রোববার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

মানুষের প্রতি সুধারণা সুন্দর ইবাদত

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০২ মার্চ ২০২৩, ০৭:০৮ পিএম

শেয়ার করুন:

মানুষের প্রতি সুধারণা সুন্দর ইবাদত

ইসলাম স্বচ্ছতার ধর্ম। এখানে কারও প্রতি খারাপ ধারণা করার সুযোগ নেই। সুন্দর ও উন্নত সমাজ বিনির্মাণে মানুষে মানুষে সুধারণা পোষণ করতে উৎসাহিত করেছে ইসলাম। অনুমান করা থেকে বিরত থাকতে আল্লাহ তাআলার নির্দেশ—‘হে মুমিনগণ, তোমরা অধিক অনুমান থেকে দূরে থাক। নিশ্চয় কোনো কোনো অনুমান পাপ। (সূরা হুজরাত: ১২)

মানুষের নানা কথার বিপরীতে আয়েশা (রা.)-এর চারিত্রিক পবিত্রতা ঘোষণা করে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘যখন তারা এটা শুনল, তখন মুমিন পুরুষ এবং মুমিন নারীরা আপন লোকদের সম্পর্কে কেন ভালো ধারণা করল না এবং বলল না, এটা তো নির্জলা অপবাদ।’ (সুরা নুর: ১২)


বিজ্ঞাপন


অন্যের ব্যাপারে উত্তম ধারণার প্রতি তাকিদ দিয়ে হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, ‘সুন্দর ধারণা সুন্দর ইবাদতের অংশ।’ (আবু দাউদ: ৪৯৯৩)

সকল মুসলিম ভাই ভাই। কিন্তু ভাইয়ের প্রতি মন্দ ধারণা পোষণ করার কারণে ভ্রাতৃত্ববোধ কলুষিত হয়। এমনকি কারও ক্ষেত্রে ছিদ্রান্বেষণ ও গিবতের মতো মারাত্মক পাপ সংঘটিত হয় কুধারণা থেকেই। তাই প্রমাণহীন কোনো বিষয়ে শুধুমাত্র ধারণা করাকে ‘বড় মিথ্যা’ ঘোষণা করেছেন বিশ্বনবী (স.)। ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা মন্দ ধারণা থেকে বেঁচে থাকো। কেননা তা সবচেয়ে বড় মিথ্যা।’ (সহিহ বুখারি: ৬০৬৪)

আরও পড়ুন: মিথ্যা থেকে বেঁচে থাকার উপায়

অনুমাননির্ভর কোনো কথার ওপর যদি অধিকাংশ মানুষও একমত হয়, তবুও যাচাই করে নিতে হবে সত্যতার ভিত্তি কী, অন্যথায় বিভ্রান্তিতে পড়তে হবে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর যদি আপনি অধিকাংশ লোকের কথামত চলেন, তবে তারা আপনাকে আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত করবে। তারা তো ধারণার অনুসরণ করে; আর তারা শুধু অনুমানভিত্তিক কথা বলে।’ (সূরা আনআম: ১১৬)


বিজ্ঞাপন


দলিল বা সাক্ষ্য-প্রমাণ ছাড়া কোনো বিষয়ে হৈচৈ করা বা আন্দাজে কথা বলা মুসলমানদের জন্যে কোনোভাবেই শোভনীয় নয়। এতে আল্লাহ তাআলার পছন্দের বান্দাটিও হতে পারেন অপদস্থ। সমাজে বিভক্তি তৈরি হতে পারে। তাই প্রিয়নবী (স.)-এর ইরশাদ— ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি বিশ্বাস রাখে, সে যেন ভালো কথা বলে; নচেৎ চুপ থাকে।’ (বুখারি: ৬০১৮)

এছাড়াও যারা নিছক ধারণার উপর ভিত্তি করে নিজেকে পরিচালনা করে তাদের কাছ থেকে কৈফিয়ত নেওয়া হবে বলে সাবধান করা হয়েছে পবিত্র কোরআনে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যে বিষয়ে তোমার কোনো জ্ঞান নেই, সে বিষয়ে অনুমান দ্বারা পরিচালিত হইও না। নিশ্চয় কর্ণ, চক্ষু ও হৃদয়—প্রত্যেকের কাছে কৈফিয়ত তলব করা হবে।’ (সুরা বনি ইসরাইল: ৩৬)

আরও পড়ুন: জাহান্নামের আগুন থেকে পরিবারকে বাঁচাবেন যেভাবে

রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘যারা মৌখিক স্বীকৃতির মাধ্যমে ঈমান এনেছ, অথচ এখনও অন্তঃকরণে ঈমান পৌঁছেনি! তোমরা মুসলিমদের নিন্দা করো না, তাদের ছিদ্রান্বেষণ করো না। কেননা, যে ব্যক্তি অপরের দোষ খোঁজে আল্লাহ তার দোষ অনুসন্ধান করেন। আর আল্লাহ যার দোষ তালাশ করেন, তাকে তার নিজস্ব বাসগৃহেই অপদস্থ করেন’ (আবু দাউদ: ৪৮৮০)

মুমিনদের মূলত মন্দ ধারণা অপছন্দ করা উচিত। ঘৃণার বিষয় হওয়া উচিত। মনে সেরকম কিছুর উদ্রেক হলে দুশ্চিন্তায় পড়ে যাওয়া উচিত। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘সাহাবিরা বলেন, হে আল্লাহর রাসুল, আমাদের মনের মধ্যে এমন কিছু চিন্তার উদ্রেক হয়, যা সূর্য উদিত হওয়ার পরিধির মধ্যকার (মূল্যবান) সব কিছুর বিনিময়েও প্রকাশ করা আমরা সমীচীন মনে করি না। তিনি জিজ্ঞেস করেন, তোমরা কি তা অনুভব করো? তারা বলেন, হ্যাঁ। তিনি বলেন, এটিই ঈমানের সুস্পষ্ট পরিচয়।’ (আদাবুল মুফরাদ: ৩)

মানুষের পক্ষে প্রাথমিক ধারণা থেকে বেঁচে থাকা প্রায় অসম্ভব। কিন্তু ওই ধারণা যদি খারাপ হয়, তাহলে তাকে মন থেকে বের করে দিতে হবে। এ অবস্থায় তিনবার আল্লাহু আকবর বলা সুন্নত। শাহর ইবনে হাওশাব (রহ.) থেকে বর্ণিত, আমি ও আমার মামা আয়েশা (রা.)-এর কাছে উপস্থিত হলাম। মামা বলেন, আমাদের কারো মনের মধ্যে এমন কিছুর উদ্রেক হয়, সে তা ব্যক্ত করলে তার আখেরাত ধ্বংস হয়ে যায় এবং তা প্রকাশ পেলে সেজন্য তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হবে। বর্ণনাকারী বলেন, আয়েশা (রা.) তিনবার ‘আল্লাহু আকবর’ ধ্বনি করার পর বলেন, এ বিষয়ে রাসুলুল্লাহ (স.)-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল। তিনি বলেছেন, ‘তোমাদের কারো অন্তরে তা অনুভব করলে সে তিনবার ‘আল্লাহু আকবর’ বলবে। মুমিন ব্যক্তিই এটা অনুভব করে থাকে।’ (আদাবুল মুফরাদ: ৪)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে অন্যের ব্যাপারে মন্দ ধারণা পোষণ করা থেকে হেফাজত করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর