শনিবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৫, ঢাকা

পরিবারের জন্য খরচ করলে কি সদকার সওয়াব হয়?

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৯ জানুয়ারি ২০২৪, ০২:৫২ পিএম

শেয়ার করুন:

পরিবারের জন্য খরচ করলে কি সদকার সওয়াব হয়?

নবীজির সুন্নতের অনুসরণে যে কাজই করা হোকনা কেন, সবই আল্লাহর ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত। পরিবারের জন্য খরচ করাও ইবাদত এবং এতে সদকার সওয়াব মিলবে বলা হয়েছে হাদিস শরিফে। রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, ‘কোনো ব্যক্তি তার পরিবারে যে খরচ করে তা-ও সদকাস্বরূপ, অর্থাৎ এতেও সে সদকার সওয়াব পাবে।’ (সহিহ বুখারি: ৪০০৬)

সুতরাং এতে সন্দেহ নেই যে পরিবারের জন্য খরচ করা অনেক বড় আমল। উপার্জনের প্রথম খরচটাই পরিবারের জন্য করতে উৎসাহ দিয়েছেন নবীজি। ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমাদের কাউকে যখন আল্লাহ কল্যাণ (সম্পদ) দান করেন তখন সে নিজের এবং তার পরিবারস্থ লোকজনকে দিয়ে (ব্যয়) শুরু করবে।’ (মুসলিম: ১৮২২)


বিজ্ঞাপন


এছাড়াও পরিবারের জন্য যে অর্থ খরচ করা হয়, হাদিসের ভাষায় তা সর্বোত্তম অর্থ। এ সম্পর্কিত হাদিসটি হলো- ‘মানুষের সর্বোত্তম মুদ্রা সেটি, যা সে তার পরিবারের খরচে ব্যয় করে।’ (সহিহ মুসলিম: ৯৯৪)

আরও পড়ুন: স্ত্রী মারা গেলে মোহরানার টাকার কী হবে?

মহানবী (স.) পরিবারের জন্য উপার্জনরত ব্যক্তিকে দিয়েছেন মুজাহিদের মর্যাদা। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত এক হাদিসে তিনি বলেন, ‘বিধবা ও মিসকিনের জন্য খাদ্য জোগাড় করতে চেষ্টারত ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় মুজাহিদের মতো অথবা রাতে সালাতে দণ্ডায়মান এবং দিনে সিয়ামকারীর মতো। (সহিহ বুখারি: ৫৩৫৩)

সদকার মর্যাদা দেওয়া হয়েছে স্ত্রীর মুখে ভালোবেসে তুলে দেওয়া একলোকমা খাবারকেও। সাদ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমি মক্কায় রোগগ্রস্ত হলে রাসুলুল্লাহ (স.) আমার শুশ্রূষার জন্য আসেন। আমি বললাম, আমার তো সম্পদ আছে। সেগুলো আমি অসিয়ত করে যাই? তিনি বললেন, না। আমি বললাম, তাহলে অর্ধেক? তিনি বললেন, না। আমি বললাম, তাহলে এক-তৃতীয়াংশ? তিনি বললেন, এক-তৃতীয়াংশ করতে পারো। আর এক-তৃতীয়াংশই তো বেশি। ওয়ারিশদের মানুষের কাছে মুখাপেক্ষী অবস্থায় (মানুষের কাছে হাত পেতে পেতে ফিরবে) ছেড়ে যাওয়ার চেয়ে তাদের বিত্তবান অবস্থায় রেখে যাওয়া উত্তম। আর যা-ই তুমি খরচ করবে, তা-ই তোমার জন্য সদকা হবে; এমনকি যে লোকমাটি তুমি তোমার স্ত্রীর মুখে তুলে দেবে, সেটাও। সম্ভবত আল্লাহ তোমাকে দীর্ঘজীবী করবেন। তোমার দ্বারা অনেক লোক উপকৃত হবে, আবার অন্যরা (কাফির সম্প্রদায়) ক্ষতিগ্রস্ত হবে। (সহিহ বুখারি: ৫৩৫৪)


বিজ্ঞাপন


আরও পড়ুন: স্বামী কতদিন স্ত্রীর কাছ থেকে দূরে থাকতে পারবে?

অতএব, পরিবার-পরিজনের জন্য খরচ করার মাধ্যমে আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রতিদান নেওয়ার চেষ্টা থাকতে হবে। আবার এটি দায়িত্বও বটে। এটিকে হালকাভাবে নেওয়ার সুযোগ নেই। যারা পরিবারের জন্য খরচ করে না তারা গুনাহগার। আল্লাহর কাছে তাদের জবাব দিতে হবে। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘কোনো ব্যক্তির পাপের জন্য এতটুকু যথেষ্ট যে যাদের খোরপোষ তার দায়িত্ব সে তাদের খোরপোষ আটকিয়ে রাখবে।’ (সহিহ মুসলিম: ৯৯৬)

তবে গরিবদের জন্যেও খরচ করতে হবে। গরিব, অসহায় ও নিঃস্বদের অভাব অনটন লাঘব করতে ভূমিকা রাখা মুমিনের গুণ। এর প্রতিদান অনেক বেশি। গরিবের কষ্টের জীবনে কিছুটা হলেও আনন্দ হাসির ঝিলিক ছড়িয়ে পড়ে আপনার দানের কারণে। তাদের দানের ব্যাপারে কোরআন মাজিদে অনেক উৎসাহব্যঞ্জক বাণী এসেছে। এক আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যদি তোমরা প্রকাশ্যে দান-সদকা করো, তবে তা কতই না উত্তম। আর যদি গোপনে ফকির-মিসকিনকে দান করে দাও, তবে আরো বেশি উত্তম। আর তিনি তোমাদের পাপ ক্ষমা করে দেবেন।’ (সুরা বাকারা: ২৭১) 

অন্য আয়াতে এসেছে, ‘হে মুমিনরা! আমি তোমাদের যে রিজিক দান করেছি, তা থেকে তোমরা (আল্লাহর রাস্তায় মানব কল্যাণে) ব্যয় করো সেই দিন আসার আগে, যেদিন কোনো ক্রয়-বিক্রয় থাকবে না, কোনো বন্ধুত্ব কাজে আসবে না এবং সুপারিশও গ্রহণযোগ্য হবে না।’ (সুরা বাকারা: ২৫৪)

নবী কারিম (স.) ইরশাদ করেছেন, ‘খেজুরের একটি অংশ দান করে হলেও তোমরা জাহান্নামের আগুন থেকে বেঁচে থাকার চেষ্টা করো।’ (সহিহ বুখারি: ৬০২৩) আরেক হাদিসে রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, মহান আল্লাহ বলেন, খরচ করো হে আদম সন্তান, আমিও খরচ করবো তোমার প্রতি। (সহিহ বুখারি: ৪৯৬১)

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর