রাজধানীর গ্রীন রোড সেন্ট্রাল হাসপাতালে ভুল চিকিৎসা ও কর্তৃপক্ষের প্রতারণায় নবজাতকের মৃত্যুর ঘটনায় চিকিৎসক-নার্সসহ ১১ জনকে বরখাস্ত করা হয়েছে। এ ঘটনায় মাহবুবা রহমান আঁখি নামে প্রসূতি নারী এখন মৃত্যুপথযাত্রী।
বুধবার (১৪ জুন) সেন্ট্রাল হাসপাতালের অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর ডা. আফসানা বিনতে গাউস গণমাধ্যমকে বরখাস্তের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
বিজ্ঞাপন
ডা. আফসানা বলেন, আমরা একটা তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। সেইসঙ্গে সেদিন ডা. শাহজাদীসহ অটি সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক-নার্সসহ উপস্থিত ছিলেন, এমন ১১ জনের সবাইকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। আজকে থেকেই তদন্ত কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। তদন্ত প্রতিবেদন আসলে ওই দিন আসলেই কী ঘটনা ঘটেছিল সেটা আমরা জানতে পারব। তবে রোগীর স্বজনের অভিযোগ হলো, গাইনী বিভাগ থেকে নাকি তাদেরকে জানানো হয়নি যে ডা. সংযুক্তা সাহা ছিলেন না। এমনটি যদি হয়ে থাকে, তাহলে তারা অবশ্যই অন্যায় করেছে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের হাসপাতালের অন্যান্য সব রোগী ভর্তি হয় সরাসরি ইমার্জেন্সি বিভাগ হয়ে। তখন রিসিপশন বা ইমার্জেন্সি থেকে আমরা যারা ডিউটিতে থাকি, আমাদেরকে অবহিত করা হয়। কিন্তু গাইনি ডিপার্টমেন্টের ব্যাপারটা একটু ভিন্ন। ওই বিভাগের সব রোগী সরাসরি চলে যায় ৫ তলার গাইনি বিভাগে, কারণ সেখানে রোগীকে কিছু প্রাথমিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হয়। সেক্ষেত্রে আমাদের খুব বেশি কিছু জানার সুযোগ থাকে না।
হাসপাতালটির সহকারী পরিচালক বলেন, সেদিন ডা. সংযুক্তা সাহা দুবাই গিয়েছিলেন, কিন্তু হাসপাতাল ম্যানেজমেন্টকে তিনি কিছুই জানিয়ে যাননি। সেদিন রাত দেড়টায় তার ফ্লাইট ছিল তাই রাত সাড়ে ১২টায় তিনি হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে যান। তিনি চলে গেলেও সেদিন সংযুক্তা সাহার সাথে যে টিম কাজ করে, তারা ছিলেন। পাশাপাশি আমাদের যেই চিকিৎসক থাকেন, ডা. শাহজাদীকে আনা হয়।
ভুল চিকিৎসার কথা অস্বীকার করে তিনি বলেন, এখানে আসলে কোনো ভুল চিকিৎসা হয়নি। এক্ষেত্রে ভুল হতে পারে যদি সংযুক্তা সাহা যে ছিল না, সেটি যদি না জানিয়ে থাকে। এছাড়া চিকিৎসাজনিত কোনো বিষয়ে আমাদের কোনো ভুল হয়নি।
বিজ্ঞাপন
রোগীর সঙ্গে যা ঘটেছিল
গত শুক্রবার (০৯ জুন) প্রসব ব্যথা উঠায় রাত ১২টা ৫০ মিনিটে সেন্ট্রাল হসপিটালে ডা. সংযুক্তা সাহার অধীনে মাহবুবা রহমান আঁখিকে ভর্তি করা হয়। যদিও সেই সময়ে সংযুক্তা সাহা হাসপাতালে উপস্থিত ছিলেন না, তারপরও রোগীদের পক্ষ থেকে সংযুক্তা সাহার বিষয়ে জানতে চাইলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানান, তিনি আছেন এবং অপারেশন থিয়েটার কাজ করছেন।
ভুক্তভোগীর স্বামী ইয়াকুব আলী জানান, তার স্ত্রীকে যখন অটিতে ঢুকানো হয় এবং নরমাল ডেলিভারির জন্য চেষ্টা শুরু করা হয়, তখনও সংযুক্তা সাহা হাসপাতালে আছেন কিনা জানতে চাওয়া হয়। কর্তৃপক্ষ জানায়, তিনি আছেন এবং তিনি তার চেষ্টা চালাচ্ছেন। পরে জানা যায় ডা. সংযুক্তা সাহা ছিলেন না এবং তারা রোগীর কোনোরকম চেক-আপ ছাড়াই ডেলিভারির কাজ শুরু করে দেন।
পরে গত শুক্রবার রাতে আঁখি সেন্সলেস হয়ে যায়, এখনও পর্যন্ত সে অবস্থাতেই আছে। এখন পর্যন্ত কোন ইমপ্রুভমেন্ট নেই, চিকিৎসকরা বলেছে তার কোনো ইমপ্রুভমেন্ট হওয়ার সম্ভবনাও কম। বর্তমানে তার শরীরের কিডনি, লিভার, হার্ট এবং অন্য কোনো অংশ কাজ করছে না। এরমধ্যে সে ব্রেন স্টোকও করেছে, তার সাথে রক্তক্ষরণও বন্ধ হচ্ছে না। রক্তক্ষরণ বন্ধ না হওয়ার কারণে শরীরের অন্য অংশগুলো কাজ করতে ব্যর্থ, গত চার দিন ধরে প্রচুর পরিমাণে রক্ত দিতে হচ্ছে এবং যতক্ষণ পর্যন্ত তার নিঃশ্বাস চলবে ততক্ষণ পর্যন্ত রক্ত দিতে হবে।
এদিকে ল্যাব এইড হাসপাতালে ভর্তি মাহবুবা রহমান আঁখির অবস্থা এখনও সংকটাপন্ন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
এমএইচ/এএস

