রোববার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

নামাজের জামাতে পা ছড়িয়ে দাঁড়ানো কি সুন্নত?

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৫ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৪:০২ পিএম

শেয়ার করুন:

নামাজের জামাতে পা ছড়িয়ে দাঁড়ানো কি সুন্নত?

নির্ভরযোগ্য মত অনুযায়ী, নামাজের জামাতে একে-অপরের পায়ে পা লাগিয়ে দাঁড়ানো অপ্রয়োজনীয় কাজ। বরং এতে সুন্নতের লঙ্ঘন হয়। হাদিসে কাতারের মাঝখানে ফাঁকা বন্ধ করতে ও কাতার সোজা করতে কাঁধে কাঁধ মেলাতে বলা হয়েছে, দুই কাতারের মধ্যে অস্বাভাবিক দূরত্ব না রাখতে বলা হয়েছে। পা ছড়িয়ে দাঁড়ানোর নির্দেশ হাদিসে নেই।

ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুল (স.) বলেছেন- أَقِيْمُوا الصُّفُوْفَ وَ حَاذُوْا بَيْنَ الْمَنَاكِبِ وَ سُدُّوْا الْخَلَلَ وَ لِيْنُوْا بِأَيْدِيْ اِخْوَانِكُمْ وَ لَاتَذَرُوْا فُرُجَاتٍ لِلشّيْطَانِ وَ مَنْ وَصَلَ صَفّا وَصَلَهُ اللهُ وَ مَنْ قَطَعَ صَفّا قَطَعَهُ اللهُ ‘তোমরা কাতার সোজা করো। কাঁধসমূহকে বরাবর রাখ। ফাঁকা জায়গা পূর্ণ কর। তোমাদের ভাইদের হাতে তোমরা নরম হয়ে যাও এবং শয়তানের জন্য ফাঁকা জায়গা ছেড়ে দিয়ো না। যে কাতার মিলিয়ে দেয় আল্লাহ তাআলাও তাকে মিলিয়ে দেন। যে কাতার বিচ্ছিন্ন করে আল্লাহ তাআলা তাকে বিচ্ছিন্ন করে দেন।’ (আবু দাউদ: ৬৬৬)


বিজ্ঞাপন


আয়েশা (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন-  مَنْ سَدّ فُرْجَةً فِى صَفٍّ رَفَعَهُ اللهُ بِهَا دَرَجَةً وَ بَنٰى لَهُ بَيْتًا فِي الْجَنّةِ ‘যে ব্যক্তি কাতারের মধ্যকার ফাঁক বন্ধ করবে, এর বিনিময়ে আল্লাহ তার একটি মর্যাদা বৃদ্ধি করে দেবেন এবং জান্নাতে তার জন্য একটি ঘর নির্মাণ করে দিবেন।’ (আলমুজামুল আওসাত, তবারানি: ৫৭৯৫; মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা: ৩৮২৪)

আরও পড়ুন: স্বামী কি মৃত স্ত্রীর গোসল দিতে পারবে?

বারা ইবনে আজেব (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন- كَانَ رَسُوْلُ اللهِ صَلّى الله عَلَيْهِ وَ سَلّمَ يَتَخَلّلُ الصّفّ مِنْ نَاحِيَةٍ إِلٰى نَاحِيَةٍ يَمْسَحُ صُدُوْرَنَا وَ مَنَاكِبَنَا وَ يَقُوْلُ لَاتَخْتَلِفُوْا فَتَخْتَلِفَ قُلُوْبُكُمْ وَ كَانَ يَقُوْلُ إِنّ اللهَ وَ مَلٰئِكَتَهُ يُصَلُّوْنَ عَلَى الصُّفُوْفِ الْاُوَلِ ‘রাসুলুল্লাহ (স.) এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত পর্যন্ত কাতারে প্রবেশ করে আমাদের বুক এবং কাঁধ স্পর্শ করতেন এবং বলতেন ভিন্ন ভিন্ন হয়ো না। নতুবা তোমাদের অন্তরসমূহ ভিন্ন ভিন্ন হয়ে যাবে। তিনি আরও বলতেন, আল্লাহ তাআলা এবং ফেরেশতাগণ প্রথম দিকের কাতারসমূহের উপর রহমত নাজিল করেন।’ (সুনানে আবু দাউদ: ৬৬২)

হাদিসে কোথাও পা ছড়িয়ে দাঁড়ানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। তবে কাতার সোজা আছে কি না পরখ করার জন্য পায়ের সঙ্গে পা মিলিয়ে যাচাই করা যাবে। সাহাবিরা তা করতেন। যেমনটি আনাস (রা.) বলেছেন, রাসুলুল্লাহ (স.) বলতেন اَقِيْمُوْا صُفُوْفَكُمْ فَاِنِّىْ اَرَاكُمْ مِنْ وَرَاءِ ظَهْرِىْ وَ كَانَ اَحَدُنَا يُلْزِقُ مَنْكِبَهُ بِمَنْكِبِ صَاحِبِهِ وَ قَدَمَهُ بِقَدَمِهِ ‘তোমরা তোমাদের কাতারসমূহকে সোজা কর। কারণ, আমি তোমাদেরকে আমার পেছন দিক থেকে দেখতে পাই। তো আমাদের একজন তার কাঁধ অপরজনের কাঁধের সাথে এবং তার পা অপরজনের পায়ের সাথে মিলিয়ে দিত।’ (সহিহ বুখারি: ৭২৫) 


বিজ্ঞাপন


আরও পড়ুন: সেজদা থেকে হাতে ভর দিয়ে ওঠাই কি সঠিক পদ্ধতি?

এই হাদিসে দেখা যাচ্ছে, সাহাবিরা কাঁধের সাথে কাঁধ, টাখনুর সাথে টাখনু, হাঁটুর সাথে হাঁটু এবং পায়ের সাথে পা মিলিয়ে দিতেন কাতার সোজা ও ফাঁকাবন্ধ করার জন্য। কিন্তু এটি পায়ের সঙ্গে পা লাগিয়ে পুরো নামাজ শেষ করতে হবে মর্মে- নবীজির নির্দেশনা নয়। 

বরং পা ছড়িয়ে দিয়ে নামাজ পড়লে কাতার ফাঁকাবন্ধ করার সুন্নতটাই লঙ্ঘন হয়। কারণ, পা ছড়িয়ে দাঁড়ানোর ফলে দুরত্ব ও ফাঁক সৃষ্টি হয়। যা সেজদার সময় লক্ষ্য করা যায়। পা ছড়ানোর পরিবর্তে হাদিসের নির্দেশ মেনে কাঁধে কাঁধ মিলানো হলে এমনটা হয় না।

আর কাতার সোজা রাখার জন্যও পায়ের সঙ্গে পা লাগানো নয়, বরং গোড়ালির সঙ্গে গোড়ালি মিলিয়ে দেখা সঠিক পদ্ধতি। কারণ পা একেকজনের একেকরকম হতে পারে, তাই গোড়ালি মিলিয়ে দেখাই উত্তম। কিন্তু তাও বর্তমানে জরুরি নয়। কারণ বর্তমানে বিশ্বের প্রায় সব মসজিদেই লম্বা ও সোজা রেখা অঙ্কন করা থাকে। অথবা গালিচা, মাদুর ইত্যদি বিছানো থাকে। ফলে রেখার উপর কিংবা গালিচা, মাদুর ইত্যাদির পিছন দিকের শেষ প্রান্তে প্রত্যেকেই যদি গোড়ালী রাখে, কাতার সোজা হয়ে যায়। কিন্তু সাহাবায়ে কেরামের যুগে এরূপ কিছু ছিল না। ফলে তাঁরা প্রত্যেকেই উভয় পার্শ্বের মুসল্লীর টাখনুর সঙ্গে টাখনু মিলিয়ে নিশ্চিত হতেন যে, কাতার সোজা হল কি না। 

আরও পড়ুন: নামাজের প্রথম বৈঠকে ভুলে দরুদ পড়লে করণীয়

সাহাবিরা কখনও পা ছড়িয়ে নামাজ পড়তেন না। ইবনে আবি শাইবা বলেন, আমাদের নিকট হাদিস বর্ণনা করেছেন ওয়াকী, উয়াইনাহ ইবনে আবদুর রহমান হতে, তিনি বলেন, আমি আমার পিতার সঙ্গে মসজিদে ছিলাম। আমার পিতা এক ব্যক্তিকে দেখলেন, দুই পা ছড়িয়ে দিয়ে দাঁড়াতে। তিনি বললেন, পা দুটোর একটিকে অপরটির সাথে মিলিয়ে দাও। আমি এই মসজিদে ১৮ জন সাহাবিকে দেখেছি। তাঁদের কাউকেই আমি এরকম করতে দেখিনি। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা: ৭১৩৬)

হাদিসটির রাবি ওয়াকী হাদিসের প্রসিদ্ধ ইমাম। আর তাঁর উস্তাদ উয়াইনাহ ছিকাহ রাবি। আর তাঁর পিতা আবদুর রহমান হচ্ছেন আবদুর রহমান ইবনে জাওশান। তিনিও ছিকাহ রাবি। হাদিসটি সহিহ হওয়ার ব্যাপারে কেউ সন্দেহ পোষণ করেননি। 

অতএব, নামাজে পা ছড়িয়ে দিয়ে পায়ের সঙ্গে পা লাগিয়ে নামাজ পড়ার অভ্যাস কারো থাকলে তা বন্ধ করা উচিত হবে। বরং কাতারে ফাঁকা না রাখা, কাতার সোজা রাখা এবং দুই কাতারের মধ্যে অস্বাভাবিক দুরত্ব বন্ধ করার জন্য হাদিসের নির্দেশনা মেনে চলাই হবে নবীজির নির্দেশনার অনুসরণ। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে প্রত্যেক বিষয়ে সুন্নত মেনে চলার তাওফিক দান করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর