রোববার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

খেয়ালখুশিমতো টাকা খরচ করার পরিণাম

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০১ জানুয়ারি ২০২৪, ০১:৫২ পিএম

শেয়ার করুন:

খেয়ালখুশিমতো টাকা খরচ করার পরিণাম

সম্পদের স্রষ্টা ও প্রকৃত মালিক আল্লাহ। তিনি তাঁর প্রজ্ঞানুযায়ী যাকে যতটুকু ইচ্ছা সম্পদ দান করেন এবং যাকে ইচ্ছা বঞ্চিত করেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মানুষ, তোমরা তো আল্লাহর মুখাপেক্ষী; কিন্তু আল্লাহ, তিনি অভাবমুক্ত, প্রশংসিত।’ (সুরা ফাতির: ১৫) অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘তিনি তোমাকে নিঃস্ব অবস্থা থেকে অভাবমুক্ত করলেন।’ (সুরা দুহা: ৮)

সম্পদের প্রকৃত মালিক আল্লাহ তাআলা—এ কথা সকল ঈমানদার বিশ্বাস করেন। তিনি কাউকে সম্পদের মালিক বানিয়ে আবার কেড়েও নিতে পারেন। দেখা যায়, পথের ভিখারি রাজা হয়, আবার রাজা হয়ে যায় ফকির। এ বাস্তবতা দেখার পরও অনেকে নিজের কাছে থাকা সম্পদকে নিজের মনে করে ভুল করে থাকে। এ থেকেই সৃষ্টি হয় খেয়ালখুশিমতো টাকা খরচ করার মানসিকতা। আল্লাহ তাআলা সতর্ক করে বলেন, ‘তোমরা তাদেরকে আল্লাহর সম্পদ থেকে দান করো, যা তিনি তোমাদের দান করেছেন। (সুরা নূর: ৩৩)


বিজ্ঞাপন


আরও পড়ুন: দান-সদকা করবেন যাদের

উক্ত আয়াতে আমাদের চোখে যেন আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেওয়া হয়েছে- আমাদের অধিকারে থাকা সম্পদগুলো আসলে আল্লাহ তাআলার। কথায় কথায় আমরাও বলে থাকি-এসব আল্লাহর দান, আল্লাহর দেওয়া সম্পদ। কিন্তু শুধু মৌখিক স্বীকার নয়, বরং মুমিন হিসেবে এর প্রতি আন্তরিক বিশ্বাস থাকাও অপরিহার্য। এ সম্পদ একদিকে যেমন আল্লাহর নেয়ামত, আবার তা আমাদের হাতে আল্লাহর পক্ষ থেকে আমানতও। তাই এর যথাযথ ব্যবহার না করলে, অযথা-অপ্রয়োজনে তা নষ্ট করলে, অপচয় করে বেড়ালে এ আমানতের খেয়ানতকারী হিসেবে জবাবদিহিতার মুখে পড়তে হবে। ‘সেদিন (কেয়ামতের দিন) পাঁচটি প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে কোনো আদম সন্তান এক কদমও এগোতে পারবে না; ১. তুমি তোমার সারা জীবন কোন পথে কাটিয়েছ? ২. যৌবনকালে কোন আমল করেছ? ৩. ধন-সম্পদ কোন পথে উপার্জন করেছ? ৪. কোন পথে ধন-সম্পদ ব্যয় করেছ? ৫. দ্বীন ইসলাম সম্পর্কে যতটুকু জেনেছ, সে অনুযায়ী কতটুকু আমল করেছ।’ (তিরমিজি: ৪/৫৬৯)

অর্থাৎ নিজে কষ্ট করে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে অর্থ উপার্জন করলেই যথেচ্ছ ব্যবহারের অধিকার সৃষ্টি হয় না। এ সম্পদ যেহেতু আমাদের হাতে আমানত, তাই এর পূর্ণ রক্ষণাবেক্ষণও আমাদের দায়িত্ব। এখানে স্বেচ্ছাচারের কোনো সুযোগ নেই। খরচ করতে চাইলে যিনি এর প্রকৃত মালিক, তার অনুমতিক্রমেই তা খরচ করতে হবে। অন্যথায় কেয়ামতের ময়দানের প্রশ্নোত্তর পর্বে আটকে যেতে হবে। আরেক হাদিসে নবীজি বলেছেন, ‘আল্লাহ তোমাদের তিনটি বিষয়কে অপছন্দ করেন- ১. অপ্রয়োজনীয় প্রসঙ্গে আলোচনা করা/না জেনে আন্দাজে কথা বলা, ২. সম্পদ নষ্ট করা, ৩. অধিক প্রশ্ন করা। (সহিহ বুখারি:  ১৪৭৭)

আরও পড়ুন: মানুষের প্রতি সুধারণা সুন্দর ইবাদত


বিজ্ঞাপন


বোঝা গেল, সম্পদ নষ্ট করা আল্লাহ তাআলার কাছে একটি ঘৃণ্য বিষয়। এ সম্পদ যখন তিনি মানুষকে আমানত হিসেবে দিয়েছেন, তা দিয়ে প্রয়োজন পূরণ করতে বলেছেন, তবে যদি নষ্ট করা হয়, অনর্থক খরচ করা হয়, তাহলে তিনি তা অপছন্দ করবেনই। মহান আল্লাহর ভালোবাসা পেতে হলে সম্পদের কদর অবশ্যই করতে হবে।

আল্লাহ তাআলার নির্দেশ অমান্য করে সম্পদ কুক্ষিগত করে রাখলেও বিপদ আছে। রাসুলুল্লাহ (স.) সতর্ক করেছেন, ‘আল্লাহ যাকে ধন-সম্পদ দান করেছেন, কিন্তু সে তার জাকাত আদায় করেনি; কেয়ামত দিন তার সম্পদকে এমন এক বিষধর সাপে রূপান্তর করা হবে, যা অত্যধিক বিষাক্ত হওয়ার কারণে তার মাথার পশম থাকবে না এবং চোখের ওপর দুটি কালো তিলক থাকবে। কেয়ামতের দিন ওই সাপ তার গলায় হারের ন্যায় পরিয়ে দেওয়া হবে। সাপটি তার মুখের উভয় চোয়ালে কামড় দিয়ে ধরবে এবং বলবে  ‘আমিই তোমার ধন-সম্পদ, আমিই তোমার সঞ্চিত ধন ভাণ্ডার।’ (বুখারি: ১৪০৩; মুসনাদে আহমদ: ৮৬৬১)

আরও পড়ুন: জাকাত কী, কেন কাকে দিতে হয়?

আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করছেন, ‘আত্মীয়কে তার প্রাপ্য দিয়ে দাও এবং মিসকিন ও মুসাফিরকেও; তবে কিছুতেই অপব্যয় করো না। সন্দেহ নেই, যারা অপব্যয় করে তারা শয়তানের ভাই, আর শয়তান তার প্রভুর প্রতি অতিশয় অকৃতজ্ঞ! (সুরা বনি ইসরাইল: ২৬-২৭)

অপচয় থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখার অর্থ এই নয় যে, কার্পণ্য করতে হবে। অপচয়ের মতোই এক মন্দ দিক হলো কার্পণ্য। অপচয় ও কার্পণ্যকে দুই পাশে রেখে টাকা খরচের ক্ষেত্রে ভারসাম্যপূর্ণ আচরণ করাই ইসলামের শিক্ষা। প্রকৃত বান্দাদের সম্পদ ব্যয়ের নীতি সম্পর্কে এক আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘যখন তারা ব্যয় করে তখন অপব্যয় করে না, কার্পণ্যও করে না, বরং তারা আছে এতদুভয়ের মাঝে মধ্যম পন্থায়।’ (সুরা ফুরকান: ৬৭)

উল্লেখ্য, অপচয় যে শুধু টাকাপয়সার ক্ষেত্রেই হয় এমন নয়, বরং আল্লাহ মানুষকে যত রকম নেয়ামতের অধিকারী করেন, সব নেয়ামতের ক্ষেত্রে অপচয় করার সুযোগ রয়েছে। যেকোনো হারাম ও অবৈধ কাজে সেসবের ব্যবহার থেকে অবশ্যই বিরত থাকতে হবে। বিরত থাকতে হবে অপ্রয়োজনীয় ব্যবহার থেকেও। আল্লাহ তাআলা আমাদের তাওফিক দান করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর