ইসলাম শুধুমাত্র নারীদের জন্যই পর্দা ফরজ করেনি, পুরুষের জন্যও রয়েছে পর্দার বিধান। যারা মনে করেন ‘পর্দা শুধু নারীরা পালন করবে, পুরুষদের আবার পর্দা কিসের?’ তাদের ধারণা ভুল। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেন- ‘(হে নবী!) আপনি ঈমানদার পুরুষদের বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি সংযত রাখে এবং যৌনাঙ্গের হেফাজত করে। এতে তাদের জন্য উত্তম পবিত্রতা রয়েছে। নিশ্চয়ই তারা যা করে আল্লাহ এ ব্যাপারে অবগত। আর ঈমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি সংযত রাখে এবং যৌনাঙ্গের হেফাজত করে।’ (সুরা নুর: ৩০)
কোরআনের আয়াতটিতে লক্ষণীয়, প্রথমেই পুরুষকে পর্দার বিধান দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে। কেননা জেনা-ব্যভিচারের প্রথম পদক্ষেপই হচ্ছে দৃষ্টি। হাদিসে এসেছে, ‘বেগানা নারীকে দেখা চোখের ব্যভিচার, তার সঙ্গে বেহুদা বা যৌন উদ্দীপক কথা হলো জিহ্বার ব্যভিচার, যৌন উদ্দীপক কথা শোনা কানের ব্যভিচার, স্পর্শ করা হাতের ব্যভিচার, পায়ের জেনা হলো ব্যভিচারের উদ্দেশ্যে অগ্রসর হওয়া এবং মনের ব্যভিচার হলো চাওয়া ও প্রত্যাশা করা।’ (বুখারি: ৬২৪৩ ও মেশকাত: ৮৬)
বিজ্ঞাপন
হাদিসে পুরুষদের উদ্দেশে বলা হয়েছে, ‘পথের হকগুলোর একটি অন্যতম হক হলো, দৃষ্টিকে সংযত রাখা।’ (বুখারি: ৬২২৯)
আরও পড়ুন: বিধবা নারীর সাদা পোশাক পরা কি ইসলামি নির্দেশনা?
নারীর পর্দা ও পুরুষের পর্দার ব্যবহারিক পার্থক্য রয়েছে। নারী বাইরে বেরুলে বোরকা-চাদর ইত্যাদির মাধ্যমে তার শরীর ঢেকে রাখবে। আর পুরুষের পর্দা হবে নিজেকে সংযত রাখা, চোখের হেফাজত করার মাধ্যমে। পুরুষ পর-নারীর দিকে তাকাবে না, হুটহাট নারীর ঘরে ঢুকবে না।
ঘরের মানুষের অনুপস্থিতিতে একজন মুসলিম নারীর সঙ্গে একজন পুরুষ কীভাবে যোগাযোগ করবেন, এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনের নির্দেশনা হলো- ‘আর তোমরা যখন তাদের কাছে কোনো জিনিস পেতে চাইবে, তখন তা পর্দার আড়ালে বাইরে দাঁড়িয়ে তাদের কাছে চাইবে। বস্তুত এ নীতি তোমাদের ও তাদের অন্তরের পবিত্রতা রক্ষার পক্ষে অধিকতর উপযোগী।’ (সুরা আহজাব: ৫৩)
বিজ্ঞাপন
আরও পড়ুন: স্ত্রী মারা গেলে মোহরানার টাকার কী হবে?
হাদিসে এসেছে, ‘নারীদের সঙ্গে নির্জনে অবস্থান করো না। ওই সত্তার শপথ- যার হাতে আমার প্রাণ, যখনই কোনো পুরুষ কোনো নারীর সঙ্গে একান্তে থাকে, তখনই তাদের মধ্যে তৃতীয় হিসেবে শয়তান এসে অনুপ্রবেশ করে এবং তার জাল বিস্তার করতে থাকে। কোনো বেগানা নারীর কাঁধের সঙ্গে ধাক্কা লাগার চেয়ে পচা দুর্গন্ধযুক্ত নর্দমায় জড়ানো শূকরের সঙ্গে ধাক্কা লাগাও সহনীয়।’ (নাইলুল আওতার: ৬/১২০)
নারীদের আপাদমস্তক আর পুরুষদের কমপক্ষে নাভি থেকে হাঁটুর নিচ পর্যন্ত ঢেকে রাখা আবশ্যক। সৃষ্টিগত কারণে পোশাকের পর্দার ক্ষেত্রে নারীদের প্রতি ইসলাম কঠোর নির্দেশ দিয়েছে বটে। কিন্তু দৃষ্টিগত ও হৃদয়গত পর্দায় পুরুষদেরকে কঠোরভাবে সতর্ক করা হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো বেগানা নারীর সৌন্দর্যের প্রতি যৌন লালসা নিয়ে তাকাবে, কেয়ামতের দিন তার চোখে সিসা ঢেলে দেওয়া হবে।’ (ফাতহুল কাদির) বুরায়দা ইবনে আল-হাসিব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (স.) আলী (রা.)-কে বলেন, ‘হে আলী! দৃষ্টির পর দৃষ্টি ফেলো না। অনিচ্ছাকৃত যে দৃষ্টি পড়ে এর জন্য তুমি ক্ষমা পাবে। কিন্তু পরবর্তী দৃষ্টির জন্য ক্ষমা পাবে না।’ (আবু দাউদ: ১/২৯২)
আরও পড়ুন: হাদিসের আলোকে ‘নেককার স্ত্রী’ চেনার উপায়
চোখের পাপ সম্পর্কে আল্লাহ তাআলার হুঁশিয়ারি- ‘আল্লাহ চোখগুলোর অসততা এবং অন্তর যা গোপন করে তা জানেন।’ (সুরা গাফির: ১৯)
সুতরাং বোঝা গেল, শুধু নারীদের ওপরই নয়, পুরুষদের ওপরও পর্দা করা ফরজ। আবার পর্দার এমন কিছু বিধান আছে, যা নারী-পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রে সমানভাবে প্রযোজ্য। যেমন- সতরের বিধান, নজরের বিধান, নারী-পুরুষের মেলামেশার বিধান ইত্যাদি। তবে কিছু বিধান শুধু মৌলিকভাবে পুরুষের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। যেমন পরিবারের কর্তা হিসেবে অধীনস্থদের পর্দা সম্পর্কে অবগত করার বিধান এবং তাদের পরিচালনা ও তত্ত্বাবধানের বিধান এবং সমাজ ও রাষ্ট্রের পরিচালক হিসেবে সর্বশ্রেণির মুসলিম নর-নারীর জন্য পর্দার বিধান।
আসুন আমরা নারী-পুরুষ পরস্পর সহযোগিতার মাধ্যমে এই অত্যাবশ্যকীয় পর্দা বিধান পালন করে ইহ ও পরকালীন কল্যাণ লাভ করি। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে পর্দার বিধান যথাযথ মানার মাধ্যমে সুন্দর সমাজ গড়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।

