শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ঢাকা

স্বামী কতদিন স্ত্রীর কাছ থেকে দূরে থাকতে পারবে?

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ৩০ আগস্ট ২০২২, ০৩:৫৩ পিএম

শেয়ার করুন:

স্বামী কতদিন স্ত্রীর কাছ থেকে দূরে থাকতে পারবে?

পবিত্র কোরআনে দাম্পত্য জীবনকে আল্লাহর অনুগ্রহ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। সুতরাং মুমিনের উচিত দাম্পত্য জীবনের ব্যাপারে সতর্ক ও যত্নবান হওয়া। রাসুলুল্লাহ (স.) বিদায় হজের ভাষণে ইরশাদ করেছেন, أَلَا إِنَّ لَكُمْ عَلَى نِسَائِكُمْ حَقًّا , وَلِنِسَائِكُمْ عَلَيْكُمْ حَقًّا ‘জেনে রাখবে, নিশ্চয়ই তোমাদের নারীদের উপর তোমাদের অধিকার রয়েছে, আর তোমাদের উপরও তোমাদের নারীদের অধিকার রয়েছে।’ পুরুষদেরকে উদ্দেশ্য করে অন্য হাদিসে প্রিয়নবী (স.) বলেন, ‘সাবধান, তোমরা নারীদের কল্যাণকামী হও..' ( তিরমিজি: ৩০৮৭)

স্বামী-স্ত্রী সবসময় কাছাকাছি থাকবে, এটাই শরিয়তে কাম্য। তবে যদি কোনো প্রয়োজনে স্বামী দূরে কোথাও যায়, তাহলে চার মাসের বেশি সময় স্ত্রীর কাছ থেকে দূরে থাকা শরিয়ত সমর্থন করে না। হাদিসে এসেছে, জায়েদ বিন আলমাস (রহ.) বলেন,


বিজ্ঞাপন


এক রাতে হজরত উমর (রা.) জনগণের খোঁজ-খবর নেওয়ার জন্য প্রহরী বেশে বের হয়ে গেলেন। এক বাড়ির পাশ দিয়ে অতিক্রম করার সময় তিনি ঘর থেকে নারী কণ্ঠে কবিতা আবৃত্তি শুনতে পেলেন। ঘরের ভেতর এক মহিলা কবিতা আবৃত্তি করছিলেন। যার অর্থ হলো—‘রজনী দীর্ঘ হয়েছে এবং তার এক পার্শ্ব কৃষ্ণবর্ণ ধারণ করেছে। এদিকে দীর্ঘদিন যাবত আমার প্রেমাস্পদ আমার কাছে নেই যে, তার সঙ্গে আমি আমোদ-প্রমোদ করব। আল্লাহর শপথ! যদি এক আল্লাহর ভয় না থাকত তাহলে এ খাটের চার পাশ নড়ে উঠত।’

আরও পড়ুন: ইতিহাসের ৫ মহাপুরুষকে বিয়ে করেছেন যে মহিলা সাহাবি

যখন ভোর হলো হজরত উমর (রা.) কবিতা আবৃত্তি করা সেই মহিলাকে ডেকে আনার নির্দেশ দিলেন। মহিলা খলিফার দরবারে এসে উপস্থিত হলে হজরত উমর (রা.) তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কি গত রাতে এ জাতীয় কবিতা আবৃত্তি করেছিলে? মহিলা বললেন, হ্যাঁ।

উমর (রা.) জিজ্ঞেস করলেন কেন? উত্তরে মহিলা বললেন, দীর্ঘদিন আমার স্বামী জিহাদের ময়দানে রয়েছে। অথচ এ মুহূর্তে তার নৈকট্য পাওয়া আমার একান্ত কাম্য ছিল, তার বিরহেই আমি এমনটি করেছি৷ হজরত উমর (রা.) এ কথা শুনে ওই মহিলার স্বামীকে ফিরে আসার নির্দেশনা দিয়ে শাহি ফরমান পাঠালেন। এরপর তিনি তার কন্যা হজরত হাফসা (রা.) এর কাছে গিয়ে তাকে জিজ্ঞেস করলেন, হে আমার মেয়ে! নারীরা তাদের স্বামী থেকে কতদিন পর্যন্ত ধৈর্য ধারণ করে থাকতে পারে? (প্রজাদের স্বার্থ রক্ষার ইচ্ছা যদি না হত তবে আমি তোমাকে এই প্রশ্ন করতাম না) তখন হাফসা (রা.) বললেন, মেয়েরা তাদের স্বামী থেকে চার মাস পর্যন্ত ধৈর্য ধারণ করে থাকতে পারে। এরপর থেকে হজরত উমর (রা.) চার মাস পরপর মুজাহিদ বাহিনীকে ফেরত নিয়ে আসতেন এবং নতুন বাহিনী পাঠিয়ে দিতেন।’ (মুসান্নাফে আবদুর রাজজাক: ১২৫৯৪)


বিজ্ঞাপন


আরও পড়ুন: স্ত্রীর খুশির জন্য দাড়ি কাটা যাবে?

তবে, কেউ যদি প্রয়োজনে বেশি সময় দূরে থাকতে চায় তাহলে স্ত্রীর কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে। স্ত্রী যদি অনুমতি দেয় এবং এ সময়ে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে বলে দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করে এবং বাস্তবেও তেমনটি দেখা যায় তাহলে স্বামী চার মাসেরও বেশি সময় দূরে থাকতে পারবে। 

যদি স্ত্রীর কাছ থেকে দূরে থাকার কারণে স্বামী বা স্ত্রী কোনো গুনাহে জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে তাহলে চার মাসের কম সময়ও দূরে থাকতে পারবে না। (তথ্যসূত্র: সুনানে নাসায়ি: ৩৪৬৫; ফতোয়ায়ে শামি: ৪/৩৭৯; ফতোয়ায়ে মাহমুদিয়া: ২৯/৪৮; আহসানুল ফতোয়া: ১/৪০০)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে শরিয়তের প্রত্যেক নির্দেশনা যথাযথ পালন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর