প্রচণ্ড ঠাণ্ডার কারণে অজু গোসল করতে গেলে অসুস্থ হয়ে যাওয়া কিংবা অসুস্থতা বেড়ে যাওয়ার আশংকা থাকলে তায়াম্মুম করা অবৈধ নয়। মূলত তায়াম্মুমের বিধান দেওয়াই হয়েছে আল্লাহর আদেশ-নিষেধ পালন সহজসাধ্য করার জন্য। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন— وَ اِنۡ کُنۡتُمۡ مَّرۡضٰۤی اَوۡ عَلٰی سَفَرٍ اَوۡ جَآءَ اَحَدٌ مِّنۡکُمۡ مِّنَ الۡغَآئِطِ اَوۡ لٰمَسۡتُمُ النِّسَآءَ فَلَمۡ تَجِدُوۡا مَآءً فَتَیَمَّمُوۡا صَعِیۡدًا طَیِّبًا فَامۡسَحُوۡا بِوُجُوۡهِکُمۡ وَ اَیۡدِیۡکُمۡ مِّنۡهُ مَا یُرِیۡدُ اللّٰهُ لِیَجۡعَلَ عَلَیۡکُمۡ مِّنۡ حَرَجٍ وَّ لٰکِنۡ یُّرِیۡدُ لِیُطَهِّرَکُمۡ وَ لِیُتِمَّ نِعۡمَتَهٗ عَلَیۡکُمۡ لَعَلَّکُمۡ تَشۡکُرُوۡنَ
‘তোমরা যদি অসুস্থ হও অথবা সফরে থাক, যদি তোমাদের কেউ মলত্যাগ করে আসে অথবা যদি স্ত্রী সহবাস কর তারপর পানি না পাও, তবে পবিত্র মাটি নাও এবং তোমাদের মুখ ও হাত তা দিয়ে মাসেহ কর। আল্লাহ তোমাদের জন্য কোনো সমস্যা সৃষ্টি করতে চান না, বরং তিনি চান তোমাদের পবিত্র করতে এবং তার নেয়ামত তোমাদের ওপর পূর্ণ করতে, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন কর।’ (সুরা মায়েদা: ৬)
বিজ্ঞাপন
আরও পড়ুন: তায়াম্মুম করার নিয়ম কী, কখন করতে হবে?
তবে, পানি গরম করে অজু-গোসল করার সুযোগ থাকলে এবং গরম পানি ব্যবহারে কোনো অসুবিধা না থাকলে তায়াম্মুম করা জায়েজ হবে না। কিন্তু যদি পানি গরম করার কোনো রকম সুযোগ না থাকে এবং ঠাণ্ডা পানি দিয়ে গোসল করলে ঠাণ্ডায় মৃত্যু, অঙ্গহানি বা অসুস্থ হয়ে পড়া বা ঠাণ্ডাজনিত নানারকম অসুখ বেড়ে যাওয়ার আশংকা থাকলে গোসলের পরিবর্তে তায়াম্মুম করা জায়েজ। (দারাকুতনি: ৭৩১; কিতাবুল আসার: ৭৪; সুনানে কুবরা লিল বায়হাকি: ১১০৫)
তায়াম্মুমের পদ্ধতি হলো- উভয় হাতের কাপড়গুলো কনুইয়ের উপরে উঠিয়ে নেবে। তায়াম্মুম দ্বারা নামাজ পড়ার নিয়ত করে বিসমিল্লাহ পাঠ করবে। নিজের উভয় হাতের তালুকে আঙুলগুলো খোলা রেখে মাটির ওপর রাখবে। হাতকে মাটির ওপর সামান্য ঘষবে। তারপর উভয় হাত উঠিয়ে ঝেড়ে ফেলবে। এরপর পুরো মুখমণ্ডল মাসেহ করবে। অতঃপর আগের মতো উভয় হাতের তালু আঙুল খোলা রেখে মাটির ওপর রেখে সামান্য ঘষবে। এরপর নিজের বাঁ হাত দ্বারা ডান হাত কনুই পর্যন্ত মাসেহ করবে। এরপর ডান হাত দিয়ে বাঁ হাত কনুই পর্যন্ত মাসেহ করবে। তাতে তায়াম্মুম পরিপূর্ণ হয়ে যাবে। এরপর ফরজ, নফল সব ধরনের ইবাদত আদায় করতে পারবে। (কিতাবুল আসার লি আবি ইউসুফ: ৭৭; মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা: ১/১৬০)
বিজ্ঞাপন
যেসব কারণে অজু ভেঙে যায়, সেসব কারণে তায়াম্মুমও ভেঙে যায়। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা: ১/১৬০) এছাড়াও পানি ব্যবহারে সক্ষম হয়ে গেলে, তায়াম্মুমের অনুমতি প্রদানকারী অপারগতা দূর হয়ে গেলে তায়াম্মুম ভেঙে যাবে। যেমন—দুশমনের ভয় খতম হয়ে গেলে, রোগের আশঙ্কা শেষ হয়ে গেলে ইত্যাদি। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা: ১/১৯২)
উল্লেখ্য, পবিত্র মাটি, কংকর, বালু, চুনা, মাটির তৈরি কাঁচা অথবা পাকা ইট, ধুলা, পাথর, ইটের তৈরি দেয়াল, পাকা বাসন, লাকড়ি বা কাপড়ে অথবা অন্য কোনো পবিত্র বস্তুতে ধুলা লেগে থাকলে এসব বস্তু দিয়ে তায়াম্মুম করা যাবে। কোথাও যদি উল্লেখিত বস্তুগুলো না থাকে, বরং স্বচ্ছ টাইলস থাকে তাহলে এর মাধ্যমেও তায়াম্মুম করা যাবে। কারণ, টাইলস মূলত মাটি জাতীয় দ্রব্য, তাই টাইলসের ওপর তায়াম্মুম করা বৈধ। তবে যদি টাইলস প্রিন্ট ইত্যাদির মাধ্যমে রাঙানো হয়, তখন তায়াম্মুম করা বৈধ হবে না। (আলমগিরি, আদ্দুররুল মুখতার, শরহে ফাতহিল কাদির: ১/১১৩, কিতাবুন নাওয়াজিল: ৩/১০৩)

