ইসলামে সুচিকিৎসা অনেক মূল্যবান বিষয়। সঠিক জ্ঞানার্জন ছাড়া কিংবা ডাক্তার না হয়েও চিকিৎসা দেওয়ার কোনো সুযোগ ইসলাম রাখেনি। দুর্ভাগ্যজনকভাবে ভুল চিকিৎসার মাত্রা দেশে দিন দিন যেন বেড়েই চলেছে। বিনা প্রয়োজনে অস্ত্রোপচার, ওয়ার্ডবয়কে দিয়ে অস্ত্রোপচার, ডাক্তার না হয়েও চিকিৎসা দেওয়া ও নিরীহ রোগীদের সঙ্গে প্রতারণার ঘটনা পত্র-পত্রিকায় প্রায়ই দেখা যায়। ফলে চিকিৎসাসেবায় সৃষ্টি হচ্ছে ভীতিকর পরিস্থিতি। ঝুঁকিতে পড়ছে রোগীদের জীবন।
এছাড়া ভেজাল ও নিম্নমানের ওষুধ কম্পানির দৌরাত্ম্য তো রয়েছেই। এসব বন্ধ করতে ইসলামে স্পষ্ট বিধান রয়েছে। ইচ্ছাকৃত হত্যা বা ভুলবশত হত্যা উভয়ের দণ্ডবিধি পবিত্র কোরআনে রয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘কোনো মুমিনকে হত্যা করা কোনো মুমিনের কাজ নয়। তবে ভুলবশত হলে তা ভিন্ন বিষয়। কেউ কোনো মুমিনকে ভুলবশত হত্যা করলে একজন মুমিন দাস মুক্ত করবে এবং তার পরিজনবর্গকে দিয়ত অর্পণ করবে। যদি না তারা ক্ষমা করে।’ (সুরা নিসা: ৯২)
বিজ্ঞাপন
এই আয়াতে যে দিয়ত বা রক্তপণের কথা বর্ণিত হয়েছে, তার পরিমাণ হলো- প্রায় ১৯ ভরি সোনা বা দুই হাজার ৬২৫ ভরি রুপা কিংবা ১০০ উট (নির্দিষ্ট বয়সের)। এটা হচ্ছে পূর্ণ দিয়ত, যা নিহত ব্যক্তি পুরুষ হলে ওয়াজিব হয়। আর নারীর দিয়ত সর্বক্ষেত্রে পুরুষের অর্ধেক। (হেদায়া: ৪/৬৫৫)
শিশু আয়ানের মৃত্যুতে দুই চিকিৎসক ও পরিচালকের বিরুদ্ধে মামলা
শিশু আয়ান ‘হত্যার’ বিচার হবে তো?
ভুল চিকিৎসা: সেন্ট্রাল হাসপাতালের ১১ জন বরখাস্ত
সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে এবং ভুল চিকিৎসা থেকে রোগীকে বাঁচাতে সর্বাধুনিক, নিখুঁত ও কার্যকর উপায় অবলম্বনের নির্দেশ দেয় ইসলাম। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘চিকিৎসক হিসেবে সুপরিচিত নয় এমন কেউ যদি চিকিৎসা করতে গিয়ে রোগীর ক্ষতি করে ফেলে, তাহলে তার ওপর জরিমানা আরোপ হবে।’ হাদিসের বর্ণনাকারী আব্দুল আজিজ বলেন, ‘এটা শুধু ব্যবস্থাপত্র দেওয়ার ক্ষেত্রে নয়, বরং শল্যচিকিৎসার ক্ষেত্রে।’ (আবু দাউদ: ৩৩০)
হাদিসের অর্থ হচ্ছে, চিকিৎসক যদি অস্ত্রোপচার করতে গিয়ে রোগীর ক্ষতি করে ফেলেন, তাহলে তাঁকে জরিমানা দিতে হবে। মুফতি রশিদ আহমদ গাঙ্গুহি (রহ.) বিষয়টি এভাবে বিশ্লেষণ করেছেন যে ডাক্তার দুই ধরনের—এক. বিজ্ঞ ডাক্তার, দুই. অনভিজ্ঞ ডাক্তার। কোনো বিজ্ঞ ডাক্তার যদি রোগীর সম্মতিতে চিকিৎসার সব নিয়ম মেনে চিকিৎসা করেন, অস্ত্রোপচার করেন, তদুপরি দুর্ঘটনাক্রমে রোগীর মৃত্যু, অঙ্গহানি বা অন্য কোনো ক্ষতি হয়ে যায়, তাহলে ডাক্তার দায়ী হবেন না। তাঁর ওপর কোনো জরিমানা বর্তাবে না।
বিজ্ঞাপন
আয়ানের মৃত্যু: তদন্তের নির্দেশ মানবাধিকার কমিশনের
শিশু আয়ানের মৃত্যু: তদন্ত প্রতিবেদন পেছাল এক সপ্তাহ
পিরোজপুরে প্রসূতি নারীকে ভুল চিকিৎসার অভিযোগ, আদালতে মামলা
বিজ্ঞ ডাক্তার যদি রোগীর অনুমতি ছাড়াই চিকিৎসা বা অস্ত্রোপচার করেন এবং চিকিৎসাশাস্ত্রীয় নিয়ম-নীতিবহির্ভূত হয় আর তাতে রোগী মারা যায় তাহলে চিকিৎসকের ওপর দিয়ত (রক্তপণ) আরোপিত হবে। কোনো অঙ্গহানি হলে শরিয়তের নির্ধারিত জরিমানা (অঙ্গের পণ) বর্তাবে। অনভিজ্ঞ ডাক্তারের সঠিক বা ভুল চিকিৎসায় যেকোনোভাবেই রোগীর মৃত্যু হলে ডাক্তারের ওপর পূর্ণ দিয়ত (রক্তপণ) বর্তাবে। অঙ্গহানি হলে অঙ্গের পূর্ণ জরিমানা দিতে হবে। ডাক্তার যদি নিজ হাতে অস্ত্রোপচার করেন, ইনজেকশন বা স্যালাইন পুশ করেন কিংবা ওষুধ নিজ হাতে খাইয়ে দেন, সেক্ষেত্রেই শুধু ওপরের বিধান প্রযোজ্য। চিকিৎসক যদি শুধু ওষুধ লিখে দেন বা প্রেসক্রিপশন দেন এবং এর বেশি কিছু না করেন আর ওষুধ সেবন করে রোগীর ক্ষতি হয়, তাহলে সে ক্ষেত্রে উপর্যুক্ত বিধান প্রযোজ্য নয়। বিচারক সেক্ষেত্রে চিকিৎসককে কোনো যৌক্তিক শাস্তি দিতে পারেন। (ফতোয়ায়ে শামি: ৯/২১৪; ফতোয়ায়ে আলমগিরি: ৫/৫৬)
বরিশালে শিশুর ভুল চিকিৎসার ঘটনা তদন্তে কমিটি
সিলেটে ভুল চিকিৎসায় শিশু মৃত্যুর অভিযোগে হাসপাতাল ভাঙচুর
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ভুল চিকিৎসায় প্রসূতির মৃত্যু
তবে পরকালীন জবাবদিহিতার চিন্তা মানুষকে সৎ ও নিষ্ঠাবান থাকতে বেশি সহায়তা করে। সে কারণে পবিত্র কোরআনের প্রায় এক-তৃতীয়াংশজুড়ে আখেরাতে জবাবদিহি ও হিসাব-নিকাশ ইত্যাদির আলোচনা এসেছে। চিকিৎসক, ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের মালিক ও কর্মকর্তাদের মধ্যেও যদি পরকাল-ভাবনা সৃষ্টি হয় তাহলে নৈরাজ্য ও দৌরাত্ম্য বন্ধ হবে ইনশাআল্লাহ! পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা সেই দিনকে ভয় করো, যেদিন তোমরা আল্লাহর কাছে ফিরে আসবে। অতঃপর প্রত্যেককে তার কর্মফল পুরোপুরি দেওয়া হবে। আর তাদের প্রতি কোনো অন্যায় করা হবে না।’ (সুরা বাকারা: ২৮১)
আল্লাহ তাআলা সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে দায়িত্বশীলদের তাওফিক দান করুন। ভুল চিকিৎসা থেকে রোগীকে হেফাজত করুন। অতি উৎসাহী হয়ে অজানা বিষয়ে হস্তক্ষেপ করা থেকে সকল ডাক্তার ও সাধারণ মানুষকে বেঁচে থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।

