্বয়ং আল্লাহ তাআলা মোহর আদায়ের আদেশ করেছেন।
নারীর স্বতঃস্ফূর্ত সম্মতি ছাড়া অন্য কারো তাতে হস্তক্ষেপের সুযোগ নেই। সুতরাং স্বামী যেমন স্ত্রীকে মোহর থেকে বঞ্চিত করতে কিংবা পরিশোধ করার পর ফেরত নিতে পারে না তেমনি পিতা-মাতা, ভাইবোন বা অন্য কেউ নিজ কন্যার, বোনের বা আত্মীয়ার মোহর তার স্বতঃস্ফূর্ত সম্মতি ছাড়া হস্তগত করতে পারে না। করলে তা হবে অন্যের সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করা। যা সম্পূর্ণ হারাম।
আরও পড়ুন: বান্দার যে হকটি নষ্ট করলে ক্ষমার কোনো সুযোগ থাকে না
তাই মুমিনের কর্তব্য হবে খুশিমনে স্ত্রীর মোহর আদায় করা। তবে, স্ত্রী যদি স্বতঃস্ফূর্তভাবে মোহরের কিছু অংশ ছেড়ে দেয় কিংবা গ্রহণ করার পর স্বামীকে উপহার দেয় তাহলে স্বামী তা ভোগ করতে পারবে।
তবে সাধারণ অবস্থায় স্ত্রীর পক্ষ থেকে পূর্ণ মোহর ছেড়ে না দিয়ে কিছু অংশ ছেড়ে দেওয়াই ভালো। এতে করে মোহরের একচ্ছত্র অধিকার যে স্ত্রীর-এর স্বপক্ষে শক্ত অবস্থান তৈরি হয় এবং নারীর নিরাপত্তার জন্যও এতে সুফল রয়েছে।
স্বামী যদি চাপ দিয়ে বা কৌশলে পূর্ণ মোহর বা কিছু অংশ মাফ করিয়ে নেয় তাহলে আল্লাহর বিচারে তা মাফ হবে না। এমনকি এমন পরিস্থিতি যদি আসে যে স্বামী স্ত্রীকে সরাসরি মোহর মাফ করে দিতে বলে আর স্ত্রী লজ্জায় সম্মত হয়, আল্লাহর দরবারে এই মোহর মাফ না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
আরও পড়ুন: পাত্রী দেখার ইসলামি পদ্ধতি কেমন
মোহরের টাকা হাতে না দিয়ে স্ত্রীর অন্তরের সন্তুষ্টি বোঝা মুশকিল— তাই হাতে হাতে মোহর পরিশোধ করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন আলেমরা।
অতএব প্রমাণ হলো যে মোহর মাফ করিয়ে নেওয়ার জন্য স্ত্রীকে চাপ প্রয়োগ করা, দুর্ব্যবহার করা কিংবা অন্যকোনো কৌশল অবলম্বন করা সম্পূর্ণ অবৈধ। এই অবস্থায় স্ত্রী মাফ করলেও মাফ হবে না।
কেউ মোহর না দেওয়ার নিয়ত করে থাকলে তাকে জেনাকারীর কাতারে দাঁড়াতে হবে। এ বিষয়ে রাসুলুল্লাহ (স.) সতর্ক করে বলেন, যে ব্যক্তি মোহরের বিনিময়ে কোনো মহিলাকে বিবাহ করল, অথচ মোহর পরিশোধ করবে না বলে নিয়ত করল, সে জেনাকারী।’ (বায়হাকি শুআবুল ঈমান: ৫৫৪৯; বাজজার: ৮৭২১; সহিহুত-তারগিব: ১৮০৬)
ইসলামি আইন ও ফিকাহ শাস্ত্র বিশেষজ্ঞরা বলেন, যদি কোনো ব্যক্তি দেনমোহর ধার্য করে বিয়ে করে তাহলে তার জন্য উত্তম হচ্ছে—বাসর রাতে (সহবাসের পূর্বে) ওই দেনমোহর পরিশোধ করে দেওয়া। যদিও নগদ অর্থ না থাকলে পরে পরিশোধ করার অবকাশ রয়েছে।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে স্ত্রীর অধিকারের ব্যাপারে সচেতন হওয়ার তাওফিক দান করুন। স্ত্রীর মোহর সম্পূর্ণ পরিশোধ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
(তথ্যসূত্র: মারেফুল কোরআন: ২/২১৯; হেদায়া: ২/৩২৫; ফতোয়ায়ে রাহমানিয়া: ২/৮৮, আহকামুল কোরআন, জাসসাস: ২/৫৭-৫৮; তাফসিরে ইবনে কাসির: ১/৪৪২; বয়ানুল কোরআন: ২/৯৩; তাফসিরে উসমানি, পৃ-১০০)